জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয় : এ যেন পাখিনগর…
আসাদুজ্জামান, সাভার : সবুজ প্রকৃতির মাঝে আঁকাবাঁকা প্রাকৃতিক জলাশয়ে ঘেরা নির্মল এক জায়গা জাহাঙ্গীরনগর বিশ্ববিদ্যালয়। যেখানে শিক্ষার্থীদের ঘুম ভাঙ্গে পাখির কিচির মিচির আওয়াজে। প্রতি শীতের মৌসুমের ন্যায় এবারও অতিথি পাখির কলকাকলিতে মুখর হয়ে উঠেছে এ ক্যাম্পাস।
লাল শাপলা ফোটা জলাশয়গুলোতে পাখির দল বেঁধে ওড়াউড়ির দৃশ্য যেন শেষই হয় না। এছাড়া পাখিদের সাঁতার কাটা, ডানা ঝাপটানো, অন্যের খুঁনসুটি, রোদে বসে শরীর শুকানোর নজরকাড়া দৃশ্য দর্শনার্থীদের মুখরিত করছে প্রতিনিয়ত। পাখির খুনসুটি আর অবিরত ডুব-সাঁতারে পাখিপ্রেমীদের আরও পুলকিত করে। এগুলো ফটোগ্রাফার আর ছেলে-বুড়ো সকলের কাছে হয়ে উঠে এক দর্শনীয় বস্তু। এইতো গত বছর এক ভোরে বাংলাদেশে নিযুক্ত মার্কিন রাষ্ট্রদূত ড্যান মজিনা এই পাখির ছোঁয়া পেতে হঠাৎ করেই জাহাঙ্গীরনগরের আঙিনায় পা রাখেন স্বপরিবারে।
বিশ্ববিদ্যালয়ে সবে মাত্র পা রাখা ৪৫ তম আবর্তনের শিক্ষার্থী জাহিদ ফয়সাল বলেন, ‘পাখিদের এ নগরে ভর্তি হতে পেরে ভালই লাগছে। আগে অনেক দূরে থেকে পাখি দেখতে আসতাম। আর আজ নিজের নগরেই পাখিদের দেখছি।’
গাছপালায় ঢাকা সবুজ এ ক্যাম্পাসের বুকে আছে ছোটবড় প্রায় ২২টি জলাশয়। বেশ কয়েকবছর ধরে এ জলাশয় গুলোকেই নিরাপদ আশ্রয়স্থল হিসেবে বেছে নিচ্ছে শীতের অতিথি পাখিরা। এর মধ্যে বোটানিক্যাল গার্ডেন ও সুইমিং পুলের মাঝের লেক, প্রশাসনিক ভবনের সামনে ও পেছনের দুটি জলাশয়, জাহানারা ইমাম হল, প্রীতিলতা হল এবং আল বেরুনী হল সংলগ্ন জলাশয়ে এবার বেশী পরিমাণ পাখির আনাগোনা দেখা যাচ্ছে।
প্রাণী বিদ্যা বিভাগের অধ্যাপক মোস্তফা ফিরোজ জানান, ‘এরা সবগুলো প্রকৃতপক্ষে ‘পরিযায়ী’ বা ‘মাইগ্রেটরি’ পাখি নয়। শুধু শীত কালে দেখা যায় বলে অনেকেই পরিযায়ী পাখি হিসেবে চিনে থাকে। এর মধ্যে আমাদের দেশীয় অতিথি পাখি বেশী রয়েছে। তিনি আরও বলেন, গত কয়েক বছরের তুলনায় এই বছর পাখি বেশি এসেছে যা শুভ লক্ষণ’।
জলাশয়ে হাঁসপাখি ‘পাতি সরালি’ই বেশিদেখা যায়। এছাড়া মাঝে মাঝে দেখা মিলবে ছোট পানকৌড়ি, ধলাবুক ডাহুক কিংবা পাতি পানমুরগির। তবে শীত বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে জলাশয়গুলোতে পাখির সংখ্যা ও প্রজাতি সাধারণত বেড়ে থাকে। এছাড়া মানিকজোড়, কলাই, ছোটনগ, জলপিপি, নাকতা, খঞ্জনা, চিতাটুপি, লাল গুড়গুটি, মুরগ্যাধি, কোম্বাডাক, পাতারি হাঁস, জলকুট, খয়রা প্রভৃতি পাখি সবার নজর কাড়ে।
পাখি বিশেষজ্ঞরা জানান, জাবিতে মূলত ১৯৮৬ সাল থেকে অতিথি পাখি আসতে শুরু করে। সাধারণত নভেম্বর থেকে ডিসেম্বর মাসে সাইবেরিয়া থেকে হাজার হাজার মাইল পথ পাড়ি দিয়ে এ অঞ্চলে আসে পাখিরা। ক্যাম্পাসে ৩০ থেকে ৩৫ প্রজাতির অতিথি পাখি আসে। ক্যাম্পাসে দু’ধরনের পাখি দেখা যায়। এক ধরনের পাখি জলাশয়ে এবং অন্য ধরনের পাখি গাছের ডালে অবস্থান নেয়। এদের অধিকাংশই হাঁস জাতীয়।
তবে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসনের প্রতি দাবি জানিয়ে পাখি বিশেষজ্ঞ ও প্রাণিবিদ্যা বিভাগের শিক্ষক কামরুল ইসলাম বলেন- ‘অতিথি পাখির বসার জন্য লেকগুলোয় মাছ চাষ বন্ধ এবং লেকের চারপাশে কাটাতারের বেড়া দিয়ে পাখিদের নিরাপত্তা দিতে হবে। যাতে পাখিদের কেউ বিরক্ত না করতে পারে।’
যদিও পাখিপ্রেমীদের ক্ষেত্রে ক্যাম্পাসের বিভিন্ন পয়েন্ট ও লেকের পাশে ব্যানারের মাধ্যমে বিভিন্ন নির্দেশনা জারি করা হয়েছে। তার বাস্তবায়ন করা দরকার বলে মনে করেন একাধিক শিক্ষার্থী।
এদিকে প্রতিবছরের মত এবারো বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রাণীবিদ্যা বিভাগের উদ্যোগে পাখি মেলা আয়োজনের চলছে প্রস্তুতি। আগামী ফ্রেব্রƒয়ারি মাসের প্রথম সপ্তাহে মেলা অনুষ্ঠিত হতে পারে বলে জানান বিভাগীয় কর্তৃপক্ষ।