রুচিশীলতায় বাঁশ ও বেতের প্রাধান্য

রুচিশীলতায় বাঁশ ও বেতের প্রাধান্য

আকলিমা আক্তার রিক্তা : বাংলাদেশে প্রাকৃতিক সম্পদ যেন ডানা মেলে বসে আছে। বাঁশ এবং বেত তেমনি উল্লেখযোগ্য একটি সম্পদ। বিভিন্ন আড়ম্বরপূর্ন আসবাবপত্রের ভীড়ে বাশ ও বেতের তৈরী আসবাবপত্র গৃহে এনে দিচ্ছে স্বকীয়তা ও স্বতন্ত্রতা।

দৈনন্দিন জীবনে বাঁশ এবং বেতের তৈরি আসবাবপত্রের গুণগান গেয়ে শেষ করা যাবে না। দোলনা থেকে শুরু করে শেষ ঠিকানা কবর পর্যন্ত জীবনের প্রতিটি ক্ষেত্রে বাঁশের সামগ্রীর যেমনটি প্রয়োজন, তেমনি বেতের তৈরি সামগ্রীর তুলনা কোনো অংশে কম নয়।

বাঁশের তৈরি সামগ্রীর মধ্যে কুলা, ডালা, টুকনি, চালুনি, পলো, চাঙ্গারি, ধামা, মোড়া, বুকশেলফ, ওয়ারড্রব, আলমিরা, দোলনা, র্যা ক, জুতার র্যা ক, ছাতা রাখার বক্র, ফুলের টব, টিভি ট্রলি, ইজি চেয়ার, টেবিল ল্যাম্প, রোকিং চেয়ার, বাঁশি অন্যতম। সৌখিন সামগ্রী তৈরিতে বাঁশ ও বেতের জুড়ি নেই। বেতের তৈরী সোফা নিঃসন্দেহে নজরকাড়ে।

দেশে রুচিশীল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আবহমানকাল ধরে গ্রামবাংলার হাটবাজারে বাঁশ এবং বেতের সামগ্রীর ব্যাপক প্রদর্শন থাকলেও ইদানীং গৃহসজ্জার অন্যতম উপাদান হিসেবে প্রবেশ করতে শুরু করেছে শহরের অভিজাত শ্রেণীর বাসগৃহে। শুধু অভিজাতই নয়, মধ্যবিত্তের ড্রয়িংরুম থেকে শুরু করে পুরো গৃহেই শোভা পাচ্ছে এসব সামগ্রী।

উচ্চ এবং মধ্যবিত্ত পরিবারের গৃহসজ্জায় বাঁশের পাশাপাশি বেতের তৈরি সামগ্রীর জনপ্রিয়তা কিন্তু আজও হারিয়ে যায়নি। ঘরের সৌন্দর্য বাড়াতে বেতের সামগ্রী রীতিমতো নিয়ে আসে আধুনিকতার পরশ। আজকাল বাজারে প্লাস্টিক, স্টিল এবং কাঠের দৃষ্টিনন্দন সামগ্রী চোখে পড়ে, যার অনেক বৈশিষ্ট্যই মানুষকে আকৃষ্ট করে। কিন্তু সেগুলোর চেয়ে বাঁশ এবং বেতের তৈরি সামগ্রী অনেক বেশি টেকসই এবং আরামদায়ক। দিন দিন সেগুলোর চাহিদা বেড়েই চলছে। নতুন সংসার সাজাতে কাঠের সামগ্রীকে পেছনে ঠেলে মানুষ ঝুঁকছে বাঁশ এবং বেতের তৈরি সামগ্রীর দিকে। এগুলোর চাহিদায় বোঝা যায়, দেশে রুচিশীল মানুষের সংখ্যা বাড়ছে। আবহমানকাল ধরে গ্রামবাংলার হাটবাজারে বাঁশ এবং বেতের সামগ্রীর ব্যাপক প্রদর্শন থাকলেও ইদানীং গৃহসজ্জার অন্যতম উপাদান হিসেবে প্রবেশ করতে শুরু করেছে শহরের অভিজাত শ্রেণীর বাসগৃহে। শুধু অভিজাতই নয়, মধ্যবিত্তের ড্রয়িংরুম থেকে শুরু করে পুরো গৃহেই শোভা পাচ্ছে এসব সামগ্রী।

design8

আমাদের দেশে গ্রামে বা শহরে উভয় জায়গাতেই বাঁশের তৈরি পণ্যের প্রচুর চাহিদা রয়েছে। গ্রামে ঝুড়ি, টুকরী, চালুনী, পলো ইত্যাদির ব্যবহার বেশি, অন্যদিকে শহরে সৌখিন পণ্য যেমন- বুক সেলফ, ফুলদানী, ওয়ালম্যাট ইত্যাদির ব্যবহার বেশি দেখা যায়। এসব সৌখিন পণ্য দেশীয় চাহিদা মিটিয়ে বিদেশেও রপ্তানী করা যেতে পারে।

