সুস্থ থাকতে চাইলে বই পড়ুন
- ফিচার ডেস্ক
বই পড়লে জ্ঞান-বুদ্ধি বাড়বে সে বিষয় তো কোনও সন্দেহ নেই। কিন্তু আপনাদের কি জানা আছে শরীর সুস্থ রাখতেও এই অভ্যাস দারুনভাবে সাহায্য করে। কীভাবে? সেই উত্তর পতে গেলে যে চোখ রাখতে হবে বাকি প্রবন্ধে।
আপাত দৃষ্টিতে কথাটা বিশ্বাস করতে একটু কষ্ট হয় ঠিকই। কিন্তু এই বিষয়ে কোনও সন্দেহ নেই যে বই এবং শরীরের মধ্যে গভীর সম্পর্ক রয়েছে। যে কারণেই বই পরলে তার সুফল শরীরের উপরও পরে। কীভাবে এই ঘটনাটা ঘটে থাকে, সে বিষয়ে নিচে আলোচনা করা হল।
১। নিমেষে স্ট্রেস কমে যায়:
পরিসংখ্যান বলছে আজকের জেট যুগে যেসব রোগে নতুন প্রজন্ম বেশি মাত্রায় ভুগছে, তার বেশিরভাগের সঙ্গেই মানসিক চাপের সরাসরি যোগ রয়েছে। আর বই পড়ার অভ্যাস এমন ধরনের সমস্যাকে কমাতে দারুন কাজে আসে। কীভাবে এমনটা হয়?
একাধিক কেস স্টাডিতে একথা প্রমাণিত হয়েছে যে বই পড়ার সময় মন খুব শান্ত হয়ে যায়, যেমনটা প্রাণায়ম করার সময় হয়ে থাকে। ফলে মানসিক চাপ কমতে শুরু করে। সেই সঙ্গে হার্টের রোগ, উচ্চ রক্তচাপ, ডায়াবেটিস, স্ট্রোক প্রভৃতি মারণ রোগে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
তাই তো ঘুমতে যাওয়ার আগে প্রতিদিন ৩০ মিনিট থেকে ১ ঘন্টা পছন্দের যে কোনও বই পড়ার অভ্যাস করুন, দেখবেন হাতে-নাতে সুফল পাবেন।
২। মনোযোগ বৃদ্ধি পায়:
কর্মক্ষেত্রে হোক কী পড়াশোনায়, যে কোনও ফিল্ডে উন্নতি করতে গেলে মনোযোগ সহকারে সেই কাজটি করা একান্ত প্রয়োজন। না হলে যতই শ্রম করা হোক না কেন কাঙ্খিত ফল মিলতে অনেক সময় লেগে যায়। আর এক্ষেত্রে আপনাকে সাহায্য করতে পারে বই।
কারণ প্রতিদিন বই পড়লে ব্রেনের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পায়। ফলে উন্নতি ঘটে মনোযোগ ক্ষমতারও। প্রসঙ্গত, যারা অ্যাটেনশান ডেফিসিয়েন্সি সিনড্রমে ভুগছেন তারা আজ থেকেই বই পড়া শুরু করুন। দেখবেন অল্প দিনেই পরিস্থিতি একেবারে বদলে যাবে।
৩। স্মৃতিশক্তির উন্নতি ঘটে:
স্ট্রেস এবং অ্যাংজাইটি যত বাড়বে, তত স্মৃতিশক্তির উপর কুপ্রভাব পরবে। আর যদি ঠিক সময়ে মানসিক চাপকে নিয়ন্ত্রণে আনতে না পারেন, তাহলে কিন্তু বেজায় বিপদ! সেক্ষেত্রে মনে রাখার ক্ষমতা এতটাই কমে যাবে যে দৈনন্দিন জীবন ব্যাহত হতে শুরু করবে।
স্ট্রেস তো থাকবেই, তাহলে উপায়? খুব সহজ! প্রতিদিন কম করে ৩০ মিনিট সময় বই পড়ুন। এমনটা করলেই দেখবেন স্ট্রেস কমবে, অন্যদিকে স্মৃতিশক্তি আরও মজবুত হবে। এবার বুঝতে পারছেন তো জ্ঞান প্রদান ছাড়াও বইয়ের কত গুণ রয়েছে।
৪। মস্তিষ্কের স্বাস্থ্যের উন্নতি ঘটবে:
বই পড়ার সময় ব্রেনের মধ্যে থাকা হাজারো নিউরন বেশি বেশি করে কাজ করতে শুরু করে দেয়। ফলে সার্বিকভাবে মস্তিষ্কের কর্মক্ষমতা বৃদ্ধি পেতে শুরু করে। আর এমনটা হলে একদিকে যেমন বুদ্ধির বিকাশ ঘটে, তেমনি নানা ধরনের ব্রেন ডিজিজে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কাও হ্রাস পায়।
৫। মানসিক শান্তি মেলে:
সারা দিন কাজের পর ৬০-৭০ শতাংশ মানুষই মন-মেজাজ ভাল করতে টিভি দেখে থাকেন। কিন্তু তাতে কি সত্যিই মন শান্ত হয়? গবেষণা তো উল্টো কথা বলছে।
বিজ্ঞানের কথা যদি শোনেন, তাহলে মন এবং মস্তিষ্কের ক্লান্তি দূর করতে টেলিভেশনের পরিবর্তে বইয়ের সঙ্গে বন্ধুত্ব পাতান। দেখবেন বেশি উপকার পাবেন। তাছাড়া টিভি দেখলে শরীরের কোনও উপকার হয় না, যা বই পড়লে হয়।
বই পড়ার জন্য আদর্শ জায়গা:
১। গাছের তলায়:
আপনার বাড়িতে যদি বাগান থাকে, তাহলে বই পড়ার সময় চার দেওয়ালের মধ্যে না থেকে প্রকৃতির মাঝে থাকুন। দেখবেন বই পড়ার উপকারিতা আরও বেড়ে যাবে।
২। বাথরুমে:
শুনতে একটু আজব লাগছে, তাই তো! বাস্তবে কিন্তু বই পড়ার জন্য বাথরুমের থেকে ভাল জায়গা আর নেই। সারা বাড়ির মধ্যে এটাই হল এমন জায়গা যেখানে আপনি একেবারে একা থাকেন। তাই তো সকালে যখন প্রকৃতির ডাকে সারা দেবেন, তখন সেই ৩০ মিনিট বই পড়তে কাজে লাগাতে পারেন। এমনটা করলে সময় নষ্ট তো হবেই না, উল্টে শরীরের উপকার হবে।
৩। ব্যালকনি:
বাড়ির এই অংশটিতেও বেশি মানুষের যাতায়াত থাকে না। তাই ইচ্ছা হলে ব্যালকনিতে বসেও বই পড়তে পারেন। পছন্দের কোনও আলো লাগিয়ে এই অংশটিকে একান্ত নিজের একটা জায়গা বানিয়ে নিতে খুব যে কষ্ট করতে হবে না, তা বলাই বাহুল্য!
৪। ঠাকুর ঘর:
সকাল আর সন্ধ্যে ছাড়া ঠাকুর ঘরে খুব বেসি লোক ঢোকেন না। তাই তো ভগবানের দরবারকেও বই পড়ার কাজে ব্যবহার করতে পারেন। এমনটা করলে ঠাকুর তো রাগ করবেই না, বরং মন এবং শরীর উভয়ই চাঙ্গা হয়ে উঠবে।
৫। ছাদ:
খেলার জায়গা হিসেবে এবং জামা কাপড় শোকানোর জন্য় ছাদকে ব্য়বহার না করে সেখানে শান্তিতে বসে বইও পড়তে পারেন। ছাদের যে কোনও একটা পছন্দের জায়গা বেছে নিয়ে সেখানে মাদুর পেতে শুয়ে পরুন। সঙ্গে রাখুন একটা বালিশ। আর কি চাই! এবার যতক্ষণ ইচ্ছা বই পড়ুন না, কেউ আপনাকে ডিস্টার্ব করবে না।