ফিরে দেখা ২০১৫ : নতুন বছরে সামনে তাকাতে চায় জাবি
মুহাম্মদ আসাদুজ্জামান, সাভার : প্রত্যাশা, প্রাপ্তি, আন্দোলন, বিচার এমনই নানা ঘটন-অঘটন নিয়ে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় পার করল ২০১৫ সাল। বছরটি শুরু হয়েছিল জাতীয় নির্বাচন পরবর্তী বিএনপির আন্দোলন দিয়ে যার উত্তাপ এসে লাগে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসেও। পাশাপাশি পুরাতন বছরের শেষ সময়ে ছিল শিক্ষকদের ধর্মঘট ও ক্লাস বর্জন। ৬১ দিনের লম্বা ছুটি, তিন বিভাগের ভবন সংকট নিয়ে দীর্ঘ সময় ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন, আন্ত:কোন্দলে দুই বিভাগের ক্লাস-পরীক্ষা বন্ধ, সেশন জট ও দেরীতে ফল প্রকাশ, বাসে আগুন, উপাচার্যের বাসার সামনে ককটেল বিস্ফোরণ ইত্যাদি নানা ধরনের সহিংসতাও ছিল।
এছাড়া জুবায়ের হত্যা মামলার রায়, শিক্ষার্থী কর্তৃক সহকারী প্রক্টরকে শারীরিকভাবে লাঞ্ছিত, পুলিশ কর্তৃক সহকারী অধ্যাপককে লাঞ্ছিত, ৫ শিক্ষার্থীকে সাময়িক বহিষ্কার, একসঙ্গে ২৫ শিক্ষকের পদত্যাগ-নাটক, যৌন নিপীড়নের দায়ে এক প্রভাষক চাকরিচ্যুত এবং ৫ শিক্ষার্থীকে আজীবন বহিস্কার, প্রধানমন্ত্রীকে কটূক্তির দায়ে এক শিক্ষককে আদালত কর্তৃক তিন বছরের সশ্রম কারাদণ্ড, সিনেটের মেয়াদোত্তীর্ণ প্রতিনিধিদের সিন্ডিকেট ও অর্থ কমিটিতে মনোনয়ন দেওয়া, শিক্ষকদের অবসরের বয়সসীমা নিয়ে বিড়ম্বনা, প্রক্টরের সাথে ছাত্রলীগ নেতার মুঠোফোনে কথোপকথন ফাঁস ইত্যাদি ঘটনা ছিল উল্লেখ করার মতো। এসব ঘটনা কারণে শিক্ষা কার্যক্রমে অচলাবস্থার মধ্য দিয়েই বিদায় নেয় ২০১৫।
তবে পুরাতন বছরের প্রাপ্তিও কম ছিল না। সুষ্টূভাবে সম্পন্ন হয় বিশ্ববিদ্যালয়ের ৫ম সমাবর্তন, তৈরী হয় বিশ্ববিদ্যালয় পর্যায়ের প্রথম প্রজাপতি পার্ক ও গবেষণা কেন্দ্র, উদ্বোধন করা হয় দেশের প্রথম সফটওয়্যার টেস্টিং সেন্টার, তথ্য-প্রযুক্তি আঞ্চলিক বিতর্ক প্রতিযোগীতায় চ্যাম্পিয়ন, তিন শিক্ষার্থী কর্তৃক কোয়াডকপ্টার আবিষ্কার, বিশ্বের মর্যাদাপূর্ণ কম্পিউটার প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতা এসিএম আন্তর্জাতিক কলেজিয়েট প্রোগ্রামিং প্রতিযোগিতায় (আইসিপিসি) ঢাকা পর্বে চ্যাম্পিয়ন, ভিন্নধর্মী নববর্ষ উদযাপন ও মেলার আয়োজন, ১ম থেকে ৩৮ তম ব্যাচের প্রথম পুনর্মিলনী, সপ্তাহব্যাপী নাট্যপার্বন, জাতীয় বোটানিক্যাল সম্মেলনসহ বিভিন্ন ধরনের দেশীয় ও আন্তর্জাতিক সোমনার-সিম্পোজিয়ায়ের আয়োজন ছিল উল্লেখ করার মতো।
এসব সাফল্য-ব্যর্থতা থেকে শিক্ষা নিয়ে নতুন বছরে এগিয়ে যাওয়ার পরিকল্পনা করছেন প্রশাসনের কর্তারা। পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের নানা ধরণের সংগঠনও নতুন পরিকল্পনায় এগিয়ে যাওয়ার ব্যাপারে দৃঢ় প্রত্যয় ব্যক্ত করেছেন। নতুন বছরের পরিকল্পনা নিয়ে দি প্রমিনেন্ট ডটকমের সাথে কথা বলেন কয়েকটি সংগঠনের নেতৃবৃন্দ।বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যারিয়ার ক্লাবের সভাপতি মাসুদ রেজা জানান তার সংগঠনের পরিকল্পনার কথা- ‘এ বছর ব্যাটল আইডিয়া জেনারেশন, কর্পোরেট ট্রেইনিং ওয়ার্কশপ, ইয়ুথ লিডার সামিট, ক্যারিয়ার ভিত্তিক সেমিনার, নবীণ বরণ, জব ফেয়ার সহ বিভিন্ন ধরনের পোগ্রাম বাস্তবায়নের পরিকল্পনা রয়েছে আমাদের।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি এবং নতুন বছরের পরিকল্পণা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা বিগত বছর থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যাই। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের বিতর্ক সংগঠন গুলোর মধ্যে রয়েছে জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেট অর্গানাইজেশন (জেইউডিও), জাহাঙ্গীরনগর ইউনিভার্সিটি ডিবেটিং সোসাইটি (জেইউডিএস) সহ প্রায় প্রতিটি বিভাগেই রয়েছে বিতর্ক সংগঠন।
২০১৬ সালের পরিকল্পনা নিয়ে জেইউডিও’র সভাপতি শেখ রাহাত রহমান জানান, আমরা বিগত বছরের ন্যায় এবারও সারা বাংলাদেশে জাতীয় বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজনের চেষ্টা করবো। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ের অভ্যন্তরে বিভিন্ন বিতর্ক প্রতিযোগিতা আয়োজন করা হবে।’
অন্যদিকে জেইউডিএস’র সাফল্য ছিল চোখে পড়ার মতো। তথ্য-প্রযুক্তি আঞ্চলিক বিতর্ক প্রতিযোগীতায় জাহাঙ্গীরনগর থেকে চ্যাম্পিয়ন হন তারাই। বিতর্ক অঙ্গনে জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়ের মর্যাদা ও সুনাম আরো বৃদ্ধি করতে তাদের চেষ্টা অব্যাহত রাখার প্রত্যয় ব্যক্ত করেন সংগঠনটির সাংগঠনিক সম্পাদক পাভেল রহমান।
ক্যাম্পাসকে সবুজায়নে কাজ করছে ন্যাচারাল কনজারভেটিভ ইনিশিয়েটিভ (এনসিআই) নামক সংগঠন। বিভিন্ন সংগঠনের সহযোগিতায় বিশ্ববিদ্যালয়ে তাঁরা রোপণ করেছে প্রায় কয়েক হাজার নানা প্রজাতির বৃক্ষ। পরবর্তীতে আরও বৃক্ষ রোপণ করা হবে বলেও জানিয়েছেন সংগঠনের গুরুত্বপূর্ণ দায়িত্বে থাকা নেতৃবৃন্দ।
স্বেচ্ছায় রক্ত দানের সংগঠন ‘বাধঁন’-এর জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় ইউনিটের সাধারণ সম্পাদক জাহিদ আল ইসলাম লিয়ন জানান, ২০১৫ সালে তাঁরা প্রায় সাড়ে তিন হাজার রোগীকে রক্ত দানের ব্যবস্থা করেছে।এই ধারাবাহিকতা রক্ষা করতে চান তারা।
বিশ্ববিদ্যালয়ের দশটি সংগঠন নিয়ে গঠিত হয়েছে সমন্বিত সাংস্কৃতিক জোট। ২০১৬ সালে নতুন কার্যনির্বাহী পরিষদ দেওয়া এবং পাশাপাশি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাংস্কৃতিক ক্ষেত্রে যাতে আরো গতিশীলতা আসে সে জন্য নানা ধরনের উদ্যোগ গ্রহণের ইচ্ছা তাদের রয়েছে বলে জানান সংগঠনের সভাপতি জোবায়ের টিপু।
বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিবন্ধীদের সংগঠন ফিজিক্যালি চ্যালেঞ্জড ডেভেলপমেন্ট ফাউন্ডেশন (পিডিএফ) এর সাধারণ সম্পাদক সুমন আলী জানান- আমরা এবার প্রতিবন্ধী বান্ধব ক্যাম্পাস গড়ার লক্ষে প্রতিবন্ধী শিক্ষার্থীদের মাঝে হুইল চেয়ার বিতরণ, বিভিন্ন ধরনের ওয়ার্কশপ, অ্যাডমিশন কেয়ার ক্যাম্প, পরীক্ষা কেন্দ্রে আনা-নেওয়া, ক্যাম্পে থাকা দৃষ্টি প্রতিবন্ধীদের শ্রুতিলেখকের জন্য ডিন থেকে অনুমতির ব্যবস্থা করে দেওয়া, তাদের সিট খুঁজে দেওয়া, ভর্তি পরীক্ষার ফল জানিয়ে দেওয়াসহ বিভিন্ন ধরনের কাজ করব।
বিশ্ববিদ্যালয়কে বিজ্ঞানের রাজধানী করার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে ‘বিজ্ঞান ক্লাব’। সংগঠনটির ভাবনা নিয়ে সাধারণ সম্পাদক আবু সাইদ জানান- ‘সম্প্রতি আমরা শেষ করলাম গণিত অলিম্পিয়াড ২০১৫। এতে এ বছর বিজয়ীদরে নিয়ে ওয়ার্কশপ এবং দেশ সেরা বিজ্ঞানীদের পুরষ্কৃত করার পরিকল্পনা রয়েছে। এছাড়া প্রথম বারের মত ‘বিজ্ঞান মেলা’ করার কথাও জানান তিনি।
বিশ্ববিদ্যালয়ের সেচ্ছাসেবী সংগঠন জাবিস্বেপ এর সভাপতি রাকিব হায়দার বলেন-‘বছরের শুরুতে চলতি মাসে নবীন শিক্ষার্থীদের নিয়ে সচেতনতামুলক কিছু কাজ করার পরিকল্পনা নিয়েছি। এছাড়া বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিষ্কার-পরিচ্ছন্নতার অভিযান পরিচালনাসহ বেশ কিছু পরিকল্পনা রয়েছে।’
স্বেচ্ছাসেবী সংগঠন ‘স্যোসাল ওয়েলফেয়ার ক্লাব-আইবিএ-জেইউ’র সাধারণ সম্পাদক আ ফ ম আরিফুল ইসলাম বলেন- ‘নতুন বছরের শুরুতে শীতবস্ত্র বিতরণ, দরিদ্র ছাত্র-ছাত্রীদের মাঝে শিক্ষা উপকরণ বিতরণসহ শিক্ষাবৃত্তি চালু করার কাজ হাতে নিয়েছি। তবে রক্তদান, পরিষ্কার পরিচ্ছন্নতা অভিযান, বৃক্ষরোপনসহ নিয়মিত কাজগুলো চলবে বছর জুড়েই ।’
বিশ্ববিদ্যালয়ের সার্বিক পরিস্থিতি এবং নতুন বছরের পরিকল্পণা সম্পর্কে বিশ্ববিদ্যালয়ের উপ-উপাচার্য অধ্যাপক আবুল হোসেন বলেন, ‘আমরা বিগত বছর থেকে শিক্ষা নিয়ে সামনের দিকে এগিয়ে যেতে যাই। এজন্য সকলের সহযোগিতা প্রয়োজন।’