বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর অনন্য সফলতা

বাংলাদেশি বিজ্ঞানীর অনন্য সফলতা

  • লিডারশিপ ডেস্ক

এবার লবণসহিষুষ্ণ গমের জাত উদ্ভাবন করলেন দেশের কৃষি গবেষকরা। বাংলাদেশ পরমাণু কৃষি গবেষণা ইনস্টিটিউটের (বিনা) গবেষকরা উন্নতমানের এ গমের জাত উদ্ভাবন করেছেন। এর নাম দেওয়া হয়েছে ‘বিনা গম-১’।

দেশের উপকূলীয় এলাকায় এ গম টিকে থাকবে মাটির অতিরিক্ত লবণাক্ততায়। দক্ষিণাঞ্চলের লবণ পানিতে আক্রান্ত জমিতে এ জাতটি ভালো ফলন দেবে বলে আশা করছেন কৃষি বিজ্ঞানী ও গবেষকরা। এমন একটি গমের জাতের স্বপ্ন ছিল উপকূলের লাখ লাখ কৃষকের। যে জাতের গম চাষে মাটির অতিরিক্ত লবণাক্ততা গম উৎপাদনে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারবে না। নতুন জাতের গম ১০ ডেসি সিমেন (ডিসি) মাত্রার লবণসহিষুষ্ণ হবে। এর আগে বিনার গবেষকরা লবণসহিষুষ্ণ দুটি ধানের জাতও আবিষ্কার করেন।

মাটিতে দিন দিন লবণাক্ততা বেড়েই চলেছে। এর বেশি শিকার উপকূলীয় অঞ্চল। ধীরে ধীরে লবণাক্ত হয়ে যাচ্ছে দেশের পশ্চিম ও দক্ষিণাঞ্চলের পানি এবং মাটি। গত এক দশকে এসব অঞ্চলের এক-তৃতীয়াংশ এলাকা নতুন করে লবণাক্ত হয়ে পড়ে। তা ছড়িয়ে পড়েছে পশ্চিমাঞ্চলের এলাকাগুলোতেও। কৃষি ব্যবস্থাপনা ও শস্য বিন্যাসে পড়ছে লবণের বিরূপ প্রভাব।

কৃষি সম্প্রসারণ অধিদপ্তরের তথ্য মতে, বছরে ৬৫ হাজার হেক্টর করে কৃষি জমি অনাবাদি হয়ে পড়ছে। এর মধ্যে দক্ষিণাঞ্চলে প্রতিদিন প্রায় ২০ শতাংশ করে কৃষি জমি নষ্ট হচ্ছে। বর্তমানে অতি মাত্রার লবণাক্ত জমির পরিমাণ প্রায় ১০ লাখ হেক্টর। এ ছাড়াও আরও ১৫ লাখ হেক্টর জমি সীমিত মাত্রার লবণাক্ত। লবণসহিষুষ্ণ ধানের নতুন জাত উদ্ভাবন এর ক্ষতি পুষিয়ে নিতে সাহায্য করবে।

বিনা গম-১-এর উদ্ভাবক বিনার উদ্ভিদ প্রজনন বিভাগের মুখ্য বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ড. আবুল কালাম আজাদ বলেন, দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের লবণাক্ত জমিকে চাষের আত্ততায় আনবে এই জাতের গম। এই জাতটি যেহেতু চাষে অল্প দিন লাগে, তাই গম চাষ করেও অন্য ফসল চাষ করা সম্ভব হবে। তিনি বলেন, অঙ্কুরোদ্গম পর্যায় থেকে গাছ পরিপকস্ফ হওয়া পর্যন্ত ১২ ডিএসসি/মি লবণাক্ততায়ও চেক জাত ‘বারি গম ২৫’ অপেক্ষা ১০ থেকে ১৫ শতাংশ বেশি ফলন দিতে সক্ষম। লবণাক্ত জমিতে বয়স্ক গাছের উচ্চতা ৬৭ থেকে ৯০ সেন্টিমিটার এবং গাছ হেলে পড়বে না। গমের জীবনকাল হবে ১০৫ থেকে সর্বোচ্চ ১১০ দিন। এই পরমাণু কৃষিবিজ্ঞানী আরও বলেন, গমের দানা মাঝারি সাইজের এবং বাদামি রঙের। বিনা গম-১ জাতটি একই সঙ্গে পাকে। লবণাক্ত জমিতে হেক্টরে ২ দশমিক ২৩ থেকে ৩ দশমিক ৫ টন গম উৎপাদন হবে। এক হাজার দানার ওজন হবে ৩৬ দশমিক ৬ গ্রাম।

বিনা গম-১-এর চাষাবাদ প্রদ্ধতি অন্য গম জাতের মতোই। নভেম্বরের ১৫ থেকে ডিসেম্বরের প্রথম সপ্তাহ পর্যন্ত বীজ বপন করা যাবে। তবে এ সময় জমির লবণাক্ততা ৫ ডিএসসি/মি অধিক না হওয়াই ভালো। প্রতি হেক্টর লবণাক্ত জমিতে ২২০-২৬০ কেজি ইউরিয়া, ১২৫-১৫০ কেজি টিএসপি, ১২০-১৪০ কেজি এমওপি, ৬৫-৮৫ কেজি জিপসাম, ৬ কেজি করে জিঙ্ক সালফেট ও বোরিক এসিড এবং অলবণাক্ত জমিতে ৪০ কেজি ইউরিয়া, ২০ কেজি এমওপি বেশি দিতে হবে। ইউরিয়া সারের অর্ধেকসহ বাকি রাসায়নিক সার জমি প্রস্তুতকালে শেষ চাষের সময় এবং বাকি ইউরিয়া বীজ বপনের ২০-২৫ দিন পর ছিটিয়ে দিতে হবে। বিনা গম-১ জাতটি কালো দাগ এবং পাতাপোড়া সহনশীল।

মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্য সচেতনতা বাড়ার কারণে আটার চাহিদা দ্রুত বাড়ছে। এর চাহিদার সঙ্গে দেশে গমের উৎপাদন বাড়ছে না। বরং আশঙ্কাজনক হারে বছরের পর বছর কমছে এর উৎপাদন। গত এক দশকে গমের উৎপাদন কমে অর্ধেকেরও নিচে নেমে এসেছে। খাদ্য মন্ত্রণালয়ের হিসাবে দেশে গমের চাহিদা ৩৫ লাখ টন। কিন্তু দেশে উৎপাদন হয় ১০ লাখ টনের মতো। সে হিসেবে দেশে বছরে গমের ঘাটতি ২৫ লাখ টনের ওপরে।

সূত্র: সমকালfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment