মেঘ ছুঁতে চলো বান্দরবান

মেঘ ছুঁতে চলো বান্দরবান

রবিউল কমল : পার্বত্য জেলা তিনটির অন্যতম একটি বান্দরবান। হাত বাড়ালেই মেঘের পরশ। চঞ্চলা ঝর্ণার অবিরাম ছুটে চলা আর শ্যামল প্রকৃতি, সব মিলিয়ে যেন এক টুকরো স্বর্গ। এখানকার সর্বত্রই রয়েছে দেখার মতো অসংখ্য জায়গা।


12460003_859246050840725_91006927_nকী দেখবেন, কেন দেখবেন

রুমা বাজার : শহরতলী থেকে ৫২ কিলোমিটার দূরে উপজেলা শহর রুমা। আকারে ছোট এ শহরটির পরতে পরতে ছড়িয়ে আছে মায়াবী সৌন্দর্য। বান্দরবান থেকে প্রতিদিন সকাল হতে দুপুর পর্যন্ত চাঁদের গাড়ি ছেড়ে যায় রুমার উদ্দেশে।

বগালেক : রুমা বাজার থেকে ১৫ কিলোমিটার দূরত্বের এক দুর্গম পথ পাড়ি দিয়ে যেতে হয় গাঢ় নীল জলের এই লেকে। তবে ১৫ একর জায়গা জুড়ে বিস্তৃত বাংলাদেশের সবচেয়ে উঁচু এই লেকের অপার সৌন্দর্য দেখে পথের ক্লান্তি দূর হয়ে যায় মুহূর্তেই। এখানে রাত কাটানোর সুব্যবস্থা আছে।

কেওক্রাডং ও তাজিনডং : রুমা বাজার থেকে ৫ কিলোমিটার দূরে কেওক্রাডংয়ের অবস্থান। তাজিনডং আবিষ্কৃত হওয়ার আগ পর্যন্ত এটাই ছিল বাংলাদেশের সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ। বর্তমান সর্বোচ্চ পর্বতশৃঙ্গ তাজিনডংয়ের অবস্থান রুমা বাজার থেকে ২৫ কিলোমিটার দূরে। উচ্চতায় দুই পর্বতের পার্থক্য থাকলেও সৌন্দর্যে কেউ কাউকে নাহি ছাড়ে। দু’টাই সমানে সমান।

প্রান্তিক লেক : বান্দরবান শহর থেকে ১৪ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-কেরানিহাট সড়কের পাশেই অবস্থিত ছায়াছন্ন এই অপূর্ব লেকটি। বান্দরবান বাসস্ট্যান্ড থেকে বাসে করে এখানে যেতে সময় লাগে এক ঘন্টার মতো।

12459668_859246090840721_1478499960_nলামা : বান্দরবান শহর থেকে ৯৮ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত নৈসর্গিক সৌন্দর্যমন্ডিত এ স্থানটি। প্রাকৃতিক সৌন্দর্যের পাশাপাশি মেডিটেশন সেন্টার-এর জন্য জায়গাটি সুপরিচিত। এছাড়াও এখানে রয়েছে পর্যটন স্পট মিকির ও মিরিঞ্জা। আর সেনাবাহিনী নির্মিত শিশুপার্কটিও সুপরিচিত। বান্দরবান থেকে দুপুর ২টায় পূর্বাণী পরিবহন ও ৩টায় চাঁদের গাড়ি ছেড়ে যায় লামার উদ্দেশে।

আলী সুড়ঙ্গ : লামা থেকে ৩০ কিলোমিটার দূরে রহস্যঘেরা এ সুড়ঙ্গে যাওয়ার একমাত্র বাহন চাঁদের গাড়ি। তবে এখানে যাওয়ার আগে পাহাড়বান্ধব জুতা, দা, লাঠি, ব্লিচিং পাউডার, লবণ সঙ্গে রাখতে ভুলবেন না।

নাইক্ষ্যংছড়ি : সীমান্তঘেঁষা এ উপজেলা শহরটিতে জারুলিয়াছড়ি ও নাইক্ষ্যংছড়ি লেক, বিজিবির দপ্তর, উপবন পর্যটন কেন্দ্র ছাড়াও রয়েছে ৬৫ হেক্টর ভূমির ওপর স্থাপিত গয়াল প্রজনন কেন্দ্র।

নীলগিরি রিসোর্ট : বান্দরবান থেকে প্রায় ৫৪ কিলোমিটার দূরত্বে অবস্থিত এ রিসোর্টটির মায়াবী সৌন্দর্য অনন্যসাধারণ। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ৭৬১ মিটার উঁচু এই পাহাড়ে দাড়িয়ে পাওয়া যায় মেঘ ছোঁয়ার এক স্বপ্নীল আবেশ। বন্ধুর পাহাড়ের সবুজের হাতছানিতে হারিয়ে যাবে আপনার চিত্ত। এখানে পর্যটকদের জন্য সেনাবাহিনী পরিচালিত একটি অবকাশ কেন্দ্র রয়েছে।

মেঘলা পর্যটন কমপ্লেক্স : শহরতলী থেকে মাত্র ৪ কিলোমিটার দূরে ৯০ একর ভূমির ওপর গড়ে তোলা হয়েছে এ পর্যটন কমপ্লেক্সটি। এখানকার কৃত্রিম লেক আর পাহাড়ের সৌন্দর্য মুগ্ধ করবে আপনাকে।

চিম্বুক পাহাড় : শহর থেকে ২৬ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত এই পাহাড়টি বান্দরবানের অন্যতম চিত্তাকর্ষক স্থান। সমুদ্রপৃষ্ঠ থেকে ২ হাজার ফুট উঁচু এ পাহাড়ের পাদদেশ থেকে দেখা যায় দূরের সৈকত।

12467855_859246167507380_477453672_nরাজবাড়ি : বান্দরবানে অবস্থিত বহু বছরের পুরোনো বোমাং রাজার বাড়িটি এখনো মুগ্ধ করে সবাইকে। প্রতিবছর শীতকালে এখানে রাজপূণ্যাহ মেলা বসে।

শৈলপ্রপাত- বনপ্রপাত : বান্দরবান থেকে ৮ কিলোমিটার দূরে চিম্বুক সড়ক পথে অবস্থিত শৈলপ্রপাতের অবিরাম জলধারা মুগ্ধ করে সবাইকে। এখানকার পর্যটন কেন্দ্র দুটিও দেখার মতো। মেঘলা পর্যটন কেন্দ্রে পথিমধ্যেই আমতলীতে অবস্থিত বনপ্রপাতটির সৌন্দর্যও মনোহর।

বৌদ্ধমন্দির : শহর থেকে ৪ কিলোমিটার দূরে বান্দরবান-চন্দ্রঘোনা সড়কের পুলপাড়ায় জাদির পাহাড়ে অবস্থিত অপূর্ব কারুকার্যময় এ মন্দিরটির অবস্থান। আকর্ষণীয় এ স্বর্ণমন্দিরটির নাম বুদ্ধধাতু জাদি। এগুলো ছাড়াও বান্দরবানে দেখার মতো আরো আছে জাদি পাহাড়, রাজবন বিহার, শঙ্খ নদী (সাংগু)সহ নানা কিছু।

কীভাবে যাবেন

ঢাকা থেকে সরাসরি বান্দরবানে যায় এস আলম সার্ভিস, ইউনিক বাস সার্ভিস, ডলফিন সার্ভিস, সৌদিয়া পরিবহন এবং শ্যামলী পরিবহন। এছাড়া যে কোনো বাস বা ট্রেনে চট্রগ্রাম এসে সেখান থেকে যাওয়া যায় বান্দরবান। চট্রগ্রাম থেকে বান্দরবানের বাসগুলো ছাড়ে বহদ্দারহাট থেকে। সকাল ৬টা থেকে সন্ধ্যা পর্যন্ত আধাঘণ্টা পরপরই বান্দরবানের উদ্দেশে ছেড়ে যায় পূর্বাণী, পূরবী, এবং পূবালী বাসগুলো। পোঁছতে সময় লাগে ২-৩ ঘণ্ট।

কোথায় থাকবেন

বান্দরবানে থাকার জন্য জায়গা হলো পর্যটন মোটেল। এখানে এসি, নন এসি দু’ধরনের কক্ষই পাবেন। মেঘল টুরিস্ট রিসোর্ট, গাইড ট্যুরসের হলিডে রিসোর্ট, গ্রীণ রিসোর্ট, মেঘলা, রুমা বাজার লামি হিল সাইড রিসোর্ট। এছাড়া শহরের ভেতরে রয়েছে হোটেল প্লাজা বান্দরবান, হোটেল পূরবী এবং হোটেল ফোর স্টার।

তথ্যঋণ: বিউটিফুল বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ট্যুরিস্ট গাইড।  favicon5

Sharing is caring!

Leave a Comment