হোটেল বয় থেকে বিলিওনিয়ার

হোটেল বয় থেকে বিলিওনিয়ার

  • লিডারশিপ ডেস্ক

তিনি জন্মেছেন মধ্যবিত্ত পরিবারে। আর্থিক সচ্ছলতা না থাকলেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহ ছিল। যে কারণে উচ্চশিক্ষা গ্রহণের উদ্দেশ্যে দেশ ছাড়েন। পরিবার ছেড়ে একাই পাড়ি জমান আমেরিকায়। সেখানে নিজের থাকা-খাওয়া আর পড়ার খরচ জোগাতে হিমশিম খেয়েছেন। বিভিন্ন সময় তাকে কাজ করতে হয়েছে বিভিন্ন জায়গায়। অর্থ জোগাতে রেস্তোরাঁয় থালাবাসন মাজার কাজও নেন। বাসা ভাড়া নেই বলে পুরো ছাত্রজীবন হোটেলেই থেকেছেন। জীবনযুদ্ধ জয়ের তীব্র আকাঙ্ক্ষা তাকে এগিয়ে যাওয়ার শক্তি জুগিয়েছে। বলা হচ্ছে, পাকিস্তানের বংশোদ্ভূত শাহিদ খানের কথা। এখন তিনি আমেরিকার অর্থনীতিতে প্রভাবশালীদের একজন। গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির বিখ্যাত কোম্পানি ফ্লেক্স-এন-গেটের মালিক তিনি। শুধু নিজেই ধনকুবের বনেননি। তৈরি করেছেন নতুন কর্মসংস্থান।


শাহিদ খান। এখন বিলিওনিয়ার। অথচ জীবিকার খোঁজে এক সময় রেস্তোরাঁয় থালাবাসন মাজতে হয়েছে তাকে। তার শুরুর গল্পটা আপনার চারপাশের আর দশজন সাধারণ মানুষের মতই। আর্থিক দৈন্য থাকলেও পড়াশোনার প্রতি আগ্রহী ছিলেন। উচ্চশিক্ষার জন্য পাড়ি জমিয়েছেন আমেরিকায়। সেখানে পড়াশোনা শেষ করেছেন। তারপর জুটিয়েছেন চাকরি। যে কোম্পানিতে তিনি চাকরি করতেন, কিছুদিন পর নিজেই কিনে নেন সেই কোম্পানিটি। এখন তিনি আমেরিকার অর্থনীতিতে নেতৃত্ব দানকারী গুরুত্বপূর্ণ এক ব্যক্তি। নাম লিখিয়েছেন বিলিয়নিয়ারদের তালিকায়। অনেকটা গল্পের মতো শোনালেও শাহিদ খান এই গল্পকেই বাস্তবে পরিণত করেছেন। এখন পাকিস্তানের সবচেয়ে ধনী ব্যক্তির নাম উল্লেখ করতে গেলেও প্রথমেই আসবে তার নাম। তার মোট সম্পত্তির পরিমাণ ৭.৫ বিলিয়ন ডলার। বিখ্যাত গাড়ির যন্ত্রাংশ তৈরির কোম্পানি ফ্লেক্স-এন-গেটের মালিক তিনি। হাজারো কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি করা কোম্পানিটির অন্যতম বৈশিষ্ট্য।

শাহিদ খানের জন্ম ১৯৫০ সালের ১৮ জুলাই। পাকিস্তানের লাহোরে একটি মধ্যবিত্ত পরিবারে তার বেড়ে ওঠা। বাবা ছিলেন সাধারণ ব্যবসায়ী, আর মা গণিতের অধ্যাপিকা। ১৯৬৭ সালে নিজ দেশ পাকিস্তান থেকে আমেরিকায় পাড়ি জমান মাত্র ১৬ বছর বয়সে। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়ার জন্য তাকে যেতে হয়েছিল মাতৃভূমি ছেড়ে। বর্তমানে তিনি শাসন করছেন মার্কিন অর্থনীতি। আত্মীয়স্বজন ও বন্ধুদের কাছে ‘শাদ খান’ নামেই তিনি বেশি পরিচিত। কিন্তু গোটা বিশ্ব তাকে চেনে শাহিদ খান নামেই। পাকিস্তানি-আমেরিকান বিলিয়নিয়ার হিসেবে তিনি বিশ্বব্যাপী সমাদৃত।

