বিল গেটস এর সফলতার গল্প

বিল গেটস এর সফলতার গল্প

  • লিডারশিপ ডেস্ক

সাফল্য যাকে আষ্টেপৃষ্ঠে আবদ্ধ করে রাখে তেমনি একটি নাম বিল গেটস। অধ্যাবসায় এবং তপস্যা মানুষকে কি এনে দিতে পারে তা বিল গেটস শিখিয়েছেন আজকের তরুন প্রজন্মকে। যার দরুন আজকের শ্রেষ্ঠ ধনীর তকমাটা নিজের নামের সাথে মোটামুটি পাকাপোক্তভাবেই লাগিয়ে নিয়েছেন তিনি। 


বিল গেটসের জন্ম

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ওয়াশিংটন শহরের সিয়াটল এলাকায় ১৯৫৫ সালের ২৮ অক্টোবর পিতা উইলিয়াম হেনরি গেটস সিনিয়র ও মাতা মেরী ম্যাক্সওয়েল গেটস এর কোলে জন্ম নিয়েছিলেন বিল গেটস। পিতা তাদের বংশানুক্রম অনুসারে ছেলের নামও রাখলেন উইলিয়াম হেনরি গেটস। তার পিতা মাতা ছিলেন ইংরেজ, জার্মান ও স্কটআইরিশ মিশ্র রক্তের মানুষ। বিল গেটস এর বাবা ছিলেন সেই সময়কার প্রখ্যাত লইয়ার, আর মা চাকরি করতেন United Way নামের একটি কোম্পানির First Interstate BancSystem এর Board of director হিসেবে। বিল গেটস এর নানা ছিলেন তৎকালীন ন্যাশনাল ব্যাংকের প্রেসিডেন্ট। বাবা মায়ের তিন সন্তানের মধ্যে গেটস হলেন একমাত্র ছেলে। তার বড় বোনের নাম Kristianne এবং ছোট বোনের নাম Libby.

শৈশবেই প্রোগ্রামার

ছোটবেলা থেকেই বিল গেটস এর বাবা মায়ের ইচ্ছা ছিল বাবার মত ছেলেও বড় হয়ে লইয়ার হবে। অনেক নাম কামাবে। ১৩ বছর বয়েসে বিল গেটস কে ভর্তি করে দেয়া হয় বাড়ির কাছের লেকসাইড স্কুলে। যখন গেটস স্কুলে Eighth Grade এ উন্নীত হন তখন স্কুলের বিভিন্ন বাতিল মালপত্র বিক্রয় করে কম্পিউটার সেকশনের ছাত্রদের জন্য কয়েকটি Teletype Model 33 Computer কেনার সিদ্ধান্ত গ্রহণ করে স্কুলটির Mothers Club। এর ফলে গেটস তার কম্পিউটার প্রোগ্রামিং এর উপর পারদর্শিতা দেখানোর একটি সুযোগ পান।

প্রোগ্রামার বিল গেটস : বিল গেটসের প্রোগ্রামিং এর প্রতি আগ্রহ দেখে স্কুল তাকে তার বিরক্তিকর গণিত ক্লাস থেকে অব্যাহতি দেয় এবং প্রোগ্রামিং অনুশীলনের ব্যবস্থা করে দেয়। সেই কম্পিউটার সেকশনে বসেই গেটস তার প্রথম প্রোগ্রাম তৈরী করেন যার নাম রাখেন “Tic-Tac-Toe”। যে প্রোগ্রামটি কম্পিউটারের সাথে গেম খেলার জন্য ব্যবহার করে গেটস সবাইকে চমকে দেন।

কৌতুহল থেকেই অপারেটিং সিস্টেম

PDP-10 ডিমো অপারেটিং সিস্টেম : কম্পিউটার নিয়ে কাজ করার সময় বিল গেটস এর একটি জিনিস কখনোই মাথায় ঢুকতো না যে কম্পিউটারে কিভাবে সফটওয়্যার গুলো এত সহজে ইন্সটল হয়ে যায় বা কম্পিউটার সফটওয়্যারগুলোর প্রোগ্রামিং কোড কিভাবে এত সহজে পড়তে পারে। তার কাছে মনে হতে থাকে এই কম্পিউটারে নিশ্চয়ই এমন কিছু আছে যেটা তিনি ধরতে পারছেন না। কিছুদিন পর তাদের Mothers Club থেকে স্কুলের জন্য ডোনেশন বাড়ানোর ফলে স্কুলে আরো কিছু নতুন কম্পিউটার আসে। গেটস তখন কম্পিউটার সেকশনের অন্য ছাত্রদের নিয়ে Computer Center Corporation (CCC) এর নীতিবিরুদ্ধ PDP-10  নামে একটি Demo Operating System আবিষ্কার করে বসেন।

স্কুল থেকে বহিষ্কার !

বিল গেটসের ডেমো অপারেটিং সিস্টেম নীতিবিরুদ্ধ হওয়ায় স্কুল থেকে সাময়ীক বহিষ্কার : বিল গেটসের আবিষ্কৃত ডেমো অপারেটিং সিস্টেম নীতিবিরুদ্ধ হওয়ায় এবং কাউকে কিছু না জানিয়ে এটিকে কম্পিউটারে ব্যবহার করায় গেটস ও তার তিন বন্ধু পল অ্যালেন, রিক ওয়েইল্যান্ড এবং কেন্ট ইভানস কে স্কুল থেকে সাময়ীক বহিষ্কার করা হয়। পরবর্তীতে তারা আবিষ্কারের নেশায় তাদের গবেষণা চালিয়ে যান। এর ফলে আবিষ্কার করেন যে তাদের তৈরী অপারেটিং সিস্টেম কম্পিউটারের সুরক্ষা করতে সক্ষম এবং কোন সফটওয়্যার এ ট্রোজান থাকলে সেটাও নির্মূল করতে সক্ষম।

আবার সেই স্কুলের কম্পিউটার সেকশনে আমন্ত্রণ!

স্কুলের কম্পিউটার সেকশনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের আমন্ত্রণের পর আবার স্কুলে বিল গেটস : ট্রোজান থেকে কম্পিউটার সুরক্ষিত রাখার পদ্ধতি আবিষ্কারের পর গেটস তার গবেষণার ফলাফল স্কুলে দেখান। এরপর তার এই রিপোর্ট Computer Center Corporation (CCC) এ পাঠানো হলে তারা সন্তুষ্ট হয়। এর ফলে স্কুল কতৃপক্ষ তাদের সাময়ীক বহিষ্কার আদেশ তুলে নেয় এবং আবার স্কুলে আসার আমন্ত্রণ জানায়। কম্পিউটার সেন্টার কর্পোরেশন গেটসের কাজে সন্তুষ্ট হয়ে তাদের কম্পিউটার সেকশনের কম্পিউটারগুলোতে ইন্সটল করা সফটওয়্যার এ ট্রোজান আছে কিনা পরীক্ষা করে দেখতে বলেন। এরপর থেকে বিল গেটসের কম্পিউটার সেন্টার কর্পোরেশন অফিসে আসা যাওয়া শুরু হয় এবং তাদের উন্নত কম্পিউটার গুলোতে সোর্স কোড এর বিভিন্ন প্রোগ্রাম নিয়ে পড়াশুনা করতে থাকেন।

পরবর্তী বছর এক বিজ্ঞান ভিত্তিক সেমিনারে CCC গেটস ও তার চার বন্ধুকে তাদের আবিষ্কার পেশ করার জন্য আমন্ত্রণ জানায়। এরই মাঝে বিল গেটস এর স্কুলের কর্তৃপক্ষ তার প্রোগ্রামিং দক্ষতাকে কাজে লাগানোর জন্য স্কুলের কম্পিউটার সেকশনের পরিবর্তন ও পরিবর্ধনের আমন্ত্রণ জানান। আরেকটা মজার ব্যাপার হচ্ছে গেটস এর এই মেধা ও বুদ্ধিতে মুগ্ধ হয়ে  ক্লাসের বেশির ভাগ মেয়েই তার সাথে সময় কাটাতে চাইতেন।

