জলের কাব্য

জলের কাব্য

ফাহমিনা আন্না, জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয় : যদিও এদিন ফিরে আসবে না আর কোনোদিন, তবু ফিরে আসবে বারবার। চোখের সামনে আসবে না নির্ঘাত, কিন্তু মনের অতলে জলের মতো ঘুরে ঘুরে একা কথা কবে ঠিকই। দিনটি ছিল ৯ মার্চ। জগন্নাথ বিশ্ববিদ্যালয়ের আইন বিভাগের সব সেমিস্টারের শিক্ষার্থীর মনের ক্যানভাসে চিরদিনের জন্য খোদাই হয়ে গেছে দিনটি।

জলের ওপর ভেসে ভেসে কেটেছিল যেদিন সেদিন কী এত সহজে ভোলা যায়? স্মৃতির শুরু সকাল ৯টা থেকেই। সদরঘাট লঞ্চ টার্মিনালে অপেক্ষমাণ লঞ্চের ভেতর হইহই করে ঢুকে পড়ল সবাই। সঙ্গে ছিলেন বিভাগের শিক্ষকরাও। গন্তব্য চাদপুর।উদ্দেশ্য্, সারাটাদিন নদীপথে ভ্রমণ ।

লঞ্চ ছাড়ার একটু পরই দেখা গেল, আকাশ ও নদীর মিলনস্থল যেখানে সেখানে অবাক দৃষ্টিতে চোখ রেখে কেউ বসে আছেন জানালার পাশে, কেউ ছাদে আবার কেউবা কোনো এক কোণে গল্প আড্ডায় মেতে। ছাত্র- শিক্ষক সম্পর্কটাও সেদিন যেন পরিণত হলো বন্ধুত্বে। যাত্রাপথের পুরোটা সময় গানে গানে আনন্দে মাতিয়ে রাখলেন বন্ধুরা। ‘শ্রাবণের মেঘগুলো জড়ো হলো আকাশে’, ‘সেই মেয়েটি আমাকে ভালবাসে কিনা আমি জানি না’, ‘ভালো আছি ভালো থেকো আকাশের ঠিকানায় চিঠি লিখ’ ইত্যাদি গানের পর গান চলতে থাকল আন্না, আকাশ, বৈশাখী, আহসানসহ অনেক বন্ধুর কন্ঠে ।

দুপুর ৩ টা নাগাদ লঞ্চ থামল চাঁদপুরের সবুজঘেরা এক চরে । চারপাশে শুধু সবুজ আর সবুজ। সবুজের সমারোহে বন্ধুরা নিজেদের মধ্যে আনন্দে মেতে উঠলো। কেউ কেউ নদীতে ঝাঁপিয়ে পড়ল আবার কেউবা হারিয়ে গেল সবুজের বুকে। বাদ রইল না সেলফি তোলা। একক সেলফি, সম্মিলিত সেলফি… ক্লিক…ক্লিক চলতেই থাকল।

মধ্যাহ্নভোজের পর লঞ্চের মুখ ঘুরে এলো ঢাকার পানে। এসময় ছিল লাকি কুপনের ব্যবস্থা। ১০ টাকার বিনিময়ে যদি কপালে আইফোন জুটে যায় তাহলে মন্দ কি! তাই প্রবল উৎসাহে সকলে কুপন কিনলেন। ফলাফল ঘোষণার পর শিক্ষার্থীরা ফের মেতে উঠলেন নাচ ও গানে। বেলা গড়াতে লাগলো আর বন্ধুদের আনন্দ উৎসবও বাড়তে থাকল। একসময় শিক্ষকেরাও যোগ দিলেন নাচের সঙ্গে । তারপর শুধু নাচ আর নাচ । কেউ কেউ আবার লঞ্চের ছাদে গিটার বাজিয়ে গান করে উপভোগ করতে লাগলো সন্ধ্যার নদীর সৌন্দর্য। দিনশেষে সন্ধ্যার নদীর অসাধারণ প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখে বারবার মনে হচ্ছিল, সময় যদি এখানেই থেমে যেত!

ঘড়ির কাঁটা তখন ৮ এর ঘরে গিয়ে থেমেছে। নদী ছেড়ে আবার ফিরে যেতে হবে সেই যান্ত্রিক শহরে। অনেক ক্লান্ত থাকা সত্তেও কারো মধ্যে কোনো ক্লান্তি নেই। সারাটাদিনের এই সফর যেন খুব দ্রুতই ফুরিয়ে গেল। কিন্তু মনের মধ্যে রয়ে গেল রেশ। যেমনটা বলছিলেন আকাশ, ‘বিশ্ববিদ্যালয় জীবন যে এতটা আনন্দের হতে পারে তা হয়ত এই দিনটি আমার জীবনে না আসলে কখনো বুঝতেই পারতাম না।’ তাঁকে সমর্থন জানালেন বৈশাখী, ‘সবকিছু এতটাই আনন্দের ছিল যে শেষ কবে এতটা আনন্দ করেছি তা ঠিক মনে করতে পারছি না !’favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment