গরিব শিক্ষার্থীদের প্রিয় ঠিকানা
- নিউজ ডেস্ক
ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনের কিংবদন্তি নেত্রী বিপ্লবী ইলা মিত্রের স্মৃতি রক্ষার্থে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নাচোলে প্রতিষ্ঠিত হয় ইলা মিত্র পাঠাগারটি। পাঠ্যবই থাকায় ক্ষুদ্র জাতিসত্তার গরিব শিক্ষার্থীদের প্রিয় ঠিকানা হয়ে উঠেছে পাঠাগারটি। কিন্তু এই মহিয়সী নারীকে নিয়ে লেখা বই ‘ইলা মিত্র’টিই নেই এখানে।
তেভাগা আন্দোলনের স্মৃতিবিজড়িত স্থান নাচোলের নেজামপুরে ২০১৪ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় পাঠাগারটি। সমতলের ক্ষুদ্র জাতিসত্তার মানুষদের আর্থসামাজিক উন্নয়নে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ প্রকল্প থেকে এতে অর্থায়ন করা হয়।
১২ অক্টোবর ইলা মিত্র পাঠাগার ও সাংস্কৃতিক চর্চাকেন্দ্রে গিয়ে দেখা যায়, পাঠাগারের অফিসকক্ষের টেবিলে বই পড়ছে আশপাশের কয়েকজন বাঙালি কিশোর। কথা হয় নেজামপুর আলিয়া মাদ্রাসার ষষ্ঠ শ্রেণির সোলেমান আলী, অষ্টম শ্রেণির কামরুজ্জামান ও নবম শ্রেণির নুরুল ইসলামের সঙ্গে। তারা জানায়, ছুটির দিনগুলোতে তারা পাঠাগারে এসে গল্পের বই পড়ে। ঠাকুরমার ঝুলি ও ইশপের গল্পসহ শিশুদের জন্য লেখা বইগুলো তাদের প্রিয়।
পাঠাগারের গ্রন্থাগারিক রাজিব পাহান বলেন, পাঠাগারে রয়েছে ৫৮২টি বই। এর মধ্যে উচ্চমাধ্যমিকের ৩০ সেট ও স্নাতক শ্রেণির ১৫ সেট বইয়ের সব কটি ক্ষুদ্র জাতিসত্তার গরিব শিক্ষার্থীদের কাছে রয়েছে। পড়া শেষে তারা বইগুলো ফিরিয়ে দিয়ে যাবে। এ ছাড়া পাঠাগারে রয়েছে রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, কাজী নজরুল ইসলাম, বিভূতিভূষণ বন্দ্যোপাধ্যায়, জীবনানন্দ দাস, আনিসুল হকসহ বিভিন্ন লেখকের বই। বইগুলো বাড়িতে নিয়ে এক সপ্তাহ রাখার সুযোগ রয়েছে।
পাঠাগারের বইয়ের তাক খুঁজে পাঠকপ্রিয় অনেক বই দেখা গেল। কিন্তু যে তেভাগা আন্দোলন ও ইলা মিত্রের স্মৃতি রক্ষায় এ পাঠাগার, তাদের নিয়ে লেখা কোনো বই চোখে পড়ল না। এ প্রসঙ্গে রাজিব পাহান বলেন, মালেকা বেগমের লেখা ইলা মিত্র নামে একটি মাত্র বই আছে এই পাঠাগারে। কিন্তু বইটি দীর্ঘদিন থেকে রয়েছে একজন ক্ষুদ্র জাতিসত্তার নেতার বাড়িতে।
নাচোল ইউএনও মোহাম্মদ রাশেদ ওয়াসিফ বলেন, প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের বিশেষ প্রকল্পের আওতায় ২০১৭ সালের জুন পর্যন্ত এ পাঠাগার সহায়তা পাবে। এরপর পাঠাগারটি নাচোল ক্ষুদ্র জাতিসত্তার একাডেমির নেতাদের নিজস্ব উদ্যোগে পরিচালনার কথা রয়েছে।
একাডেমির সভাপতি যতিন হেমব্রম বলেন, ‘প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ের সহায়তা বন্ধ হয়ে গেলে পাঠাগারটি মুখ থুবড়ে পড়বে। এ জন্য আমরা সহায়তা অব্যাহত রাখার দাবি জানাচ্ছি।’
এদিকে ইলা মিত্রের ৯১তম জন্মবার্ষিকী উদ্যাপন করেছে প্রগতিশীল নারী সংগঠন জাগো নারী বহ্নিশিখা। গতকাল মঙ্গলবার বিকেলে চাঁপাইনবাবগঞ্জের নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের শহীদ মিনারে এ উপলক্ষে আলোচনা সভা হয়। বহ্নিশিখার আহ্বায়ক ফারুকা বেগমের সভাপতিত্বে আলোচনা সভায় বক্তব্য দেন সিপিবি চাঁপাইনবাবগঞ্জ জেলা শাখার সাবেক সভাপতি সাইদুল ইসলাম, নবাবগঞ্জ সরকারি কলেজের ইতিহাস বিভাগের শিক্ষক জিয়াউল হক, শাহনেয়ামতুল্লাহ কলেজের শিক্ষক নওসাবাহ নওরীন, চাঁপাইনবাবগঞ্জে প্রথম আলো বন্ধুসভার যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক মারিয়া হাসান প্রমুখ। কবিতা আবৃত্তি করেন চাঁপাইনবাবগঞ্জ থিয়েটারের সাধারণ সম্পাদক শাহ্জাহান প্রামাণিক।
বক্তারা বলেন, ইলা মিত্র নাচোলের ঐতিহাসিক তেভাগা আন্দোলনে নেতৃত্ব দিতে গিয়ে যে নির্মম নির্যাতনের শিকার হয়েছিলেন, ইতিহাসে তা নজিরবিহীন। সাঁওতাল কৃষকেরাও তাঁকে ‘রানি মা’ বলে ডাকতেন। বক্তারা আরও বলেন, সাধারণ মানুষকে ভালোবাসার এ শিক্ষা সবাইকে নিতে হবে ইলা মিত্রের জীবন ও সংগ্রাম থেকে। বক্তারা পাঠ্যবইয়ে তেভাগা আন্দোলন ও এর নেত্রী ইলা মিত্রের জীবনী অন্তর্ভুক্ত করার দাবি জানান। এ ছাড়া নাচোলের নেজামপুর থেকে স্মৃতিসৌধ পর্যন্ত সড়কটি ইলা মিত্রের নামে নামকরণ ও এই মহান নরীর নামে স্মৃতিফলক স্থাপনেরও দাবি জানান বক্তারা।