বর্তমান সময়ে বাঁশজাত সৌখিন সামগ্রীর চাহিদা আগের চেয়ে বৃদ্ধি পেয়েছে। বিশেষ করে মধ্যবিত্ত পরিবারের রুচিশীল ব্যক্তিরা এসব পণ্যের প্রধান ক্রেতা। বিভিন্ন পালা-পার্বণ, মেলা, প্রদর্শনী এবং শহরের সৌখিন সামগ্রীর বিক্রয়কারী প্রতিষ্ঠানের মাধ্যমে এগুলো ভোক্তা বা ব্যবহারকারীর হাতে পৌছে। রপ্তানী বাণিজ্যেও বাঁশজাত হস্তশিল্প ভূমিকা রাখছে। বৈদেশিক বাজারে এসব পণ্যের বিপুল চাহিদা রয়েছে। ক্রেতাদের চাহিদার কথা মাথায় রেখে পণ্য উৎপাদন করতে পারলে এ ব্যবসাতে লাভবান হওয়া সম্ভব। তবে যেসব কারু শিল্পীর উদ্ভাবনী শক্তি রয়েছে এবং বাজারের চাহিদার সাথে সংগতি রেখে নতুন নতুন শৌখিন ও সৌন্দর্য মন্ডিত সামগ্রী তৈরি করতে সক্ষম হয়েছেন তারা সফলভাবে এ ব্যবসায় টিকে আছেন। আড়ং, অন্তজ, বুনন, কে-ক্রাফটস এরকম আরো বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বাঁশের তৈরি পণ্য বিপণনে বেশ ভালো করছে।

Emilie-Voirin-Bamboo-And-Rattan-Made-In-China-Reinterprets-Design-Classics-1-537x358

ফরিদপুর, শরীয়তপুর, বিক্রমপুর, টাঙ্গাইলে বেত চাষ হয়। গোটা বেত থেকে মোড়া, দোলনা, শীতলপাটি, বুকশেলফসহ নানা ধরনের আসবাবপত্র তৈরি হচ্ছে। বাঁশ ও বেতের ফার্নিচারের প্রচলন প্রথম শুরু হয় সিঙ্গাপুর ও ভারতে। ভারত থেকে এর প্রচলন শুরু হয় আমাদের দেশের সিলেট অঞ্চলে। আসাম, ত্রিপুরা, কলকাতা থেকে বাঙালিরা প্রশিক্ষণ নিয়ে বেতশিল্পের সূচনা ঘটায় দেশের মধ্যে। ব্রিটিশের সময় এ শিল্পের আবির্ভাব বিদেশে ঘটলে পাকিস্তানের সময় আমাদের দেশে বেতশিল্পের কাজ শুরু হয়। সিলেটে শুরু হলেও পরে পুরনো ঢাকার লোকজন সিলেট থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে ঢাকায় এর কাজ শুরু করেন। ঢাকায় বেতের ফার্নিচারের প্রথম দোকান উদ্বোধন করা হয় বেগমবাজারে। সেখান থেকে ধীরে ধীরে এর বিস্তার ঘটে। বর্তমানে বাঁশ ও বেত দিয়ে ফার্নিচার তৈরি হয় এমন কারখানা রয়েছে শতাধিক। দোকান ও কারখানায় জড়িত রয়েছে প্রায় ১৫ থেকে ২০ হাজার শ্রমিক। তবে এ শিল্পের সঙ্গে জড়িতরা জানান, মিয়ানমার ও সিঙ্গাপুর থেকে বেত আমদানি করে ফার্নিচার তৈরি করা হচ্ছে। আমদানির ক্ষেত্রে সরকারের তেমন সহযোগিতা নেই বলে তারা জানান। তবে এসব ফার্নিচার তৈরির ক্ষেত্রে জার্মান, মালয়েশিয়া, জাপানসহ একাধিক দেশের ডিজাইন অনুসরণ করা হচ্ছে।

গৃহ সজ্জায় স্টিল, কাঠ ইত্যাদি দ্বারা তৈরী আসবাবপত্রের ব্যাপক প্রচলন তো আছেই।পাশাপাশি বাঁশ ও বেতের তৈরী আসবাবেরও জুড়ি নেই।সকলের গৃহ থেকে আপনার গৃহটি অন্যরকম ভাবে সাজিয়ে তুলতে পারেন বাঁশ ও বেতের আসবাব ব্যাবহার করে। এতে আপনার মননশীলতা, সৃজনশীলতা প্রকাশ তো পাবেই, সাথে সাথে পারিবারিক মুল্যবোধ রক্ষার্থে ভূমিকা রাখবে।

ইন্টারনেট অবলম্বনে। favicon5

Sharing is caring!

Leave a Comment