বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের ৩২ ভাগ শিক্ষক খণ্ডকালীন
- নিউজ ডেস্ক
দেশের বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে এখনও বিপুলসংখ্যক শিক্ষক খণ্ডকালীন হিসেবে কর্মরত। শতকরা হিসাবে এ সংখ্যা মোট শিক্ষকের ৩২ ভাগের বেশি। ২০১৪ সালের তুলনায় ২০১৫ সালে খণ্ডকালীন শিক্ষক আরও বেড়েছে। বিশ্ববিদ্যালয় মঞ্জুরি কমিশনের (ইউজিসি) ৪২তম বার্ষিক প্রতিবেদনে এ তথ্য পাওয়া গেছে। চলতি বছরের সেপ্টেম্বরে এ প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়।
শিক্ষাবিদদের মতে, খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা যত কমবে, শিক্ষার সার্বিক মানও তত বাড়বে। এ জন্য দীর্ঘমেয়াদি পরিকল্পনার আলোকে শিক্ষক তৈরির দিকে সরকারের নজর দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করেন তারা।
ইউজিসির তথ্যমতে, ২০১৫ সালে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে শিক্ষক ছিলেন ১৫ হাজার ৫৮ জন। এটি ২০১৪ সালের তুলনায় ৮৩৩ জন বেশি। এর মধ্যে পূর্ণকালীন শিক্ষক ১০ হাজার ১৮৮, যা এর আগের বছরের তুলনায় ৭৬১ জন কম। মোট খণ্ডকালীন শিক্ষক ৪ হাজার ৮৭০, যা আগের বছরের তুলনায় ৭৮ জন বেশি। এসব শিক্ষকের মধ্যে অধ্যাপক এক হাজার ৪১০, সহযোগী অধ্যাপক ৭৬৮, সহকারী অধ্যাপক ৯১৭, প্রভাষক এক হাজার ৫১৭ ও টিচিং অ্যাসিসট্যান্ট ২৫৮ জন।
নতুন অনুমোদিত তিনটিসহ বর্তমানে মোট ৯৭টি বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় রয়েছে। এর মধ্যে ৮৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ে খণ্ডকালীন শিক্ষকের এই সংখ্যার ব্যাপারে ইউজিসির প্রতিবেদনে সন্তোষ প্রকাশ করা হয়েছে। সেখানে বলা হয়েছে, “বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয় আইন ২০১০ এর ৩৫ (৩) ধারা অনুসারে, ‘কোনো বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের প্রতিটি বিভাগ বা প্রোগ্রামের খণ্ডকালীন শিক্ষক সংখ্যা পূর্ণকালীন শিক্ষক সংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি হবে না’। এই নীতি অনুযায়ী ৮৫টি বিশ্ববিদ্যালয়ের সর্বমোট শিক্ষকের ক্ষেত্রে পূর্ণকালীন ও খণ্ডকালীন শিক্ষকের অনুপাত সন্তোষজনক।”
পূর্ণকালীন শিক্ষকের চেয়ে খণ্ডকালীন পিএইচডি ডিগ্রিধারী শিক্ষকের সংখ্যা বেশি। পূর্ণকালীন পিএইচডিধারী শিক্ষক বেশি হলে শিক্ষার্থীরা বেশি উপকৃত হবে বলে ইউজিসি মনে করে।
এসব ব্যাপারে ব্র্যাক বিশ্ববিদ্যালয়ের উপাচার্য অধ্যাপক ড. সৈয়দ সাদ আন্দালিব বলেন, কোনো শিক্ষা প্রতিষ্ঠানের জন্যই খণ্ডকালীন শিক্ষক ভালো নয়। বেশিরভাগ ক্ষেত্রে নিয়মিত শিক্ষকদের মতো শিক্ষার্থীদের প্রতি এসব শিক্ষকের কমিটমেন্ট থাকে না। এটাকে জব হিসেবে মনে করে তারা আসেন, পড়ান, চলে যান। তিনি বলেন, দেশে যে পরিমাণ বিশ্ববিদ্যালয় বেড়েছে, সে অনুপাতে শিক্ষক বাড়েনি। কোনো কোনো বিষয়ে বিশেষজ্ঞ শিক্ষক খুঁজে পাওয়া যায় না। তখন বাধ্য হয়ে ওই বিষয়ে যিনি ‘নাম’ করেছেন, তাকে খণ্ডকালীন হিসেবে নিয়োগ দেওয়া হয়।
এ বিষয়ে সামগ্রিক সমাধান প্রয়োজন উল্লেখ করে ‘জার্নাল অব বাংলাদেশ স্টাডিজে’র এই সম্পাদক বলেন, দেশে নতুন গ্র্যাজুয়েটরা শিক্ষক হিসেবে নিয়োগ পান। ‘কীভাবে পড়াতে হবে’ সে বিষয়ে তাদের পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ থাকে না। তাই শিক্ষক তৈরির দিকে সরকারকে নজর দিতে হবে।
এদিকে গত বছরের তুলনায় বেড়েছে নারী শিক্ষক। প্রতিবেদনে বলা হয়, নারী শিক্ষক রয়েছেন ৪ হাজার ৪৮০, যা আগের বছরের তুলনায় ৪৭৯ জন বেশি। ইউজিসি মনে করে, প্রতি বছর নারী শিক্ষার্থীর সংখ্যা বাড়লেও শিক্ষক সংখ্যা আশানুরূপ বাড়ছে না। আবার পিএইচডিধারী শিক্ষক খুব কম।
শিক্ষক-শিক্ষার্থী অনুপাত কাঙ্ক্ষিত মানে নেই ৯ বিশ্ববিদ্যালয়ে : ইউজিসি জানিয়েছে, গড়ে বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে ২৩ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। এর আগের বছরেও একই অনুপাত ছিল। এটাকে সন্তোষজনক হিসেবে আখ্যা দেওয়া হয়েছে। তবে নয়টি বিশ্ববিদ্যালয়ে এ অনুপাত কাঙ্ক্ষিত ছিল না। এর মধ্যে সর্বাধিক ৭৫ জন শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছে সিটি ইউনিভার্সিটিতে। চট্টগ্রামের বিজিসি ট্রাস্ট বিশ্ববিদ্যালয়ে প্রতি ৫০ শিক্ষার্থীর জন্য একজন শিক্ষক রয়েছেন। এ ছাড়া প্রেসিডেন্সি ইউনিভার্সিটি, সিলেট ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি, বাংলাদেশ ইউনিভার্সিটি, দারুল ইহসান বিশ্ববিদ্যালয়, এশিয়ান ইউনিভার্সিটি অব বাংলাদেশ, বাংলাদেশ ইসলামী বিশ্ববিদ্যালয় এবং ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি অব বিজনেস অ্যাগ্রিকালচার অ্যান্ড টেকনোলজিতে শিক্ষক-শিক্ষার্থীর অনুপাত কাঙ্ক্ষিত মানে নেই।
এসব ব্যাপারে ইউজিসির সদস্য অধ্যাপক ড. দিল আফরোজা বেগম বলেন, যেসব বেসরকারি বিশ্ববিদ্যালয়ের বয়স ১০ বছর পেরিয়েছে, সেসব ক্ষেত্রে খণ্ডকালীন শিক্ষকের সংখ্যা ঠিক আছে। তবে ৫-৭ বছর আগে চালু হওয়া প্রতিষ্ঠান এখনও কাঙ্ক্ষিত মানে আসেনি। তবে পূর্ণকালীন শিক্ষক বাড়াতে চাপ দেওয়া হচ্ছে বলে তিনি জানান।