নতুন প্রোটোটাইপ তৈরি

বিল গেটস ও তার বন্ধু অ্যালেনের তৈরি ইন্টেল ৮০০৮ প্রসেসরের প্রোটোটাইপ ট্রাফিক কাউন্টার : অপারেটিং সিস্টেম এবং ট্রোজান নিয়ে কাজ করার পরপরই মাত্র ১৭ বছর বয়সেই বিল গেটস তার বন্ধু অ্যালেনের সাথে বর্তমান একটি Intel 8008 প্রসেসরের প্রোটোটাইপ Traffic counters তৈরী করেন। ধীরে ধীরে গেটস এর পরিচিতি বাড়তে থাকে। এর ধারাবাহিকতায় ১৯৭৩ সালে তাকে মার্কিন রিপ্রেজেন্টিটিভ হাউজে একজন কংগ্রেস ম্যান হিসেবে সম্মানজনক পদ দেয়া হয়। একজন মানুষ কম সময়ে কতটুকু সুনাম কামাতে পারে, তারই এক জ্বলন্ত দৃষ্টান্ত হলেন বিল গেটস।

স্যাট পরীক্ষায় অবিশ্বাস সফল্য

বিল গেটস তার লেকসাইড স্কুল থেকে গ্রাজুয়েশন সম্পন্ন করেন ১৯৭৩ সালে। সেইবার তিনি SAT পরীক্ষায় ১৬০০ নম্বরের পরীক্ষায় ১৫৯০ পেয়েছিলেন!তারপর ১৯৭৩ সালেই তিনি শরৎ সীজনে হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি হন। যদিও বাবা মা চেয়েছিলেন ছেলে বড় হয়ে লইয়ার হউক কিন্তু গেটস এর বিশ্ববিদ্যালয়ে ওঠার পরেও কোন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা ছিল না যে তিনি কিভাবে নিজেকে প্রতিষ্ঠা করবেন। তবে তার মন ওই কম্পিউটারেই পড়ে থাকতো। শেষে একদিন গেটস তার বন্ধু পল অ্যালেন এর সাথে যোগাযোগ করেন এবং বন্ধুর আমন্ত্রণেই সাড়া দিয়ে অ্যালেন ১৯৭৪ সালের গ্রীষ্ম সীজনে এসে ভর্তি হলেন হাভার্ডে। আর এই বিশ্ববিদ্যালয়েই তার সাথে পরিচয় হয় বর্তমান মাইক্রোসফট এর সহকারী পরিচালক স্টিভ বালমার এর সাথে।

হাভার্ডের ত্রিশ বছরের রেকর্ড ভাঙ্গল গেটস!ৎ

প্রোগ্রামিং সমস্যার সমাধান করে হাভার্ডে বিল গেটস রেকর্ড : হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালের দ্বিতীয় বছরে বিল গেটস কিছু অসংজ্ঞায়িত প্রোগ্রামিং সমস্যার “Pancake sorting” নামে একটি সিরিজ সমাধান তৈরী করেন, যেটি উপস্থাপন করেন তারই প্রফেসর Harry Lewis. ৩০ বছরের মধ্যে বিল গেটস এর সমাধানটিকেই সবচাইতে দ্রুততম সিরিজ সমাধান বলে অ্যাখ্যায়িত করা হয়। পরবর্তীতে তার এই সমাধান নিয়েই হাভার্ড বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞানী Christos Papadimitriou তার গবেষণা চালান এবং তা পেপারব্যাক হিসেবে প্রকাশ করেন। favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment