অদম্য আনোয়ার
বিশেষ প্রতিনিধি : অদম্য ইচ্ছা শক্তি, মেধা আর শ্রম দিয়ে জয় করা যায় শারীরিক প্রতিবন্ধকতাও। তাঁরই অনন্য নজির আনোয়ার হোসেন। সড়ক দুর্ঘটনায় ডান পা হারিয়েও তিনি দিব্যি প্রতিদিন মোটরসাইকেলে চালিয়ে ১০ কিলোমিটার দূর থেকে দোকানের মালামাল জেলা শহর থেকে বহন করে চলেছেন। ডান পা দিয়ে নয় হাত দিয়েই চলছে তাঁর মোটরসাইকেলের ইঞ্জিন। ব্যস্ত রাস্তায় ব্রেক কষতেও সমস্যা হয় না তাঁর। অদ্যম এই জীবন সৈনিকের দেখা মিলবে গাইবান্ধার সাদুল্যাপুর উপজেলার বদলাগাড়ি গ্রামে। দোকানে যানবাহনের ইঞ্জিনের খুচরা যন্ত্রাংশ বিক্রির ও ঝালাইয়ের কাজ করে কেবল তিনিই স্বাবলম্বী নন, তাঁর দোকানে কাজ করে স্বাবলম্বী আরও পাঁচজন শ্রমিক কর্মচারী।
আনোয়ার হোসেনের সঙ্গে কথা বলে জানা যায়, সাদুল্যাপুর পাইলট উচ্চবিদ্যালয় থেকে ১৯৯৪ সালে এসএসসি ও গাইবান্ধা সরকারি কলেজ থেকে ১৯৯৭ সালে এইচএসসি পাস করেন তিনি। এরপর শত চেষ্টা করেও চাকরি জোটেনি। তাই নিজেই কিছু করার ইচ্ছা নিয়ে ২০০০ সালে জায়গা ভাড়া নিয়ে পার্শ্ববর্তী ইদ্রাকপুর বাজারে ঝালাই কাজের দোকান দেন। সব ভালোই চলছিল কিন্তু হঠা ছন্দ পতন হয়। ২০০৩ সালের ১১ মার্চ তিনি সড়ক দুর্ঘটনায় শিকার হন। কেটে ফেলতে হয় ডান পায়ের প্রায় অর্ধেক অংশই। ফলে বাধ্য হয়েই ব্যবসা বন্ধ রাখতে হয়। প্রায় দুই বছর পর সিদ্ধান্ত নেন হাত দিয়েই চালাবেন মোটরসাইকেল।
সততা আর নিষ্ঠা নিয়ে গড়ে তোলা ব্যবসা প্রতিষ্ঠানের নাম দেন ‘সততা মেশিনারিজ অ্যান্ড ইঞ্জিনিয়ারিং ওয়ার্কশপ’। বর্তমানে দোকান থেকে আয় হয় প্রতিমাসে প্রায় তিরিশ হাজার টাকা। দোকানের উপার্জন থেকেই ক্রয় করেছেন এক বিঘা জমি। বর্তমানে দোকানে মালামালের পরিমাণও দশ লক্ষ ছাড়াবে। সাত জনের সংসারে যেন সুখের শেষ নেই বলেও জানান তিনি। আর তাঁর এই সুখের পূর্ণতা হিসেবে মিলেছে সামাজিক মর্যাদাও। চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে ব্যবস্থাপনা কমিটির সদস্য নির্বাচিত হয়েছেন ইদ্রাকপুর উচ্চবিদ্যালয় ব্যবস্থাপনা কমিটির।
আনোয়ার সম্পর্কে উচ্ছস্বিত প্রশংসা করে ইদ্রাকপুর উচ্চবিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক মনোরঞ্জন সরকার বলেন, ‘বিদ্যালয়ের সামনেই আনোয়ারের ব্যবসা প্রতিষ্ঠান। তিনি খুবই পরিশ্রমী। তাঁকে কখনো বসে থাকতে দেখিনি। তিনি এলাকাবাসীর গর্ব।’
শারীরিক প্রতিবন্ধকতা সম্পর্কে জানতে চাইলে আনোয়ার হোসেন বলেন, ‘ডান পা ছাড়াই প্রায় ১১ বছর ধরে মোটরসাইকেলে মালামালও বহন করছি। পা নেই বলে তেমন কোনো সমস্যাই মনে হয় না আমার।’ যে কোনো প্রতিবন্ধকতা জয় করতে মনোবলই যথেষ্ট বলেও মনে করেন তিনি।
ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, ‘ব্যবসাটা আরও বড় করতে চাই, পাশাপাশি সামাজিক উন্নয়নমূলক কাজেও যুক্ত থাকতে চাই।’
‘সড়ক দুর্ঘটনার পর দুশ্চিন্তায় ভেঙ্গেই পড়েছিলাম পরিবারের নিয়ে কিন্তু আমার স্বামী নিজ চেষ্টায় পরিবারে স্বচ্ছলতা ফিরিয়ে এনেছে।’ নিজের স্বামী সম্পর্কে এভাবেই বলছিলেন আনোয়ারের স্ত্রী হাসিনা বেগম।