তোরা ছিলি, তোরা থাকবি…

তোরা ছিলি, তোরা থাকবি…

রবিউল কমল : জীবনের বেশ বড় একটা অংশ আমাদের কেটে যায় ক্যাম্পাস প্রাঙ্গণে। স্কুল আর কলেজ জীবনের বন্ধুত্ব পেরিয়ে একসময় জীবনে আসে বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের বন্ধুরা। সত্যি বলতে কি, এই শিক্ষা জীবনের অলি গলি থেকেই কিন্তু আমরা খুঁজে নেই আমাদের আজীবনের বন্ধুদের। ক্যাম্পাস জীবনের পরেও হয়তো বন্ধুত্ব হয় এবং ভালো বন্ধুত্বই হয়। কিন্তু সহপাঠীদের সাথে বন্ধুত্বের আবেদনটা চিরকালই একটু অন্য রকম রয়ে যায় মনের মাঝে।


বন্ধু যখন আপনার সহপাঠী বা ক্যাম্পাসের সাথী, তখন কিন্তু অবশ্যই খেয়াল রাখতে হবে কিছু ব্যাপারে। আজ তুলে ধরা হলো সেই সব ব্যাপার গুলোই।

  • অরিয়েন্টেশন ক্লাসের সময়েই প্রথম পরিচয়ের পর্বটা সেরে ফেলুন। এবং প্রথম দিনের পরিচয়ে থেমে থাকবেন না। দেখা হলেই কথা বলুন, হাই-হ্যালো করুন সকলের সাথে। মনে রাখবেন এড়িয়ে চললে কারো সঙ্গেই ভালো সম্পর্ক গড়ে ওঠে না।
  • ক্লাসের ফাঁকের আড্ডায় নিজের মধ্যে জড়তা না রেখে বরং প্রমাণ করুন বন্ধু হিসেবে আপনি মিশুক। আবার বেশি জানি বা নিজের আঁতলামি ভাব প্রকাশ করতে যাবেন না। সেটা ছেলে বন্ধু বা মেয়ে বন্ধু কেউই পছন্দ করবেন না।
  • নোট নিতে না পারলেও নিজের ক্লাস নোট দিয়ে সাহায্য করুন বন্ধুদেরকে।
  • আপনি লেখাপড়ায় ভালো হয়ে থাকলে ইনকোর্স বা সেমিস্টার ফাইনাল পরীক্ষার আগে সময় দিন অপেক্ষাকৃত দুর্বল বন্ধুকে। তবে অন্যকে সাহায্য করতে গিয়ে নিজের লেখাপড়ার ক্ষতি করা যাবে না।
  • কোন শিক্ষক কেমন পড়ান, কার আচরণ কেমন এসব তথ্য জানতে চাইলে সাহায্য করুন পরস্পরকে। তবে মনে রাখুন কারো নামে বদনাম করাও ঠিক না।
  • ক্যাম্পাসের খুঁটিনাটি ব্যাপারগুলো মেয়েদের চাইতে ছেলেরাই বেশি জানে। যেমন বাসায় পৌঁছার শেষ গাড়িটা ক’টায় পাওয়া যায়। অনেক সময় ছেলে বন্ধুর কাছে মেয়েরা এসব ব্যাপার জানতে সংকোচ বোধ করে। সেক্ষেত্রে নিজে থেকে তাকে জানান কীভাবে সে বাড়ি যাবে। তাহলে সম্পর্কটা অনেক সহজ হয়ে যাবে।
  • ক্যাম্পাসের কোন স্টলের চা বিখ্যাত কিংবা ভালো চটপটির দোকান কতদূর এসব খবর হতে পারে বন্ধুত্ব শুরুর উপায়।
  • মেয়েদেরকে ভুগতে হয় নিরাপত্তাহীনতায়। ক্লাস আর অ্যাসাইনমেন্ট শেষ করে আপনার মেয়ে বন্ধুটির বাড়ি ফিরতে দেরী হয়ে গেলে কিংবা শেষ বাসটি মিস করলে তাকে বাসা পর্যন্ত এগিয়ে দিয়ে আসুন। তাহলে সে আপনাকে নিরাপদ ভাবতে শুরু করবে। তবে ভুলেও নৈতিকতা বর্জিত কিছু করবেন না। তাতে হীতে বিপরীত হতে পারে।
  • বন্ধুদের সুপ্ত প্রতিভার খোঁজ করুন। তাকে উৎসাহিত করুন তার সৃজনশীল চর্চা চালিয়ে যাবার জন্য। সে মনোবল ফিরে পাবে এবং আপনার কাছে থেকে উদ্দীপনাও পাবে।
  • বিশেষ বিশেষ দিন যেমন পহেলা বৈশাখ কিংবা শীতের পিঠা উৎসব অথবা শিল্পকলার ভালো নাটকটি দেখতে যাবার সময় বন্ধুদেরও আমন্ত্রণ জানান।
  • বন্ধুত্বের ব্যাপারে ছেলেদের চাইতে মেয়েরা সামাজিক ও পারিবারিকভাবে বেশি জবাবদিহিতার মুখোমুখি হয়। তাই মেয়ে বন্ধুর দেয়া নিমন্ত্রণ গ্রহণ করুন এবং তার পরিবারের সাথেও পরিচিত হোন। নিজের ভাবমূর্তি তাদের কাছে তুলে ধরুন। এতে বন্ধু হিসেবে তার পরিবারেও আপনার গ্রহণযোগ্যতা বাড়বে।
  • সব সম্পর্কই প্রেম নয় এই ব্যাপারটি ভালোভাবে অনুভব করতে হবে। কার সঙ্গে প্রেম করবেন, কে বন্ধু থাকবে এই বিষয়টি ভালোভাবে ভেবেচিন্তে এগুনো উচিত।
  • বন্ধু যদি ক্যাম্পাস রাজনীতি করে তাহলে সে কি ধরণের সংগঠনের সঙ্গে যুক্ত জানার চেষ্টা করুন। খারাপ হলে তাকে জানিয়ে দিন। কারণ আপনার বন্ধু বিপদে পড়বে, সেটা যদি বুঝতে পারেন তাহলে তাকে ফিরিয়ে আনাটা মানুষ হিসেবে আপনার দায়িত্বের মধ্যে পড়ে।
  • সব মানুষের মানসিকতা বা কথা বলার ধরণ এক নয়। কেউ যদি কথা বলার সময় একটু আধটু উত্তেজিত হয়, তাকে অবজ্ঞা কিংবা এড়িয়ে চলবেন না। ধৈর্য্য ধরুন এবং সে শান্ত হয়ে এলে তাকে বোঝান। এতে আপনার প্রতি বন্ধুর শ্রদ্ধা বেড়ে যাবে।
  • ক্যাম্পাস জীবনে অনেকেই একটু আধটু কবিতা লেখে, গান গায়। বন্ধুটির লেখা কবিতা গান কিংবা গল্পটি শুনুন। তাকে উৎসাহিত করুন। কোন অবস্থাতেই তাকে এমন কিছু বলা উচিত নয় যাতে সে নিরুৎসাহিত হয় বা কষ্ট পায়।
  • পাবলিক প্লেসে বন্ধুদের কোন কথা নিয়ে এমন মন্তব্য করবেন না যাতে সে বিব্রতকর অবস্থায় পড়ে।
  • চলাফেরার সময় নিজের ইগো কিংবা আত্মকেন্দ্রিকতার প্রভাব যেন বন্ধুদের উপর না পড়ে সেটি খেয়াল রাখুন।
  • মতের অমিল হতেই পারে। তর্ক দিয়ে সব বিতর্কের অবসান ঘটে না। তাই যে কোন বিষয়ের অমিলের ব্যাপারে ধৈর্য ধরে আলোচনা চালিয়ে যান।
  • বিশেষ দিনগুলো, যেমন জন্মদিন বা পহেলা বৈশাখ অথবা বন্ধুত্ব দিবসে শুভেচ্ছা জানাতে ভুলবেন না।
  • বন্ধুর দেয়া নিমন্ত্রণগুলো যতটা সম্ভব রক্ষা করার চেষ্টা করুন।
  • কখনো মন খারাপ দেখলে জানার চেষ্টা করুন কেন। পারলে সাহায্য করুন। আপনার অল্প একটু সহমর্মিতায় তার মানসিকভাবে খুব সাহায্য হতে পারে।

 

মডেল : সজিব, প্রাচি, উৎস ও লিজা
ফটোগ্রাফি : তারেক favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment