প্রাচীন বাংলার রাজধানী দেখেছেন?

প্রাচীন বাংলার রাজধানী দেখেছেন?

  • ওমর ফারুক পিয়াস 

ঘোরাঘুরির মৌসুম চলছে। ফেসবুক খুললেই দেখা মিলছে অজস্র ভ্রমনছবি! বন্ধুরা কেউ গেছেন পাহাড়ে, কেউ গেছেন সমুদ্রে। হাওড় বাওড়, বন জঙ্গলও বাদ যাচ্ছে না। বাদ যাচ্ছে না ঐতিহাসিক কিংবা প্রত্নতাত্ত্বিক নিদর্শনও। এই সুযোগে ঘুরে আসতে পারেন প্রাচীন বাংলার রাজধানী থেকে।

ভাবছেন, সেটা আবার কোথায়? ঘাবড়ানোর কিছু নেই। প্রাচীন বাংলার রাজধানীর নাম পুণ্ড্রনগর। বর্তমান নাম মহাস্থানগড়।

মহাস্থানগড় হল প্রাচীন নগরী পুন্ড্রনগরের ধ্বংসাবশেষ। ‘মহাস্থান’ শব্দের অর্থ হলো ‘মহান পবিত্রতা’ এবং ‘গার’ মানে হলো দুর্গ। এটি ছিল মৌর্য, গুপ্ত এবং সেন রাজ্যের রাজধানী।

খ্রিস্টপূর্ব ২৫০০ অব্দে প্রতিষ্ঠিত এই প্রাচীন প্রত্নতাত্ত্বিক ও ঐতিহাসিক স্থানটি বগুড়া জেলার শিবগঞ্জ উপজেলায় অবস্থিত। এটি বগুড়া শহর থেকে প্রায় ১৮ কিমি উত্তরে করতোয়া নদীর পশ্চিম তীরে অবস্থিত। দর্শনীয় এই স্থানে একটি দুর্গযুক্ত ঘের রয়েছে। আর রয়েছে বেশ কয়েকটি বিচ্ছিন্ন গোবিন্দ ভীটা মন্দির, খোদায় করা পাথর, পরশুরামের প্রাসাদ ও জিয়ৎ কুন্ড দুর্গ শহরটিকে ঘিরে রেখেছে।  

খ্রিস্টপূর্ব প্রায় তৃতীয় শতাব্দীর এই প্রত্নতাত্ত্বিক স্থানটি এখন পর্যন্ত হিন্দুদের কাছে অত্যন্ত পবিত্র স্থান বলে বিবেচিত। শতাব্দীকাল ধরেই এটি মুসলিম, হিন্দু এবং সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণভাবে বৌদ্ধদের বাসস্থান ছিল। অষ্টম থেকে একাদশ শতাব্দী পর্যন্ত উত্তরবঙ্গের বৌদ্ধ পাল সম্রাটরা এই অঞ্চলে শাসন করেছিলেন।

মৌর্য রাজবংশের শাসকরা শহরটি প্রতিষ্ঠা করেছিলেন বলে বিশ্বাস করা হয়। এটি প্রাচীন বাংলায় নগরায়নের আদি নিদর্শন। এখানে খ্রিস্টপূর্ব তৃতীয় শতাব্দীর একটি ভাঙা চুনাপাথরের স্ল্যাব পাওয়া গেছে যেখানে ‘ব্রাহ্মী’ লিপিতে ‘পুন্ড্রনগর’ নামটি লেখা আছে।

সুরক্ষিত অঞ্চল পেরিয়ে, প্রায় ৪ কিমি মধ্যে আরও কিছু প্রাচীন ধ্বংসাবশেষ রয়েছে।  বিভিন্ন  দুর্গ প্রাচীরের বাইরে বিস্তীর্ণ এলাকা জুড়ে ছড়িয়ে আছে। এদের মধ্যে বৈরাগীর ভিটা, গোবিন্দ ভিটা, খোদার পাথর ভিটা, মানকালির কুণ্ড, পরশুরামের প্রসাদ, জিয়ৎ কুণ্ড, গদাইবাড়ি ধাপ, নরপতির ধাপ, গোকুল মেধ (লখিনদরের বাসর ঘর) এবং ভাসু বিহার উল্লেখযোগ্য।

হযরত শাহ সুলতান বলখী মাহিসাওয়ার একাদশ শতাব্দীর মুসলিম ধর্ম প্রচারক হিসেবে পুন্ড্রবর্ধন যা বর্তমানে পুন্ড্রনগর এবং সন্দ্বীপে ইসলাম প্রচার করেছিলেন। তিনি আফগানিস্তানের বলখ থেকে এসেছিলেন। তিনি মৃত্যুবরণ করেন মহাস্থানগড় বা পুন্ড্রনগরে। তার সমাধিস্থল সুলতান বলখির মাজার নামে পরিচিত। 

দুর্গের বেশ কয়েকটি প্রবেশদ্বার রয়েছে। উত্তরে রয়েছে কাটা দুয়ার, পূর্বে দোরব শাহ তোরণ, দক্ষিণে বুড়ির ফাতক এবং পশ্চিমে তামরা দাওয়াজা। দুর্গের ভিতরে অনেক আকর্ষণীয় ভবনের অবশিষ্টাংশ রয়েছে।  এর মধ্যে কিছু কাঠামো হল, বৈরাগীর ভিটা। এটি ছিল মহিলাদের জন্য প্রাসাদ আশ্রম। আশ্রমটি খ্রিস্টীয় চতুর্থ – পঞ্চম শতাব্দীতে নির্মিত।

এখানে আরও রয়েছে জিয়ৎ কুণ্ড। কিংবদন্তী মতানুসারে, এই কুণ্ড জীবন দান করার ক্ষমতা রাখত। প্রচলিত মিথটা এমন যে, রাজা পরশুরামের সঙ্গে শাহ সুলতান বলখির যুদ্ধের সময় মৃত সৈন্যদেরকে এই জল দিয়ে পুনরুজ্জীবিত করা হতো।

কীভাবে যাবেন

ঢাকার কল্যাণপুর থেকে হানিফ, শ্যামলি, গ্রীণ লাইন পরিবহনসহ অনেক বাস সার্ভিস আছে বগুড়া পর্যন্ত। এসব পরিবহনের ভাড়া লাগবে ৫শ থেকে১ হাজার টাকা পর্যন্ত। পাঁচ-ছয় ঘণ্টায় চলে যাওয়া যায় বগুড়া শহরে।

কোথায় থাকবেন

এখানে রাত্রিযাপনের জন্যে অনেক হোটেল রয়েছে। পর্যটন হোটেলেও থাকতে পারেন আপনি। পাশাপাশি রয়েছে কিছু মোটেলও। এগুলোর জন্য আগে থেকেই বুকিং দিয়ে যেতে হবে।

Sharing is caring!

Leave a Comment