অনিক-হৃদয়ের সাফল্যে ফেনীজুড়ে আনন্দ
- জোবায়ের চৌধুরী, ফেনী থেকে ফিরে
আওয়ামীলীগ-বিএনপির পাল্টা কর্মসূচির দিনে প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফেরার পথে দুর্বৃত্তের ছোড়া বোমার আঘাতে গুরুত্বর আহত ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের শিক্ষার্থী মিনহাজ উদ্দিন অনিক ও শাহরিয়ার হৃদয় জিপিএ-৫ পেয়েছে। এই দুই শিক্ষার্থীর সাফল্যের বাধভাঙা আনন্দ শুধু পরিবারের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকেনি। তা ছড়িয়ে পড়েছে তাদের স্কুল, এলাকাসহ সমগ্র ফেনীর লোকমুখে।
গুরুত্বর অসুস্থ থাকায় এক বছর পিছিয়ে পড়লেও অদম্য আগ্রহ আর একাগ্রচিত্তে পড়ালেখা করে সাফ্যলে পৌছেছেন ডান চোখ হারানো এই দুই শিক্ষার্থী।
গত ৯ এপ্রিল ফল প্রকাশের পর দুই পরিবারে আনন্দ ছড়িয়ে পড়ে। এই দুই শিক্ষার্থীর সাফল্যের খবর গণমাধ্যমে আসলে তা আরও ছড়িয়ে পড়ে ফেনীজুড়ে।
ফেনী সরকারি পাইলট উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক হোসনে আরা বেগম বলেন, ‘বিজ্ঞান বিভাগে অংশ নেওয়া মিনহাজ উদ্দিন অনিক ও শাহরিয়ার হৃদয়ের সাফল্যে আমরা আনন্দিত। অদম্য আগ্রহ আর একাগ্রচিত্তে পড়ালেখার কারণেই সাফল্যের চূড়ায় পৌঁছেছে তারা। তাদের উজ্জ্বল ভবিষ্যৎ কামনা করি।’
২০১৫ সালের ৫ জানুয়ারি ২০ দলীয় জোটের ‘গণতন্ত্রের পুনরুদ্ধার’ ও আওয়ামী লীগের ‘গণতন্ত্রের বিজয় দিবস’ কর্মসূচির দিন বিকালে প্রাইভেট পড়ে বাসায় ফেরার সময় দুর্বৃত্তের বোমার আঘাতে দুই শিক্ষার্থীর ডান চোখ নষ্ট হয়ে যায়। পরে এ বিষয়ে সংবাদ প্রকাশিত হলে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সহযোগিতায় ভারতে গিয়ে তিন দফা চিকিৎসা নেয় তারা।
গত বছর তার সহপাঠীরা যখন পরীক্ষার প্রস্তুতি নিচ্ছিল সে সময় তারা আহত অবস্থায় ঘরে বসে ডুকরে কেঁদেছিল। পরীক্ষার ফল প্রকাশের পর তার বিদ্যালয়ের ছাত্ররা যখন উল্লাস করেছে, তখন অনিক ও হৃদয়ের সেই দৃশ্য দেখা ছাড়া আর কিছুই করার ছিল না। তবে আজ শুধু আনন্দ ও উল্লাসের দিন তাদের। ফলাফল পাওয়ার পর থেকে তাদের পরিবার-স্বজন ও শুভানুধ্যায়ীদের মাঝে বিরাজ করছে আনন্দ আর উল্লাস।
অনিক দি প্রমিনেন্টকে বলে, ‘গত বছর পরীক্ষা দিতে না পারলেও এক চোখ দিয়ে পরীক্ষায় অংশ নিয়ে আজ এই ফল অর্জন করেছি। দীর্ঘদিন চিকিৎসা শেষে ডান পাশে একটি কৃত্রিম চোখ লাগানো হয়েছে। এখনও পুরোপুরি সুস্থ হইনি। চলতি মাসে চিকিৎসার জন্য আবার ভারত যেতে হবে।’
অপরদিকে হৃদয় জানায়, ‘চোখ হারানোর আগে যেভাবে পড়ালেখা করতে পারতাম, এখন আর সেভাবে পারি না। তবু ভালো ফল করতে পেরে সৃষ্টিকর্তার কাছে শুকরিয়া আদায় করছি।’
অনিকের মা জেসমিন আক্তার সন্তানের এমন সাফল্যে আনন্দ প্রকাশ করে বলেন, ‘দুঃসময়ে তার সন্তানের পাশে যারা এগিয়ে এসেছেন তাদের সবার প্রতি রইল আন্তরিক কৃতজ্ঞতা। ছেলের চিকিৎসা করাতে গিয়ে সারা জীবনের সঞ্চয় শেষ হয়ে গেছে। ছেলের সাফল্যে তা নিমিষেই ভুলে যাচ্ছি। এখন আর কোনো আফসোস নেই।’
জেসমিন আকতার সাংবাদিক ও প্রধানমন্ত্রীর প্রতি কৃতজ্ঞতা প্রকাশ করে বলেন, ‘এসএসসি পরীক্ষায় ভালো করলেও ছেলের চিকিৎসা আর পড়ালেখার খরচ নিয়ে তিনি দুশ্চিন্তায় ভুগছেন। আপনাদের ও মাননীয় প্রধানমন্ত্রীর সহযোগিতায় আমার সন্তান বেঁচে আছে।’
দুই শিক্ষার্থীর উপর বোমা হামলার ঘটনায় অজ্ঞাতদের আসামি করে ফেনী মডেল থানায় মামলা হলে পুলিশ ১৮ জনকে গ্রেপ্তার করে। তাদের মধ্যে স্থানীয় যুবদল নেতা আজিম ওরফে বোমা আজিম ও আজাদ আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেন। মামলাটি বিচারাধীন।

 
	                
	                	
	             
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	 
	                       			                       	