‘এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা থাকা চাই’

‘এগিয়ে যাওয়ার মানসিকতা থাকা চাই’

  • লিডারশিপ ডেস্ক

এখন থেকে প্রায় তিন দশক আগের কথা। সবে উচ্চ মাধ্যমিক পাস করা এক তরুণী বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির জন্য চূড়ান্ত নির্বাচনের পর মৌখিক পরীক্ষায় অংশ নেয়। পরীক্ষার বোর্ডে উপস্থিত শিক্ষকদের মধ্য থেকে একজন বলে বসলেন, তোমার স্কোর তো বেশ ভালো, কী নিয়ে পড়তে চাও। তরুণীর ঝটপট উত্তর, অর্থনীতি। তখন যদিও কোনো কিছু না ভেবেই বলা। কিন্তু শেষমেশ অর্থনীতি নিয়ে পড়াশোনায় থিতু হতে হয়েছে তাকে। কাকলী জাহান আহেমদ, বর্তমানে কাজ করছেন বাংলাদেশ ব্যাংকের ডেপুটি ম্যানেজিং ডিরেক্টর হিসেবে।

মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিকের গণ্ডি পার হয়েছেন বিজ্ঞান বিভাগ থেকে। কিন্তু বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তির সময় অনেকটা স্বপ্নপূরণই করতেই অর্থনীতিতে ভর্তি হয়ে যান তিনি। তবে এমনটা ভাবার কারণ নেই ফলাফল ভালো হয়নি বলে বিজ্ঞান বিভাগে আর পড়াশোনা হয়নি। বেশ ভালো নম্বর পেয়ে ভর্তি পরীক্ষায় উত্তীর্ণ হয়েছিলেন। যার ফলে যেকোনো বিষয়ই স্নাতকের বিবেচ্য বলে বেছে নিতে পারতেন। কিন্তু কাকলী জাহানের ভাষ্যমতে, ‘মাকে দেখেছি শিল্প ব্যাংকে কাজ করতে। তিনি অর্থনীতি নিয়েই পড়েছেন। এজন্যই হয়তো মনের অজান্তে সেটা অনুপ্রেরণা হয়ে ধরা দিয়েছে আমার কাছে। যার ফলে বিষয় নির্বাচনের সময় হঠাত্ অর্থনীতির কথাই মনে হয়েছে।’

তিন বোনের মধ্যে মেজ কাকলী। মা বেশ প্রগতিশীল ছিলেন। সবকিছুতেই উত্সাহ দিতেন। কখনো কোনো কাজে না শুনতে হয়নি তাকে। এমনকি কোনো কিছু চাপিয়ে দেয়ার প্রবণতাও ছিল না পরিবারের কারোর মধ্যেই। সে সময় ছেলেরা যেভাবে বড় হয়েছে, ঠিক সেভাবেই বড় হয়েছেন তারাও। কখনো শুনতে হয়নি তাকে তুমি মেয়ে, তাই তোমাকে এমন হলে চলবে না। বরং শুনেছেন উল্টোটাই, যা ভালো লাগে, তাই করো। পরিবারের এমন মানসিক সহযোগিতা যে কাউকে অনেক দূর এগিয়ে নিয়ে যেতে পারে বলে মনে করেন কাকলী। কথা প্রসঙ্গেই উঠে আসে তার ছোটবেলার কথা।

এখন আর তখনের সময়ের ফারাক তুলে ধরেই তিনি বলেন, আমাদের ছোটবেলা এমন ছিল না। তখন আমরা ঘুরে বেড়াতাম, বই পড়তাম, খেলতাম। মনে আছে, আমরা তিন বোন প্রতিদিন বিকালে রমনা পার্কে ঘুরতে বের হতাম। সিনেমা হলে সিনেমা দেখতাম প্রায়ই। আর সপ্তাহে দুদিন অন্তত বই কিনতে বের হতাম। সে সময় স্টেডিয়াম ছিল বইপাড়া এখন যেমন নীলক্ষেত। বেশ ভালো শৈশব, ভালো ভবিষ্যতের নির্দেশনা দেয়।

খুব ছোট থেকেই গণিতের প্রতি ভালো লাগা কাজ করত কাকলীর। অন্যদিকে পদার্থবিজ্ঞানের খুঁটিনাটি জানার ব্যাপারেও প্রবল আগ্রহ ছিল। তবে কটমটে গণিত কিংবা পদার্থের মতো বিষয়ও যেমন ভালো লাগত পড়তে কিংবা জানতে, তেমনি ভালো লাগত মনের মতো গল্প, কবিতা লিখতে। ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার সময়ই যুক্ত হয়েছিলেন স্বরিত আবৃত্তি চক্রের সঙ্গে। সেই থেকে এখন অব্দি সেখানের সক্রিয় সদস্য তিনি। সময়-সুযোগ মিলিয়ে গলা ঝালাই করে নিতে ভোলেন না।

অন্যদিকে নিজের কর্মক্ষেত্র বাংলাদেশ ব্যাংকেও যথেষ্ট সপ্রতিভ এ নারী। তার মুখ থেকেই শোনা, কয়েক বছর আগ পর্যন্তও সেখানের কোনো অনুষ্ঠানে উপস্থাপনার কাজটি করতে হতো তাকেই। তবে এখন চান নতুনরা এগিয়ে আসুক। বলে রাখি কাকলী এর আগেও কাজ করেছেন একটি বেসরকারি ব্যাংকে। সেখানে মাস তিনেক কাজের পরই অ্যাসিস্ট্যান্ট ম্যানেজার হিসেবে কাজের সুযোগ হয় বাংলাদেশ ব্যাংকে।

কাকলী জাহান ব্যক্তিগত জীবনে খুব গোছানো। প্রতিদিন একটা রুটিন মেনে চলার পক্ষপাতী তিনি। পরের দিন কোন পোশাক পরবেন, সেটিও আগের দিন ঠিক করে রাখেন। খুব সকালে ঘুম থেকে ওঠেন। আর রাতে ঘুমাতে যাওয়ার আগে কম হলেও ২-১ ঘণ্টা বই পড়েন, লেখালেখি করেন। অন্যদিকে ছুটির দিনগুলোয় বন্ধু, আত্মীয়-পরিজনদের সঙ্গে কাটাতেই ভালোবাসেন।

নারীদের বাইরে কাজ করার মানসিকতা এখনো সেভাবে তৈরি হয়নি বলে মনে করেন কাকলী। এগিয়ে যেতে হলে নারীকে অবশ্যই সুদূরপ্রসারী চিন্তাভাবনার অধিকারী হতে হবে। নারী এগিয়ে যাবে, তবে তার ভেতর এগিয়ে যাওয়ার জোড়লো মানসিকতা থাকতে হবে বলে মনে করেন কাকলী জাহান আহেমদ। favicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment