ফুলের মেলায় যার কাছে যাই…
আতিকুর রহমান, রাজশাহী : ফুলকে ধরা হয় বিশুদ্ধতা আর প্রবিত্রতার প্রতিক হিসেবে। আর হাজার প্রজাতির ফুল যদি চোখের সামনে থাকে তাহলে তা দেখে মুগ্ধ হবেন না এমন মানুষ হয়তো খুঁজে পাওয়া মুশকিল। তাইতো বাহারি জাতের গোলাপ, ডালিয়া আর চন্দ্রমল্লিকায় ভরে উঠেছে স্টল, রয়েছে রজনী গন্ধা, সাদা পাঁপড়ি, গাঁদা আর সূর্যমুখীও। হরেক জাতের ক্যাকটাস আর বাগান বিলাস সাজানো রয়েছে থরে থরে। বলছিলাম রাজশাহীতে চলা ‘পুষ্প মেলা’র কথা।
মেলায় ঢুকে চারিদিকে তাকাতেই মনে হবে এটা মেলা নয়, যেন ফুলের রাজ্য। আর ছোট বড় সব বয়সী মানুষের ভীড় সেখানে। কেউ দেখছে, কেউ কিনছে আবার কেউবা এগুলোর সৌন্দর্য উপভোগে ব্যস্ত।
নানা রঙের আর ধরনের শত শত প্রজাতির ফুল নিয়ে গতকাল (১৫ জানুয়ারি) থেকে রাজশাহীতে শুরু হয়েছে তিন দিনব্যাপী পুষ্পমেলা। নগরীর সিঅ্যান্ডবি মোড় সংলগ্ন মনিবাজার চত্বরে আয়োজিত মেলায় আজ ছুটির দিনে ছিল পুষ্পপ্রেমীদের উপচে পড়া ভিড়। ‘ওয়ান ব্যাংক পুষ্পমেলা ২০১৬’ শিরোনামে এর আয়োজন করেছে রাজশাহীর ঐতিহ্যবাহী বৈকালী সংঘ। পুষ্প প্রদর্শনী ছাড়াও মেলায় শিশুদের মাঝে আবৃত্তি, নৃত্য এবং চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগতাসহ সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে ।
মেলার স্টল গুলোর মধ্যে সবচেয়ে আকর্ষন কাড়ছে স্টার গার্ডেন। স্টলে যেতেই চোখ আটকে যায় বাহারি ধরনের গোলাপে। স্টলের স্বত্তাধিকারী ফজলে জাকির জানালেন, তার দোকানে রয়েছে প্রায় ১২০ ধরনের গোলাপ। এগুলোর নাম ও রং যে বাহারি তা দেখেই বোঝা যায়। প্রিন্সেস বি মোনাকো, প্যারাডাইজ, হ্যাভেন, কাসমেরি, চেঞ্চার, ডার্ক নাইটসহ এমন বাহারি রঙ ও প্রজাতির গোলাপ গাছ রয়েছে এখানে । এগুলো তারা বিক্রি করছেন চার’শ থেকে দেড় হাজার টাকায়। দোকানে আরও রয়েছে ১০ প্রজাতির বিভিন্ন বাগান বিলাস। যেগুলো বিক্রি হচ্ছে তিন’শ থেকে এক হাজার ছ’শ টাকায়। ফজলে জাকির বলেন, প্রতি বছর মেলায় আসি। নতুন পুরাতন মিলে অনেক মানুষের সাথেই পরিচয় হয় এখানে। বিক্রি যাই হোক বিষয়টা আমাদের সবার বেশ ভাল লাগে।
মেলায় ঘুরতে আসা নগরীর তালাইমারি এলাকার ফরিদ আকতার বলেন, নিজের শহরে পুম্প মেলার এমন আয়োজনে বেশ মুগ্ধ তিনি। তাই প্রকৃতির এই বিশেষ জিনিসটির স্বাদ নিতে পরিবার পরিজন নিয়ে ছুটে এসেছেন। তিনি বলেন, সবার মাঝে যদি ফুলের সৌরভ ছড়িয়ে দেয়া যায়, তাহলে পৃথিবী থেকে হিংসা বিদ্বেষ মুছে ফেলা সম্ভব।
স্টার গার্ডেনের মতো আরো ১৭টি দোকান রয়েছে মেলায়। সেগুলোতেও শোভা পাচ্ছে রং বেরংয়ের নানা প্রজাতির ফুল। দোকান মালিকদের সাথে কথা বলে জানা যায়, প্রায় প্রতিবছরই তারা এ মেলায় আসেন। মেলায় আগত দর্শনার্থী এবং বিক্রি ভাল হওয়ায় বেশ খুশি তারা। আয়োজকরাও বেশ সহযোগিতা করছেন বলে জানান তারা।
মেলার সার্বিক বিষয় নিয়ে কথা হয় আয়োজক বৈকালী সংঘের সাধারণ সম্পাদক রইস উদ্দিন আহমেদ বাবুর সাথে। তিনি বলেন, এটি তাদের দশম আয়োজন । প্রতিবছর এই পুষ্পমেলার জন্য অপেক্ষায় থাকে রাজশাহীবাসী, এটি তাদের একটি প্রানের মেলাই বটে। এসময় তিনি দ্যা প্রমিনেন্টকে জানান, রাজশাহীতে এটা শুধু পুষ্পমেলা-ই নয়, পুষ্পপ্রেমীদের কাছে এটি একটি মিলনমেলা। পাশাপাশি এই মেলা দোকানিদের ফুল বিক্রি ও প্রচারের স্থান হিসেবে কাজ করে।
তিনি আরো জানান, গতবছরের চেয়ে এবার মেলার আয়োজন আরো বড় পরিসরে করা হয়েছে। এবার মেলায় রাজশাহীর বিভিন্ন স্থান থেকে আসা ১৮টি স্টল স্থান পেয়েছে।
মেলার পাশাপাশি গতকাল শিশুদের মাঝে চিত্রাঙ্কন প্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হয়। আজ শিশুদের আবৃত্তি প্রতিযোগিতা হয় এবং আগামীকাল নৃত্যপ্রতিযোগিতা অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়াও ঐদিন মেলার সমাপনীতে মনোজ্ঞ সাংস্কৃতিক এবং পুরস্কার বিতরনী অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়েছে।