bd-pratidin-SF-06-05-17-08মেকানিক্যাল ইঞ্জিনিয়ারিং বিষয়ে বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়া শেষ করেন। ছাত্রজীবনের শুরুতে তিনি আমেরিকার রেস্তোরাঁয় বাসন মাজার কাজ জুটিয়ে নেন। সে সময় তার পারিশ্রমিক ছিল ঘণ্টা প্রতি ১ দশমিক ২০ ডলার। ভাড়ার টাকা বাঁচাতে বাসায় না থেকে রাত কাটাতেন হোটেলে। কিন্তু এই অবস্থায় তাকে বেশিদিন কাটাতে হয়নি। ইঞ্জিনিয়ারিং পাস করে শাহিদ ইলিনয়ের ফ্লেক্স-এন-গেট নামের এক প্রতিষ্ঠানের চাকরিতে যোগ দেন। প্রতিষ্ঠানটি তখন গাড়ির যন্ত্রাংশ বানাত। ফ্লেক্স-এন-গেট কোম্পানিতে শাহিদ খান যখন যোগ দেন তখনো তার পড়াশোনা শেষ হয়নি। পড়াশোনা শেষে তিনি ইঞ্জিনিয়ারিং ডিরেক্টর হিসেবে সেই কোম্পানিতে যোগ দেন। ১৯৭৮ সালে কোম্পানির বাম্পার তৈরির কাজে তিনি নিযুক্ত হন। সেখানে শুধু কার ও মাইক্রো বাসের বাম্পার তৈরি করা হতো। এখানে চাকরি করে শাহিদ খান মাত্র দুই বছরে ব্যাংক ট্রানজেকশন করেন ৫০ হাজার ডলার। সুযোগ আসে ছোট ব্যবসা প্রশাসন থেকে ১৬ হাজার ডলার ঋণ নেওয়ার। তারপর ১৯৮০ সালে তিনি ফ্লেক্স-এন-গেট-কে প্রতিষ্ঠাতা চার্লস গ্লেসন বাটজো-এর কাছ থেকে কিনে নেন। প্রথমে তিনি ছোট গাড়ির জন্য বাম্পারের ব্যবসাকে গুটিয়ে বড় গাড়ির জন্য বাম্পার বানানোর কাজে হাত দেন। এই কাজে বেশ লাভবান হন। তারপর মাত্র চার বছরের মাথায় ১৯৮৪ সালে শাহিদ খান টয়োটা পিকআপের জন্য অল্প সংখ্যক বাম্পার সরবরাহ করা শুরু করেন। কাজের প্রতি একাগ্রতা আর নিষ্ঠার ফলশ্রুতিতে দ্রুত তার উন্নতি হয়। এরই মধ্যে টয়োটা কোম্পানির আস্থা অর্জনেও তিনি সক্ষম হন। ১৯৮৭ সালে ফ্লেক্স-এন-গেট টয়োটা পিকআপের একমাত্র বাম্পার সরবরাহকারী কোম্পানি হিসেবে পরিণত হন। এর দুই বছর পরই শাহিদ পুরো আমেরিকায় ব্যবহার হওয়া টয়োটা গাড়ির বাম্পার সরবরাহের একমাত্র ব্যক্তি হিসেবে পরিণত হন। এর পরেই কোম্পানির আয় বেড়ে যায়। ফলে উৎপাদনের পদ্ধতি পাল্টে যায় কয়েক মিনিটের মধ্যেই। তখন থেকে কোম্পানির বিক্রয়ের পরিমাণ ১৭ মিলিয়ন থেকে ২০১০ সালে এসে পৌঁছায় ২ বিলিয়নে।

২০১১ সালে ফ্লেক্স-এন-গেটের কর্মী সংখ্যা দাঁড়ায় ১২ হাজার ৪৫০ জনে। ৪৮টি মেনুফ্যাকচারিং প্লান্ট স্থাপন করেন আমেরিকার বিভিন্ন জায়গায়। এই কোম্পানির আয় থেকে আমেরিকাকে প্রতি বছর তিন বিলিয়ন করে রাজস্ব দেওয়া হচ্ছে। ২০১২ সালে কোম্পানিটির পেশাগত নিরাপত্তা এবং সমৃদ্ধ প্রশাসন গড়ে তোলা হয়। ফ্লেক্স-এন-গেট ৫৭ হাজার ডলার ব্যয় করে গ্রামীণ খাতে স্বাস্থ্য বিপ্লব আনতে সক্ষম হয়েছে। এ ছাড়াও তার মালিকানায় আছে আমেরিকার ন্যাশনাল ফুটবল লিগ বা এনএফএল-এর পেশাদার ফুটবল দল জ্যাকসনভিল জাগার্স এবং ইংলিশ ফুটবল লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের-এর দল ফুলহাম এফ.সি.। শাহিদ খান ২০১০ সালের ১১ ফেব্রুয়ারি আমেরিকার ন্যাশনাল ফুটবল লিগকে প্রথম কেনার প্রস্তুতি নেন। সেসময় তিনি একটি চুক্তির মাধ্যমে ৬০ শতাংশের মালিক হন। এরপর ২০১১ সালের ২৯ নভেম্বর ওয়াইনি ওয়েভারের কাছ থেকে জ্যাকসনভিল জাগার্স ফুটবল দল কিনে নেন। এরপর ন্যাশনাল ফুটবল লিগকে সঙ্গে করে একটি গ্রুপ মালিকানাধীনে আনা হয়। তখন ওয়াইনি ওয়েভার টিমের কাছে শাহিদ খানের মালিকানার কথা ঘোষণা করেন। ২০১২ সালের জানুয়ারির ৪ তারিখে ফুটবল দলের ওপর শাহিদ খানের মালিকানা চূড়ান্ত হয়। জাগার্সের শতভাগ ক্রয়মূল্য ছিল ৭৬০ মিলিয়ন ডলার। এদিকে ২০১৩ সালের জুলাইয়ে মুহাম্মদ আল ফায়েদের কাছ থেকে কিনে নেন  ইংলিশ ফুটবল লিগ চ্যাম্পিয়নশিপের-এর দল ফুলহাম এফ.সি.। দলটির ক্রয়মূল্য ছিল ১৫০ থেকে ২০০ মিলিয়ন ডলার। কাজের স্বীকৃতি হিসেবে শাহিদ খান পেয়েছেন বেশ কয়েকটি পুরস্কার। ইলিনয় বিশ্ববিদ্যালয় থেকেও আছে পুরস্কার লাভের ইতিহাস। ১৯৯৯ সালে মেকানিক্যাল সায়েন্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রিয়াল ইঞ্জিনিয়ারিংয়ে সফলতম বিশিষ্টজন ক্যাটাগরিতে তিনি পুরস্কার পান। ২০০৬ সালে কলেজ অব ইঞ্জিনিয়ারিং শাহিদ খানকে অ্যালামনাই অ্যাওয়ার্ড দিয়ে ভূষিত করে।

সূত্র: বাংলাদেশ প্রতিদিনfavicon59-4

Sharing is caring!

Leave a Comment