শীতে চুলের পরিচর্যা

শীতে চুলের পরিচর্যা

শিমি আক্তার : শীতে শুধু ত্বক নয়, রুক্ষতা আসে চুলেও। শীত মানেই রুক্ষ এলোমেলো চুল, খুশকির সমস্যা ইত্যাদি। এই শীতে ত্বকের যত্নের পাশাপাশি নিতে হবে চুলের যত্নও। যার প্রথম উদ্দেশ্যই হতে পারে চুলের হারানো ময়েশ্চার ফিরিয়ে আনা। মেনে চলতে হবে অয়েল ম্যাসাজ, শ্যাম্পু আর চুল আঁচড়ানোর মত প্রতিদিনের রুটিন। চলুন জেনে নেই চুলের যত্নের কিছু প্রয়োজনী টিপসঃ


হট অয়েল ম্যাসাজ :

শীতে চুলের জন্য হট অয়েল ম্যাসাজটা খুবই উপকারী। এর জন্য শ্যাম্পু করার এক ঘন্টা আগে সমপরিমাণে আমন্ড অয়েল ও অলিভ অয়েল সামান্য গরম করে নিন। আঙ্গুলের ডগা দিয়ে চুলের গোড়ায় ষ্ক্যাল্পে আলতোভাবে ম্যাসাজ করুন। এতে তেল সহজে চুলের গোড়ায় ঢুকবে। নারকেল তেল হলেও চলবে, তবে চাইলে এটার সাথে ভিটামিন ই ক্যাপসুলও মেশাতে পারেন।

শ্যাম্পু ও কন্ডিশনিং :

কনকনে শীতে নিয়মিত শ্যাম্পু করাটা বেশ কষ্টসাধ্য । কিন্তু মনে রাখতে হবে ষ্ক্যাল্প পরিষ্কার ও হেলদি হলে তবেই চুল ভালো থাকবে । প্রথমে খুব অল্প পরিমাণে শ্যাম্পু হাতের তালুতে ঘষে হালকাভাবে আঙ্গুলের ডগা দিয়ে চুলে ঘষে ম্যাসাজ করুন। নরমাল চুলে মাইল্ড শ্যাম্পু এবং খুশকি থাকলে এ্যান্টি ড্যানড্রফ শ্যাম্পু ব্যবহার করতে পারেন। শ্যাম্পু করার পর হাতে কয়েক ফোঁটা কন্ডিশনার নিয়ে চুলের মাঝ থেকে ডগা পর্যন্ত লাগিয়ে রাখুন। দুই মিনিট পর ধুয়ে নিন, এতে চুলে জট পাকাবে না এবং চকচক করবে। মনে রাখতে হবে কন্ডিশনার কোন অবস্থাতেই চুলের গোড়ায় লাগানো যাবে না।

ব্রাশিং :

ভেজা চুল কোন অবস্থাতেই আঁচড়ানো যাবে না, কেননা তখন চুলের গোড়া নরম থাকে। শুকানোর পরে প্রথমে আঙ্গুল দিয়ে চুলের জট ছাড়িয়ে নিতে হবে। এরপর মোটা দাঁতের চিরুনি দিয়ে চুলের ডগা আগে ছাড়িয়ে নিতে হবে। এরপর চুলের গোড়ার দিকে ধীরে ধীরে জট ছাড়াতে হবে।

এ ছাড়াও চুলের যত্নের অংশ হিসাবে বিভিন্ন রকম হেয়ার মাষ্কও সপ্তাহে দুই এক দিন ব্যবহার করতে পারেন। উদহারণ স্বরুপ বলা যেতে পারেঃ

ব্যানানা মাস্ক :

ব্যানানা মাস্কটি চুলের জন্য বেশ উপকারী। এক্ষেত্রে পাকা কলা ভালো করে চটকে তাতে সামান্য অলিভ অয়েল, ডিম ও গ্লিসারিন মিশিয়ে এই মাস্কটি তৈরী করা যেতে পারে। এটা ষ্ক্যাল্পে ও চুলে লাগিয়ে আধা ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন। এই মাস্কটি চুলের গোড়া মজবুত করতে এবং চুলের উজ্জলতা বৃদ্ধিতে বেশ কার্যকর ভূমিকা পালন করে থাকে।

মধু ও অলিভ অয়েলের মাস্ক :

মধু এমনিতেই চুলের উজ্জ্বলতা বৃদ্ধি করে আর অলিভ অয়েল চুলের গোড়াকে মজবুত করে এবং নতুন চুল গজাতে সাহায্য করে। দুই টেবিল চামচ অলিভ অয়েলের সাথে এক টেবিল চামচ মধু মিশিয়ে সামান্য গরম করে আলতে করে চুলের গোড়ায় আঙ্গুলের ডগা দিয়ে ম্যাসাজ করতে হবে। ১৫-২০ মিনিট পর শ্যাম্পু করে ফেলতে হবে। কয়েক সপ্তাহ ব্যবহারে পরিবর্তনটা নিজেই বুঝতে পারবেন।

মধু ও মেহেদীর মাস্ক :

চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধি এবং চুলের গোড়া মজবুত করে এই মাস্ক। বাটা মেহেদীর মাথে মধু মিশিয়ে ষ্ক্যাল্পে এবং চুলে লাগিয়ে আধা ঘন্টা রেখে শ্যাম্পু করে ফেলুন, খুব সহজেই আবার চুলের ময়েশ্চার ফিরে পেতে পারেন।

যেহেতু শীতের সময় চূল রুক্ষ হয়ে যায় তাই আমাদের চুলের এই বাড়তি যত্ন নিতে হবে। কথায় আছে ’তেল-জলেই চুলের পুষ্টি’। সেজন্য শ্যাম্পু করার আগে তেলের ব্যবহার রেখে শ্যাম্পু করার পর কন্ডিশনার ব্যবহার করা দরকার। কন্ডিশনার মূলত চুলের রুক্ষতা দূর করে থাকে আর তেল চুলের গোড়াকে মজবুত করে। তাই চুলের সৌন্দর্য বৃদ্ধিতে উল্লেখিত মাস্ক ও প্যাক ব্যবহার করতে পারেন। এছাড়া মাথার ত্বকের কোন রকম ক্ষত থাকলে নিম প্যাক, আদা বাটার সাতে মুলতানি মাটি মেশানো প্যাক ব্যবহার করলে দ্রুত ফল পাওয়া যাবে।

সুতারাং, এই শীতে চুলের রুক্ষতা আর নয়, ত্বকের পাশাপাশি নিন চুলের যত্নও । এর মধ্যে যে কোন একটি মাস্ক বেছে নিয়ে নিয়মিত ব্যবহার করে তার সাথে সঠিক শ্যাম্পু নির্বাচন এবং সঠিক পদ্ধতিতে কন্ডিশনার ব্যবহার করে ও সঠিক পদ্ধতিতে চুল আচড়ালে চুল পড়া বহুগুণে কমে যাবে। আর সেই সাথে ফিরে পাবে ময়েশ্চার। চুল হয়ে উঠবে আরও উজ্জল ও প্রাণবন্ত।

রচনা : শিমি আক্তার
মডেল: কিমিয়া কিমকিম
ফটোগ্রাফি: এস এম রাসেল favicon5

Sharing is caring!

Leave a Comment