টাকা বাঁচাতে ‘কস্ট কাটিং প্লান’

টাকা বাঁচাতে ‘কস্ট কাটিং প্লান’

রবিউল কমল : ছেলেবেলায় কোনো এক গৌরী সেনের গল্প শুনেছিলাম। যে কোনো সময়ে যে কোনো আর্থিক প্রয়োজনে তিনিই ছিলেন ২৪ঘন্টা এটিএম। কিন্তু মূল্যবৃদ্ধির এই বাজারে এমন অফুরান টাকার যোগান দেওয়ার কোনো ব্যাক্তি শুধুই অলীক কল্পনা। আলু- পটল থেকে শুরু করে ডিজেল – পেট্রল, এমনকি বাসার কাজের বুয়ার বেতনও আকাশছোঁয়া। চারিদিকে সবকিছু যখন উর্দ্ধমুখী তখন নিজের বেতন সরলরৈখিক ধারাতেই আছে! আর বেতন বাড়লেও আগুনমুখী বাজারের সাথে পাল্লা দেওয়া ক্রমেই দুঃসাধ্য হয়ে যাচ্ছে। তাই এখন থেকে প্রয়োজন মানি ডায়েটিং। মানি ডায়েটের মূলমন্ত্র হচ্ছে টাকা পয়সার জন্য যথাযথ পরিকল্পনা করা। ক্রমবর্ধমান মূল্যবৃদ্ধির বাজারে খরচ কমানো বা ‘কস্ট কাটিং’ করা আসলেই খুব কঠিন কাজ। কিন্তু অর্থনৈতিক ফিটনেসের মূলমন্ত্র তো সেটাই। ভাবুন তো শরীরের ওজন বেড়ে গেলে আমরা কত কষ্ট করে ডায়েট করে সেই ওজন কমায়। ঠিক একইভাবে আর্থিক ক্ষেত্রে প্রয়োজন মানি ডায়েটের। অর্থাৎ একটু মাথা খাটিয়ে খরচের কাটছাট করে সুস্থভাবে জীবনযাপন করা।

টাকা বাঁচানোর ক্ষেত্র :

মাসের শুরুতেই খাতা-কলম নিয়ে বসে পড়–ন। সারা মাসের জমা-খরচের হিসাব করুন। বিদ্যুত বিল, টেলিফোন বিল, যাতায়াত খরচ, ড্রাইভারের বেতন, বাড়ি ভাড়া, বীমা প্রিমিয়াম ইত্যাদি খরচের জন্য আগে থেকে টাকা আলাদা করে রাখুন। মাসের শুরুতেই এই খরচগুলো মিটিয়ে ফেলা ভাল। তাছাড়া আমাদের প্রত্যেকেরই একটি না একটি দুর্বলতা থাকে। এই যেমন কেউ শপিং প্রিয় তো আবার কেউ গ্যাজেট প্রিয়।

হিসাব কষলে দেখা যাবে আমাদের বেতনের কিছু অংশ এসব খাতে চলে যায়। এ ধরনের ব্যয়খাত খুঁজে বের করুন। কারণ এটা কিছু কিছু ক্ষেত্রে অপচয় ছাড়া আর কিছুই নয়। আপনি নিজের জন্য একটি পরিকল্পনা তৈরি করুন, এটা খুব জরুরি। যেমন ধরুন সামনের মাসে পার্টি দেওয়ার পরিকল্পনা করেছেন। বেশ ভাল কিন্তু পার্টি কোনো রেস্টুরেন্টে না দিয়ে বাড়িতেই বন্ধুদের নিয়ে হাউজ পার্টি করতে পারেন। তাহলে আপনার খরচ অনেক কমে যাবে। একটু ভাবলে খরচ কমানোর এমন অপশন আপনি আরো অনেক পাবেন। যেমন শপিংয়ের ক্ষেত্রে আপনি অনলাইনের সাহায্য নিতে পারেন। প্রায় প্রতিটি অনলাইন শপিং সাইট আপনার প্রতীক্ষায় নানা রকমের অফার নিয়ে বসে আছে। রেস্তোরা, মুভি টিকেট, ট্রাভেল টিকেট, বিউটি প্রোডাক্ট, পোশাকসহ প্রায় সবকিছুই অনলাইনে আপনি বেশ ছাড়েই কিনতে পারবেন। আমার কথা বিশ্বাস না হলে নিজেই একবার চেষ্টা করে দেখতে পারেন। এখন অনেক জায়গায় ব্রান্ডেড প্রোডাক্ট কিস্তির মাধ্যমে কেনার সুযোগ আছে। কোনো ইলেকট্রিক পণ্য কেনার ক্ষেত্রে এমন অপশন নিতে পারেন।

