নতুন বন্ধু

নতুন বন্ধু

রবিউল কমল : তার সঙ্গে আপনার প্রথম আলাপ স্কুলের গেটের বাইরে। আপনার ৪ বছরের ছেলেকে স্কুলে পৌঁছে দিয়ে বেশ খানিকটা সময় অপেক্ষা করতে হত, যতক্ষণ না ক্লাস শেষ হয়। তাকেও দেখতেন স্কুলের বাইরে অপেক্ষা করতে।


তাই নিজে থেকেই আলাপ করেছিলেন। জানলেন তার ছেলে আপনার ছেলেরই ক্লাসমেট। স্ত্রী ব্যস্ত ডাক্তার বলে ছেলেকে স্কুলে দেওয়া-নেওয়ার কাজটা তাকেই করতে হয়। আর কাজটা তার বেশ পছন্দের। আগে প্রতিদিন স্কুলের বাইরে ৩ ঘণ্টা দাঁড়িয়ে বোর হতেন, তার সঙ্গে আলাপের পর থেকে কীভাবে যে সময় কেটে যায় বুঝতেই পারেন না।

একটি কফিশপে বসে প্রতিদিন গল্প করেন আপনারা। সে একটি ট্রাভেল এজেন্সি চালায়। আর আপনার একটি ছোট বিউটি পার্লারের ব্যবসা আছে। কিন্তু রাজনীতি, সিনেমা, নাটক, ফ্যাশন, কারেন্ট অ্যাফেয়ার্স, ছেলের ভবিষ্যৎ সব নিয়ে আলোচনা হয় আপনাদের মধ্যে। নিজেদের মধ্যে খুব সুন্দর একটি বোঝাপড়া গড়ে উঠেছে। প্রতিদিন সকালে ওই ৩ ঘণ্টা দেখা না হলে বেশ মিস করেন একে অপরকে।

অনেকে হয়তো বলবেন এই সম্পর্ক প্রেমেরই প্রথম অধ্যায়। কিন্তু আপনার তা মনে হয় না। কারণ আপসার স্বামীর প্রতি আপনার টান বা আকর্ষণ একটুও কমেনি। সন্তান, সংসার বা ক্যারিয়ার কোনও ব্যাপারই অবহেলা করতে মন চায় না আপনার। সেইভাবে দেখতে গেলে আগে যা ছিলেন, আজও তাই আছেন। শুধু আপনার একজন নতুন বন্ধু হয়েছে যে নানা দিক থেকে আপনাকে সমৃদ্ধ করে চলেছে। কথাটা আপনার স্বামীকে বলি বলি করেও বলতে পারেননি। আপনার ভয় এই বন্ধুত্ব সে মেনে নিতে পারবে কি না। তবে সাহস করে একদিন বলেই দেন কারণ আপনার মনে তো আর এই সম্পর্ক নিয়ে বিন্দুমাত্র অপরাধবোধ নেই।

নতুন ভাবনা

  • বন্ধুত্ব একটি চিরন্তন সম্পর্ক। বয়স, সামাজিক অবস্থান বা লিঙ্গ কখনো বন্ধুত্বের পথে বাধা হয়ে দাঁড়াতে পারে না। মনের খোরাক জোগাবার জন্য বন্ধুত্বের কোনো বিকল্প নেই। সেই জন্য কারো সাথে কথা বলে ভাল লাগলে বা কমন ইন্টারেস্ট থাকলে, তার সঙ্গে বন্ধুত্ব করতেই পারেন।
  • বন্ধুত্ব নানারকমের হতে পারে। আপনি আপনার বন্ধুর সঙ্গে ঠিক কতটা অন্তরঙ্গ হবেন, সেটা নিজের বিচার-বুদ্ধি দিয়ে ঠিক করুন। তবে এই কাজটি কৌশলে করা প্রয়োজন যাতে বন্ধুত্বের সম্পর্ক কোনোভাবে নষ্ট না হয়।
  • বন্ধুদের সঙ্গে নিজের ব্যক্তিগত সমস্যা (বিশেষত স্বামীর সঙ্গে সম্পর্ক) নিয়ে যত কম আলোচনা করবেন, তত ভাল। কারণ এ নিয়ে পরে দাম্পত্য সমস্যা দেখা দিতে পারে।
  • আপনার নতুন বন্ধুকে সপরিবারে বাড়িতে নিমন্ত্রণ জানান। তিনি আপনাদের ফ্যামিলি ফ্রেন্ডও হয়ে উঠতে পারেন।
  • বন্ধুর ব্যক্তিগত জীবন নিয়ে বেশি কৌতুহল দেখানোটা অশোভন। সে তার পরিবারের সাথে আলাপ করিয়ে দিতে আগ্রহ দেখালে, আপনি উৎসাহী হতে পারেন। না হলে দরকার নেই।
  • বন্ধুর সঙ্গে গল্প, আড্ডার বিবরণ বাড়িতে ফিরে না বলাই ভাল। প্রত্যেক সম্পর্কের একটি ব্যক্তিগত দিক আছে, সেটিকে সম্মান দিয়ে চলা বুদ্ধিমানের কাজ।
  • মনে রাখুন নতুন বন্ধুর ব্যাপারে স্বামীকে অবশ্যই জানান। না হলে ভবিষ্যতে ভুল বোঝাবুঝির সম্ভাবনা থেকেই যাবে।

 

মডেল : সজল এবং বাঁধন 
ফটোগ্রাফি : এস এম রাসেল  favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment