শুভ জন্মদিন, বাংলাদেশ!

শুভ জন্মদিন, বাংলাদেশ!

নিউজ ডেস্ক : আজ ১৬ ডিসেম্বর। মহান বিজয় দিবস। নয় মাসের রক্তক্ষয়ী সংগ্রামের মধ্য দিয়ে দুই যুগের পাকিস্তানি শাসনের অবসান ঘটিয়ে ১৯৭১ সালের এই দিনে বিশ্বের মানচিত্রে নতুন দেশ হিসেবে স্থান করে নিয়েছিল বাংলাদেশ। শুভ জন্মদিন, প্রিয় বাংলাদেশ!

বিজয়ের ৪৪ বছরে সরকারি-বেসরকারি নানা কর্মসূচির মধ্য দিয়ে এ মাটির মুক্তির জন্য প্রাণ দেওয়া ৩০ লাখ শহীদকে শ্রদ্ধাভরে স্মরণ করছে দেশবাসী।

দিবসটি উপলক্ষে বাণী দিয়েছেন রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ, প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, বিরোধীদলীয় নেতা রওশন এরশাদ ও বিএনপি চেয়ারপারসন খালেদা জিয়া।

বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ডাকে ১৯৭১ সালে মুক্তি সংগ্রাম শুরুর পর ১৬ ডিসেম্বর ঢাকার তৎকালীন রেসকোর্স (এখন সোহরাওয়ার্দী উদ্যান) ময়দানে মুক্তিবাহিনী ও ভারতের পূর্বাঞ্চলীয় সেনা কমান্ডের যৌথ নেতৃত্বের কাছে আত্মসমর্পণ করেন যুদ্ধে পাকিস্তানকে নেতৃত্ব দেওয়া লেফটেন্যান্ট জেনারেল আমীর আব্দুল্লাহ খান নিয়াজী।

নানা কারণে এবারের বিজয় দিবসকে ‘উজ্জ্বল-ব্যাতিক্রম’ বলে অভিহিত করছেন বিশ্লেষকরা। তার অন্যতম কারণ, চার দশক পর শুরু হওয়া যুদ্ধাপরাধের বিচার। যুদ্ধাপরাধের দায়ে ইতিমধ্যে চারজনের ফাঁসির রায় কার্যকর করেছে রাষ্ট্র।

সর্বশেষ গত ২২ নভেম্বর ফাঁসি হয় সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও আলী আহসান মো. মুজাহিদের, যারা বাংলাদেশের মন্ত্রী পর্যন্ত হয়েছিলেন। তাদের ফাঁসির পর এবারের বিজয় দিবস কিছুটা ভিন্ন মাত্রায় পালন করছে বিভিন্ন রাজনৈতিক, সামাজিক ও সাংস্কৃতিক সংগঠন।

বিজয় দিবসের কর্মসূচি শুরু হয় সকালে শেরেবাংলা নগরে জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে (পুরনো বিমানবন্দর) ৩১ বার তোপধ্বনির মধ্য দিয়ে। তারপরের কর্মসূচি আবর্তিত হয় সাভারে জাতীয় স্মৃতিসৌধে।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার স্মারকে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।
রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা স্বাধীনতার স্মারকে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

রাষ্ট্রপতি আবদুল হামিদ ও প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা সূর্যোদয়ের পরপরই স্বাধীনতার স্মারকে ফুল দিয়ে মুক্তিযুদ্ধে শহীদদের প্রতি শ্রদ্ধা জানান।

এর পর স্মৃতিসৌধ সাধারণের জন্য উন্মুক্ত করে দেওয়া হয়। মুক্তিযোদ্ধা থেকে শুরু করে বিভিন্ন রাজনৈতিক দল, সংগঠন ও ব্যক্তির শ্রদ্ধার ফুলে ভরে উঠতে থাকে স্মৃতিসৌধ।

নানা কর্মসূচিতে বিজয়ের এই দিন উদাযাপনের প্রস্তুতি নিয়েছে বাংলাদেশের স্বাধীনতা যুদ্ধে নেতৃত্বদানকারী দল আওয়ামী লীগ। বিজয় দিবস উপলক্ষে শোভাযাত্রাসহ বিভিন্ন কর্মসূচি রয়েছে বিএনপির। অন্যান্য রাজনৈতিক দলও বিজয় উদযাপনে কর্মসূচি ঘোষণা করেছে।

জঙ্গিবাদ প্রতিরোধের আহ্বানে ‘কোটি কণ্ঠে জাতীয় সংগীতের’ মাধ্যমে এবারের বিজয় দিবস উদযাপনের ঘোষণা দিয়েছে ‘বিজয় দিবস উদযাপন জাতীয় কমিটি’। বিকাল ৪টা ৩১মিনিটে সারা দেশে একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়া হবে, কেন্দ্রীয় কর্মসূচি হবে ঐতিহাসিক সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে।

এ বছর দেশের প্রতিটি জেলা-উপজেলা-ইউনিয়ন-গ্রামসহ বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানে বিকাল ৪টা ৩১মিনিটে একযোগে জাতীয় সংগীত গাওয়ার পাশাপাশি সারা বিশ্বে ছড়িয়ে থাকা বাংলাদেশিদের এ কর্মসূচিতে অংশ নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছে জাতীয় কমিটি।

১৯৭১ সালে সোহরাওয়ার্দী উদ্যানে পাকিস্তানের আত্মসমর্পণের সেই ক্ষণ এবারও উদযাপন করবে একাত্তরে রণাঙ্গনে বিভিন্ন সেক্টরে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দেওয়া কমান্ডারদের সংগঠন সেক্টর কমান্ডার্স ফোরাম।

বিজয় দিবস উপলক্ষে শিশু-কিশোর আনন্দ অনুষ্ঠানের আয়োজন করেছে মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর। সকাল ১০টায় এটি শুরু হবে। এছাড়া সন্ধ্যা ৬টায় যাত্রাপালা ‘আনারকলি’ পরিবেশন করবে যাত্রাদল ‘লোকনাট্য গোষ্ঠী’।

বিকাল ৩টা ৫০ মিনিটে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের কেন্দ্রীয় খেলার মাঠে বিশ্ববিদ্যালয় ও ছায়ানটের উদ্যোগে জাতীয় সংগীত গাইতে গাইতে পতাকা উত্তোলনের মাধ্যমে ‘বিজয় উৎসব’ উদযাপন হবে। ছায়ানট, সংগীত বিভাগসহ নবীন-প্রবীণ চার হাজার শিল্পী এতে অংশ নেবেন বলে আশা করছে বিশ্ববিদ্যালয় প্রশাসন।

বিকালে রাজধানীতে শোভাযাত্রা করার ঘোষণা দিয়েছে বিএনপি। বিকাল ৩টায় নয়া পল্টনের কেন্দ্রীয় কার্যালয়ের সামনে থেকে শোভাযাত্রা শুরু হবে বলে দলটি জানিয়েছে। বিজয় দিবস উপলক্ষে ১৮ ডিসেম্বর ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশনে আলোচনা সভার কর্মসূচিও রয়েছে দলটির।

সকাল ৯টায় প্রেসক্লাবে জাতির জনকের প্রতিকৃতিতে পুষ্পস্তবক অর্পণের মাধ্যমে বিজয় দিবসের কর্মসূচি পালন করবে জাতীয় প্রেসক্লাব।

বিজয় দিবসে সাধারণ ছুটির দিনে সব সরকারি, আধা-সরকারি, স্বায়ত্তশাসিত ও বেসরকারি ভবনে জাতীয় পতাকা উড়বে। প্রধান সড়ক ও সড়ক দ্বীপগুলো জাতীয় পতাকা ও রং-বেরংয়ের পতাকায় সজ্জিত হবে। বিভিন্ন গুরুত্বপূর্ণ ভবন ও স্থাপনায় হবে আলোকসজ্জাও।

দিবসের তাৎপর্য তুলে ধরে সংবাদপত্রগুলো প্রকাশ করছে বিশেষ ক্রোড়পত্র। বেতার ও টেলিভিশনেও হবে বিশেষ অনুষ্ঠানমালা।favicon

Sharing is caring!

Leave a Comment