20150908171844-financial-report-investors-invest

কস্ট কাটিং প্লান :

কস্ট কাটিংয়ের প্রথম ও প্রধান শর্ত হল অহেতুক খরচের হাত থেকে মুক্তি পাওয়া। ধরুন আপনি কোনো লোন নেবেন এক্ষেত্রে একটু মাথা খাটিয়ে ব্যাংক বাছাই করুন। যেখানে সবচেয়ে লাভজনক কিস্তিতে টাকা শোধ করার সুযোগ থাকবে আপনি সেই ব্যাংকেই বেছে নিন। তবে বিনিয়োগ করার ক্ষেত্রে খেয়াল রাখুন আয়করে বাড়তি সুবিধা পাবেন কি না। একইভাবে ছোট ছোট জিনিসের কস্ট কাটিংয়ে নজর দিন। সিনেমা দেখতে হলে মাল্টিপ্লেক্সের গোল্ড ক্লাসে দেখতে হবে এমনটা নয়, প্রয়োজনে মর্নিংশো দেখুন কিছু খরচ বেঁচে যাবে। বন্ধুরা মিলে রেস্টুরেন্টে খেতে গেলে খরচ ভাগ করে নিন। আবার মোবাইলে যদি খুব বেশি কথা বলার অভ্যাস থাকে তাহলে কলচার্জ কমিয়ে নিন। এখন বিভিন্ন মোবাইল অপারেটররা নানা রকমের লোভনীয় অফার দিয়েই থাকে। বিদ্যুত বিল বাঁচাকে অপ্রয়োজনে ফ্যান, এসি বা হিটার চালিয়ে রাখা একদম বন্ধ করে দিন। মোবাইল চার্জ হয়ে গেলে আনপ্লাগ করে নিন।

বেকারদের মানি প্লানিং :

  • আপনি যদি চাকরিজীবী না হন তাহলে খরচ কমানোর সাথে সাথে পার্ট টাইম কোনো কাজ করার চেষ্টা করুন। শখের কোনো কাজও শিখতে পারেন। যেমন আপনার যদি রান্না করার শখ থাকে তাহলে বেকিং বা কুকিংয়ের কাজ শিখতে পারেন, যা পরবর্তীতে আপনার আয়ের ভাল উৎস হতে পারে।
  • ছোট করে হলেও কোনো হোম বিজনেস শুরু করতে পারেন। বর্তমানে এই ধরনের ব্যবসার ক্ষেত্রে ক্যাটারিং ব্যবসা বেশ জনপ্রিয়।
  • এখন থেকে টাকা জমানোর অভ্যাস গড়ে তুলুন।
  • গার্লফ্রেন্ডের পেছনে অযথা ঘুরঘুর করবেন না। এতে টাকা এবং সময় দুটোই বাঁচবে।

বিপদের বন্ধু :

  • ইর্মাজেন্সি ফান্ড সবসময় বজায় রাখুন। কুইক ক্যাশের জন্য একটি নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা মজুত রাখুন, বিপদে এটি আপনার বন্ধুর মতো কাজে দেবে।
  • ক্রেডিট কার্ড ব্যবহার না করাই ভাল। কারণ এজন্য লেট পেমেন্ট চার্জ এবং দৈনিক সুদ প্রদান করতে হয়।
  • আপনার সন্তানের কথা ভাবুন। ওর জন্য শিশু বীমা পলিসি, এডুকেশন পলিসি ইত্যাদি বীমা করে রাখতে পারেন।
  • জীবন বীমা করে রাখুন। বিভিন্ন সরকারি সংস্থা ও বেসরকারি ব্যাংক জীবন বীমা পলিসি করিয়ে থাকে।
  • সোনা ও জমি কিনে রাখা দীর্ঘমেয়াদে লাভজনক। তাই সুযোগ হলে এগুলো কিনে রাখতে পারেন।

তিল তিল করে টাকা জমানোর চেষ্টা করেও কিছুতেই অবাধ্য খরচকে বশ মানাতে পারছেন না? উপরের টিপসগুলো প্রয়োগ করে দেখতে পারেন। আমার বিশ্বাস আপনার চেষ্টা বিফলে যাবে না। আর হ্যাঁ, প্রতি মাসে কস্ট কাটিংয়ের পাশপাশি আপনি যদি আপনার মহা মূল্যবান মূলধন সঠিক স্কিমে বিনিয়োগ করেন তাহলে আপনি অবশ্যই সফল হবেন। তাহলে আজ থেকে শুরু হয়ে যাক টাকা জমানোর এই প্রচেষ্টা ‘কস্ট কাটিং প্লান’। favicon

Sharing is caring!

Leave a Comment