বই লিখলে সাজা কমে কয়েদির

বই লিখলে সাজা কমে কয়েদির

আন্তর্জাতিক ডেস্ক : জেলে বাড়ছে কয়েদিদের সংখ্যা। আর তার সঙ্গে পাল্লা দিয়ে বাড়ছে তাদের বই প্রকাশ। এই বই প্রকাশের বহর নিয়ে এ বার তদন্ত শুরু করেছে রোমানিয়া সরকার।

রোমানিয়ার জেলে বসে কয়েদিরা লিখছে একের পর এক বই। এক কয়েদি সাত ঘণ্টায় ২১২ পাতার বইও লিখেছে বলে শোনা গিয়েছে। লেখার বিষয়ের পরিধিও বেশ ব্যাপক। ফুটবল থেকে রত্ন-পাথর, ঈশ্বর থেকে নির্মাণ ব্যবসা। অনেক ক্ষেত্রেই কয়েদিদের জেলের খুপরিতে লেখার টেবিল পর্যন্ত থাকে না। ইন্টারনেট তো দূর অস্ত! তবু বই লেখা কমার বদলে বেড়ে চলেছে। আর প্রকাশনার ধুমও বেড়েছে একই হারে। কয়েদিদের লেখা বই প্রকাশের সংখ্যা ২০১৪ সালে ছিল ৯০। ২০১৫ সালে তা দাঁড়িয়েছে ৩৪০-এ।

আসলে কয়েদিদের এই হারে বই লেখার পিছনে অণুপ্রেরণা যোগাচ্ছে রোমানিয়ার আইন। কমিউনিস্ট আমল থেকে চলে আসা এই আইন অনুযায়ী, কোনও কয়েদি যুক্তিনিষ্ঠ লেখা প্রকাশ করলে তার সাজা ৩০ দিন পর্যন্ত কমতে পারে। তবে তা অবশ্যই বিচারকের সিদ্ধান্ত সাপেক্ষ। বইয়ের গুণগত মানই সে ক্ষেত্রে সাজা কমানোর এক মাত্র মাপকাঠি। তবে বই প্রকাশের জন্য প্রকাশনী সংস্থাকে টাকা দিতে হবে কয়েদিদেরই। সাধারণ বইয়ের দোকানে অবশ্য ঠাঁই হয় না এই বইয়ের।

তবে এক বছরের মধ্যে ফুলে ফেঁপে ওঠা এই বই ব্যবসায় দুর্নীতির গন্ধ পাচ্ছেন রোমানিয়ার সরকারি আইনজীবীরা। কয়েদিদের লেখা যাচাই করেন বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপকেরা। ধনী ও প্রভাবশালী কয়েদিরা মোটা দক্ষিণার বিনিময়ে অধ্যাপকদের দিয়েই নিজেদের নামে বই লেখাচ্ছে বলে সন্দেহ সরকারি আইনজীবীদের। সাত-আট ঘণ্টায়  দু’শোর বেশি পাতার বই লেখা হয়ে যাওয়ায় সেই সন্দেহ আরও বেড়েছে।

বিশেষজ্ঞ সংস্থা ‘এক্সপার্ট ফোরাম থিঙ্ক ট্যাঙ্কের’ সদস্য লরা স্টেফান অবশ্য সরাসরিই বলছেন, ‘রোমানিয়ার কয়েদিদের লেখা বই তাদের প্রতিভার থেকেও অর্থ-সম্পত্তি ও প্রভাবের উপর বেশি নির্ভরশীল।’

দুর্নীতি ও জুয়াচুরি-চক্রের সঙ্গে জড়িত থাকার অভিযোগে ধৃত রোমানিয়ার বেশির ভাগ কয়েদি ধনী। তারা তাদের প্রভাব-প্রতিপত্তি খাটিয়ে বড় মাপের আইনজীবীর সাহায্য নিতেই পারে। তাঁদের দেওয়া বুদ্ধিতেই কয়েদিরা আইনকে নিজেদের সুবিধে মতো কাজে লাগাচ্ছে বলে অভিযোগ স্টেফানের। তাঁর আরও অভিযোগ, ‘বেশির ভাগ ক্ষেত্রেই এই লেখার মান নিম্নমানের। অথবা অন্য কোনও লেখা থেকে চুরি করা।’

তবে চুরি করে লেখার অভিযোগ রোমানিয়াতে নতুন নয়। ২০১২ সালে এক বিশ্ববিদ্যালয় কমিটির তদন্তে দেখা গিয়েছিল, প্রধানমন্ত্রী ভিক্টর পোন্টারের পিএইচডি গবেষণাপত্রটি ছিল চুরি করে লেখা। বিভিন্ন সময়ে এই অভিযোগে অভিযুক্ত হয়েছেন রোমানিয়ার মন্ত্রী ও বিশিষ্ট জনেরা। কিন্তু তদন্ত কখনওই সে ভাবে হয়নি।

আইনমন্ত্রী রালুকা প্রুনার মতে, অর্ডিন্যান্স জারি করে কয়েদিদের বই লেখার আইনটি রদ করা উচিত। তাঁর মতে, ‘ওই আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে নানা অসঙ্গতি থেকে গেছে।’favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment