প্রতিষ্ঠাবার্ষিকীর আনন্দযজ্ঞে
নাছিমুল হাসান নাহিদ: শীতের সকাল। ভোর ছ’টায় বিছানা ছাড়তে কি মন চায়! তবু উৎসবের টানে ঠিকই উঠতে হলো। ঠিক সাতটায় বাস ছাডবে মানিক মিয়া এভিনিউ থেকে। সারাদিনের জন্য নিজেকে প্রস্তুত করতে করতে সাড়ে ছ’টা বেজে গেল! ভোঁ দৌড় দিলাম মানিক মিয়া এভিনিউয়ের উদ্দেশে। ভাবতেই ভালো লাগছে, একটা দুইটা বাস না প্রায় সাড়ে তিনশো বাস অপেক্ষা করছে আমাদের জন্য। ধানমন্ডি ৩২ থেকে মানিক মিয়া এভিনিউ-রাস্তার দু’পাশে শুধু সারি সারি বাস!
বাসে উঠলাম সকাল সাতটায়। ৫মিনিট পরই বাস ছাড়ল। ভাবছেন, কেন এত বাস? যাচ্ছিইবা কোথায়? খোলাসা করি তাহলে, আমরা যাচ্ছি ড্যাফোডিল ইন্ট্যারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্থায়ী ক্যাম্পাস আশুলিয়াতে। ২৪ জানুয়ারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ফাউন্ডেশন ডে বা প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী। এই দিনকে কেন্দ্র করে সব শিক্ষার্থীদের নিয়ে স্থায়ী ক্যাম্পাসে যাওয়া হয়। এবার ছিল ড্যাফোডিলের ১৪তম প্রতিষ্ঠাবার্ষিকী।
ছাত্র, শিক্ষক, কর্মচারী মিলিয়ে প্রায় ১৮ হাজার মানুষ একসাথে যাচ্ছি। সবার মনেই উৎসবের আমেজ।
ঠিক সাড়ে আটটায় আমরা ভার্সিটির প্রধান ফটকের সামনে নামি। ভেতরে প্রবেশ করতেই চোখ জুড়িয়ে যায় সবুজ মাঠ দেখে। মাঠে অনেকগুলো স্টল। এখানে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিষয়ক নানা উপকরনের প্রদর্শনী চলছে। রয়েছে বিভিন্ন ক্লাব ও সংগঠনের স্টল। চলছে পিঠা উৎসব। একপাশে ভার্সিটির বিভিন্ন কর্মকাণ্ড নিয়ে চলছে ছবি প্রদর্শনী।
এসবে যাদের মন মজেনি তারা মেতেছে খেলায়। মাঠে চলছে নানা ধরনের খেলাধুলা। কেউবা ফুটবল, কেউবা ক্রিকেট আবার কেউবা মেতেছে আড্ডায়।
অন্যদিকে আকাশে উড়ছে ড্যাফোডিলের শিক্ষার্থী নাহিদ ফেরদৌসের ড্রোন। অনেক উপর থেকে পুরো ক্যাম্পাস এর ছবি নেওয়া হচ্ছে। সে দৃশ্য দেখে উচ্ছসিত সবাই।
‘মানুষ মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে। তোমাদের জীবনে স্বপ্ন দেখাটা কেবল শুরু। জীবনে বড় হতে হলে স্বপ্ন দেখতে হবে।’
ওদিকে আবার অডিটোরিয়ামে চলছে আলোচনা সভা। অনেকেই বিমোহিত হয়ে শুনছেন ড্যাফোডিল ট্রাস্টি বোর্ডের চেয়ারম্যান সবুর খানের বক্তব্য। তিনি তার বক্তব্যে বলেন, ‘বিশ্বের নামীদামী বিশ্ববিদ্যালয়ের মধ্যে শিক্ষা বিনিময়ের মাধ্যমে এ বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীরা বিশ্বমানের শিক্ষা লাভ করবে এবং আন্তর্জাতিক চাকরি বাজারে নিজেদের শিক্ষার মান যাচাইয়ের সুযোগ পাবে। ড্যাফোডিলের অধিকাংশ শিক্ষার্থীই ইতোমধ্যে স্বনামধন্য প্রতিষ্ঠানে উচ্চপদস্থ কর্মকর্তাসহ কর্মসংস্থানের সুযোগ পেয়েছে। ড্যাফোডিলের প্রাক্তন শিক্ষার্থীদের মধ্যে ৭০০ জন উদ্দ্যেক্তা হয়েছেন যারা ইতোমধ্যে পাঁচ হাজারেরও বেশি মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করেছেন।’ তিনি সবাইকে চাকরি না খুঁজে উদ্দ্যেক্তা হবার পরামর্শ দেন এবং এব্যাপারে সবাইকে সার্বিক সহযোগিতা করার কথা জানান।
এছাড়া অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি কর্পোরেশনের মেয়র আনিসুল হক। তাঁর বক্তব্যও অনুপ্রাণিত করেছে সবাইকে। তিনি বলেন, তিনি সকলের উদেশ্যে বলেন, ‘মানুষ মৃত্যুর পূর্ব মুহূর্ত পর্যন্ত স্বপ্ন দেখে। তোমাদের জীবনে স্বপ্ন দেখাটা কেবল শুরু। জীবনে বড় হতে হলে স্বপ্ন দেখতে হবে।’ তিনি ভাল মানুষের জীবনী ও ভাল বই পড়ার পরামর্শ দেন। ব্যক্তি জীবনের স্মৃতিচারণ করে বলেন, ‘আমার জীবনে অর্জনের পেছনে সবচেয়ে বড় শক্তি আমার মায়ের দোয়া।’ তিনি শিক্ষার্থীদের মা-বাবার ভক্তি এবং শিক্ষা গুরুদের সম্মান প্রদর্শনেরও পরামর্শ দেন।
এসব অনুপ্রেরণাদায় কথা শুনতে শুনতে কখন যে দুপুর হয়ে গেছে টের পাওয়া যায়নি। দুপুর গড়াতেই অডিটোরিয়ামে শুরু হয় সাংস্কৃতিক ক্লাবের আয়োজনে নাচ, গান, অভিনয়। চারিদিকে হই হুল্লোড। এক সময় জনপ্রিয় ব্যান্ড মাইলসের গানে দুলে উঠল সবাই।
সময় দ্রুত ফুরিয়ে যায়। সন্ধ্যা গড়িয়েছে অনেক আগেই। এবার ফেরার পালা। ফিরে যাচ্ছি ঢাকায় কিন্তু নিয়ে যাচ্ছি হাজারটা সুন্দর মুহূর্ত।