বট-পাকুরের বিয়ে !
নিউজ ডেস্ক : বর – কনে দুজনেই বৃক্ষ। বট-পাকুরের বিয়ে। একই টবে লাগানো ১৪ বছর বয়সী পাকুর গাছকে সাজানো হয় বর হিসেবে, আর কনের সাজে ১২ বছর বয়সী বটগাছ। হিন্দুশাস্ত্র মতে বিয়ের সব আয়োজনই ছিল। নিমন্ত্রণপত্র বিতরণ, গায়ে হলুদ দেওয়া, সানাই বাজা, শাঁখ বাজা, উলু ধ্বনি দেওয়া, বড় বড় হাড়িতে রান্না, অতিথি আপ্যায়ন কিছুই বাদ ছিল না এই বিয়েতে। বগুড়া শহরের দত্তবাড়ি এলাকার বেণীকুণ্ডু এলাকার সবিতা পোদ্দারের বাড়িতে এই বিয়েটি হয়।
বরের নাম মানসপুত্র সার্থক কুণ্ডু এবং কনে মানসকন্যা লাবণ্য পোদ্দার। লাল শাড়ি পড়ে মাথায় হলুদ টোপর দিয়ে বউ লাবন্য (বটগাছ) পাশেই সাদা ধুতি ও সাদা টোপরে দাড়িয়ে আছে বর সার্থককুণ্ডু পল্লব (পাকুরগাছ)। ওদের বিয়ের লগ্ন ছিল সন্ধ্যায়। আমন্ত্রিত অতিথিরা সকাল হতে না হতেই সেই বিয়েবাড়িতে ভিড় জমাতে শুরু করেন।
শনিবার সন্ধ্যার পর পরই বট-পাকুরের আবাসস্থল স্বপ্নের নীড়-এর রঙিন বাতিগুলো জ্বলে ওঠে একসঙ্গে। বাজে সানাই, সঙ্গে ঢোল। শুরু হয় বিয়ের আনুষ্ঠানিকতা। রোববার বাসি বিয়ে শেষে এই বর-বউয়ের দীর্ঘায়ুর জন্য তাদের স্থাপন করা হবে দত্তবাড়ির পেছনে করতোয়া সংলগ্ন কালীমন্দিরে।
এরআগে শনিবার দুপুরে শহরের দত্তবাড়ী বেনীকুণ্ডু লেনের স্বপ্নের নীড়’-এ ছিল বর ও কনের গায়ে হলুদের অনুষ্ঠান। গায়ে হলুদ অনুষ্ঠানে হাজির ছিলেন ৩ শতাধিক নারী-পুরুষ। এসেছিল শিশুরাও। রাতে বিয়ের প্রীতিভোজে নিমন্ত্রিত অতিথি ছিলেন প্রায় পাঁচশ।
বগুড়া শহরের দত্তবাড়ী বেণীকুণ্ডু লেনের স্বপ্নের নীড় বাড়িটির মালিক সবিতা পোদ্দার জানান, ১৪ বছর আগে তিনি টবে পাকুর গাছের চারা রোপণ করেন। এর দু’বছর পর ওই একই টবে বটগাছের চারা লাগান। তিনি নিয়মিত ওদের পরিচর্যা করার পাশাপাশি পূজা-অর্চনাও করে আসছেন। এরই মাঝে একসময় দুটি গাছ একে অন্যকে জড়িয়ে ধরে বেড়ে ওঠে ।
গাছ দুটিকে বিয়ে দেওয়ার কারণ সম্পর্কে সবিতা পোদ্দার বলেন, ‘ওরা একে অন্যকে যেভাবে জড়িয়ে ধরেছে, তাতে মনে হচ্ছে, ওরা এখন দেব-দেবী। ওরা আর টবে থাকতে চাচ্ছে না। তাই ওদের বিয়ে দিয়ে অন্যত্র স্থাপন করতে হবে।’ যে কোন অমঙ্গল থেকে রক্ষা পেতেই এই বিয়ের আয়োজন বলেও জানান সবিতা পোদ্দার।
রোববার (৭ ফেব্রুয়ারি) দুপুর ১২টায় বাসি বিয়ের পর করতোয়া নদী তীরবর্তী কালীমন্দিরের পাশে বর-কনে (বট-পাকুর) কে একসঙ্গে স্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।