জামদানির এক প্রস্থ
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
জামদানি শাড়ির ঐতিহ্য বহুদিনের। সময় অতিক্রম হলেও জামদানির কদর কমেনি আজও। বিভিন্ন উৎসবে এখনও বাঙালি নারীরা বেছে নেয় জামদানি শাড়ি।
জামদানি শাড়ির মূল আকর্ষণ হলো এর নকশা বা মোটিফ। জ্যামিতিক ডিজাইনের নকশা দেখলেই বোঝা যায় যে এটা জামদানি শাড়ির। এ নকশা সাধারণত কাগজে এঁকে নেওয়া হয় না। জামদানির শিল্পীরা নকশা আঁকেন সরাসরি তাঁতে বসানো সুতোয় শাড়ির বুননে বুননে। আবার কখনও কখনও তারা ফরমায়েশি কাজও করেন। তখন হয়তো তারা ডিজাইনারের নির্দেশনা মেনে শাড়ির রং নির্ধারণ করেন। কিন্তু নকশা তো সেই আদি প্যাটার্ন বজায় রেখেই হবে। তারা এমনি পারদর্শী যে মন থেকেই চিন্তা করে ভিন্ন ভিন্ন নকশা আঁকেন।
প্রচলিত বেশ কিছু পাড়ের নকশার মধ্যে সবচেয়ে বহুল ব্যবহৃত পাড় হচ্ছে করলা পাড়। এ ছাড়া ময়ূর প্যাঁচ, কলমিলতা, পুঁইলতা, কচুলতা, গোলাপচর, কাটিহার, কলকা পাড়, কাঠপাড়, আঙুরলতা ইত্যাদি। শাড়ির জমিনে গোলাপফুল, জুঁইফুল, পদ্মফুল, তেছরি, কলার ফানা, আদার ফানা, সাবুদানা, মালা ইত্যাদি নকশা বোনা হয়। এ নকশা তোলার পদ্ধতিটিও বেশ মজার। শিল্পীদের মুখস্থ করা কিছু বুলি রয়েছে। এসব বুলি ওস্তাদ শাগরেদকে বলতে থাকে আর শাগরেদ তা থেকেই বুঝতে পারে যে ওস্তাদ কোন নকশাটি তুলতে যাচ্ছেন।
নিজস্ব বুলিতে এই ছড়া নকশা তৈরির ফর্মুলাবিশেষ। নকশার পুরো কাজটি হাতে করতে হয় বলে সময় বেশি লাগে। পুরো জমিনে নকশা করা একটি মোটামুটি মানের শাড়ি তৈরি করতে ন্যূনতম সময় লাগে চার সপ্তাহ বা এক মাস। তবে হাটে যেসব শাড়ি বিক্রি হয় তা এক সপ্তাহেই একটা করে ফেলা সম্ভব। সুতা বা রঙের জন্য দামে যে পার্থক্য হয়ে থাকে, তার চেয়ে অনেক বেশি তারতম্য হয় কাজের পার্থক্যের জন্য।
জামদানি শাড়ির দাম নির্ভর করে শাড়ির গাঁথুনি এবং সুতার কাউন্টের ওপর। যত বেশি কাউন্টের সুতা, শাড়ির দামও তত বেশি। সেই সঙ্গে নকশা তোলার সুতার কাউন্টও হতে হবে কম এবং নকশাও হতে হবে ছোট ছোট।
প্রতি সপ্তাহে শুক্রবার শীতলক্ষ্যার পাড়ে ভোররাত থেকে জামদানির যে হাট বসে তাও কিন্তু দেখার মতো। লাল, নীল, হলুদ সবুজ, গোলাপি, আসমানি কোন রংটা নেই সে হাটে! জামদানি এমন একটি শিল্প, যেখানে যান্ত্রিক কর্মকাণ্ড একেবারেই বিকল। জামদানির পুঁজি হচ্ছে অভিজ্ঞ ও দক্ষ শিল্পীর মেধা, মৌলিকতা, নিষ্ঠা, ধৈর্য, শ্রম।
নারীর পছন্দের তালিকায় জামদানির স্থান প্রথম ধরা চলে। কেননা যেকোনও ধরনের আচার অনুষ্ঠানে নারীরা এই শাড়িটি পরতে বেশ স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করেন। গরমের ঋতুতে জামদানি শাড়ি বেশ আরামদায়ক হয়ে থাকে। এছাড়া প্রতি বছর বিভিন্ন রঙ এবং নকশার বাহারি কাজে ভরপুর এই জামদানির কালেকশন নারীদের এর প্রতি আরও বেশি দুর্বল করে তোলে।
কোথায় পাবেন: বিভিন্ন কালেকশনের এই জামদানি শাড়িগুলো রুপগঞ্জের জামদানি পল্লীসহ রাজধানীর যেকোনও শাড়ির দোকানে পেতে পারেন। মিরপুরের বেনারসি পল্লীর কয়েকটি জামদানির দোকানেও পাওয়া যাবে। ইদানিং অনলাইনেও জামদানির হাট জমে উঠেছে।
দরদাম: বিভিন্ন ধরনের নকশা করা জামদানিগুলোর দাম মোটামুটিভাবে ২৫০০ টাকা থেকে ২৫ হাজার টাকা পর্যন্ত হয়ে থাকে। তবে কাজের উপরে দাম অনেকটা নির্ভর করে। যেমন বেশি কাজ হলে বেশি দাম, আর কম কাজ হলে কম দাম।
জামদানি শাড়ির যত্ন: জামদানি শাড়ি ব্যবহারের পর ভাঁজ করে অনেক দিন রেখে দিলে তা ভাঁজে ভাঁজে ফেটে যেতে পারে। আবার হ্যাঙ্গারে করে ঝুলিয়ে রাখলেও শাড়ির মাঝখানে ফেটে যায়। তাই জামদানি শাঢ়ি হ্যাঙ্গারে ঝুলিয়ে বা ভাঁজ করে না রাখাই ভালো। এ ক্ষেত্রে থান কাপড় পেঁচিয়ে রাখার রোলগুলোয় জামদানি শাড়ি পেঁচিয়ে রেখে দিলে তা অনেকদিন পর্যন্ত ভালো থাকে। আর নিয়মিত সাবান পানি দিয়ে জামদানি ধোয়া যাবে না। জামদানি কাটা করাতে হয়। মোটামুটি সব লন্ড্রিতেই জামদানি কাটা করানো হয়।