মুন্সিগঞ্জে সুলতানী আমলের বাবা আদমের মসজিদ
- নাহিদ হাসান
বিক্রমপুরের ইতিহাসের কালের স্বাক্ষী সুলতানী আমলের শহীদ বাবা আদম মসজিদ। এটি মুন্সিগঞ্জ সদরের মিরকাদিম পৌরসভার দরগাহ বাড়ি অবস্থিত। মসজিদের মৌজা নং ২৫, দাগ নং ২৭২।
মসজিদে প্রাপ্ত শিলালিপি থেকে জানা যায়, সুলতান ফতেহ শাহের রাজত্বকালে ১৪৮৩ সালে মসজিদটি গড়ে তোলেন কাফুরশাহ। কাফুরশাহ ছিলেন বিক্রমপুরের তৎকালীন মহান শাসক। ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ। তৎকালিন বহু গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদ নির্মাণের যে ধারা বিকশিত হয়েছিল তার পরিপূর্ণ রুপ বিকশিত হয় এই ছয় গম্বুজ বিশিষ্ট মসজিদটিতে।
হযরত বাবা আদম প্রিয় নবী (সাঃ) এর শহর তায়েফের সন্তান। জন্ম ১০৯৯ খ্রিস্টাব্দে। হিজরত করেন বাগদাদে। একাদশ শতাব্দীতে চলে আসেন বাংলার সুলতানী আমলে। তখনকার শাসক ছিলেন রাজা বল্লাল সেন। রাজা বল্লাল সেনের সাথে যুদ্ধে শহীদ হোন। তার স্মৃতি ধরে রাখতে এই মসজিদটি নির্মিত হয়েছে।
এটি একটি আয়তাকার মসজিদ। যার উত্তর-দক্ষিণে এর আয়তন ৪৩ ফুট এবং পূর্ব-পশ্চিমে ৩৬ ফুট। এই মসজিদটি দরগাহ বাড়ি বা বাবা আদম মসজিদ নামে পরিচিত। মসজিদের চার কোণায় চারটি অষ্টকোণাকৃতির বুরুজ বা মিনার। মিনার ছাদের কার্ণিশের উপর উঠেনি।
মিনারের ধাপে ধাপে মনোরম বলয়াকারের স্ফীত রেখায় অলংকরণের কাজ আছে। পশ্চিম দেয়ালে তিনটি অর্ধবৃত্তাকার অবতল মেহরাব। প্রধান প্রবেশ পথের দুই পাশে গভীর সমতল কুলুঙ্গী। উপরিভাগ সুন্দরভাবে খাঁজকাটা। ঝুলন্ত শিকল ও ঘন্টার অলংকরণ রয়েছে। দেয়ালে আবির রঙের দশ থেকে পাচ ইঞ্চির ইট রয়েছে। মসজিদটির তিনটি মেহরাব এবং ইমানি পরশ মিশ্রিত আরবি লেখা রয়েছে।
কথিত আছে মুসলমান এবং হিন্দু সম্প্রদায়ের মহিলারা এই মসজিদে মানত হাসিলের জন্য রক্তবর্ণ ধারণ করেছিল। মসজিদের সন্নিকটে বাবা আদম শহীদের মাজার রয়েছে। ৫৩৭ বছর ধরে ঐতিহ্যের স্বাক্ষী হয়ে দাঁড়িয়ে আছে সুলতানী আমলের বাবা আদম মসজিদ।