চা বিক্রেতার জিপিএ ৫ অর্জন

চা বিক্রেতার জিপিএ ৫ অর্জন

  • লিডারশিপ ডেস্ক 

সংসারে অভাব অনটনের কারণে বাবার সঙ্গে ছোট একটি চায়ের দোকানে কাজ করে সোহেল রানা। চায়ের দোকানে বিকিকিনি কম হলে মাঝেমধ্যে একাই কলেজের সামনে ভ্রাম্যমাণ চৌকি বসিয়ে জিলাপি, ছোলা ও পিঁয়াজু বিক্রি করে সংসারের এবং নিজের লেখা পড়ার খরচ জোগিয়েছে সে।

বস্তিতে বাস করেও লেখাপড়া করে উচ্চ মাধ্যমিক সার্টিফিকেট (এইচএসসি) পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পেয়েছে ঝালকাঠির নলছিটির সোহেল রানা। নলছিটি ডিগ্রি কলেজ থেকে এ বছর এইচএসসি পরীক্ষায় অংশ নিয়ে সে জিপিএ ৫ পেয়েছে। লেখাপড়ার প্রতি তার প্রবল আগ্রহ। হার না মানা পরিশ্রম ও প্রচণ্ড ইচ্ছেশক্তিই তাকে সফলতা এনে দেয়।

সোহেল রানা জানায়, নলছিটি শহরের খাসমহল বস্তিতে ছোট একটি খুপড়ি ঘরে বাসবাস করে তারা। বাবা মা ও চার ভাইবোনের মধ্যে সে ছিল সবার বড়। তাই দায়িত্বটাও বেশি। বস্তিতে বসবাস করেও উচ্চশিক্ষা গ্রহণে তার প্রচণ্ড আগ্রহ। সংসারের খরচ জোগানোর দায়টা বাবা তোফাজ্জেল হোসেনের একার ওপরই। বাবার কষ্টের কথা বিবেচনা করে ছোট থেকেই লঞ্চঘাটে ছোট একটি চায়ের দোকানে বাবার সঙ্গে কাজ করে সে। যাতে বাবার কষ্ট না হয়, সেদিকে লক্ষ রেখে বেশির ভাগ সময়ই দোকানে কাজ করে সোহেল রানা। রাতে বাবাকে বিশ্রামের জন্য বাসায় পাঠিয়ে নিজেই সকালের পরাটা বানানোর খামি তৈরি করে রাখে। দোকানের কাজ সেরে বাসায় ফিরে লেখাপড়া করতে করতে সকাল হয়ে যায়। আবার সকালে ঢাকার লঞ্চের যাত্রীদের কাছে চা ও পরাটা বিক্রি করার জন্য ছুটে আসতে হয় দোকানে। সারা রাত ঘুমায়নি, এমন সময়ও পার করেছে সোহেল রানা। পরীক্ষার আগেও ক্লাস শেষ করে অনেক সময় কলেজের সামনেই চৌকি বসিয়ে জিলাপি, ছোলা ও পিঁয়াজু ভেজে তা বিক্রি করত সে।

তবুও থেমে যায়নি সোহেল রানা। দরিদ্রতা দমিয়ে রাখতে পারেনি তাকে। কষ্টের সঙ্গে প্রতিনিয়ত সংগ্রাম করে এসএসসিতেও জিপিএ ৫ পায় সে। এবার এইচএসসি পরীক্ষায় জিপিএ ৫ পাওয়ায় তাকে নলছিটির উজ্জ্বল নক্ষত্র হিসেবে আখ্যায়িত করেছেন কলেজের শিক্ষকরা। মা-বাবার পরিশ্রম, শিক্ষকদের পরামর্শ এবং সহপাঠীদের  সহযোগিতা তাকে সফলতা এনে দিয়েছে।

সোহেল রানা বলে, ‘আমি সময় পেলেই বই নিয়ে বসে যেতাম। সারাক্ষণ দোকানে কাজ করার ফাঁকে ফাঁকেও বই খুলে পড়েছি। আমার সবকিছুই ছিল লেখাপড়াকে ঘিরে। বাবা অনেক কষ্ট করে। আমি তার কাজে সাহায্য করি। বাবাকে বিশ্রামে পাঠিয়ে নিজেই বেশির ভাগ সময় দোকানদারি করি। এতে আমার লজ্জা হয় না, বরং আমি গর্ববোধ করি। জিপিএ ৫ পাওয়ায় আমার চেয়েও আমার মা-বাবার আনন্দ দেখে আমি শান্তি পাচ্ছি। আমি ভবিষ্যতে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ালেখা করে একজন সরকারি কর্মকর্তা হতে চাই।’

বাবা তোফাজ্জেল হোসেন বলেন, ‘আমার ছেলে অনেক পরিশ্রমী। তার মধ্যে কখনো কাজের প্রতি লজ্জা ছিল না। আমার সঙ্গে শহরের বিভিন্ন স্থানে ভ্রাম্যমাণ দোকানে বসে বেচাকেনা করেছে। এখনো আমার লঞ্চঘাটের চায়ের দোকানে বেশি সময় দেয় সে। কাজের বাইরে যতটুকু সময় পায়, তখনই বই পড়ে। এখন শুধু দুশ্চিন্তা একটাই, আমার ছেলে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে চায়। তার লেখাপড়ার খরচ বহনের সামর্থ্য আমাদের নেই। বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়াশোনা করার জন্য আমি দেশের বিত্তবানদের সহযোগিতা কামনা করছি।’

নলছিটি ডিগ্রি কলেজের অধ্যক্ষ এ কে এম নূরুল ইসলাম খান বলেন, ‘সোহেল রানা মেধাবী শিক্ষার্থী বিধায় সব সময় তার প্রতি শিক্ষকদের আলাদা নজর ছিল। দরিদ্র পরিবারের সন্তান হয়েও লেখাপড়া বন্ধ হয়নি তার। ভালো ফলাফল করায় তাকে নিয়ে আমরা গর্বিত। সে নলছিটির উজ্জ্বল নক্ষত্র।’

সূত্র: এনটিভিবিডি favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment