বইয়ের প্রতি ভালোবাসা

বইয়ের প্রতি ভালোবাসা

  • ফিচার ডেস্ক

কোনো এক মনীষী বলেছিলেন, ‘যদি কোনো অশিক্ষিত জাতিকে মানসিকভাবে শিক্ষিত করতে চাও তাহলে তাদের দিকে কিছু বই ছুড়ে দাও।’ কথাটা নেহাত ভুল বলেননি তিনি। মানবজীবনে বই এক পরম বন্ধু, পরম আশ্রয়। জীবনের বন্ধ দরজা-জানালাগুলো খুলে দেওয়ার জন্য বইয়ের বিকল্প নেই। বইয়ের পাতায় সঞ্চিত থাকে হাজার বছরের সমুদ্র-কল্লোল। অতীত ও বর্তমানের অনন্য সেতুবন্ধন হলো বই। মনোরাজ্যের দিগন্তকে প্রসারিত করে আলোকিত মানুষ গড়তে বইয়ের বিকল্প নেই। কারণ মানুষ হিসেবে নিজেকে গড়ে তুলতে গেলে জ্ঞানের বিকল্প নেই। টলস্টয় যথার্থই বলেছেন, ‘মানবজীবনের তিনটি অনুষঙ্গ হলো—বই, বই, বই।’

আর এই বই পড়ার প্রথম দীক্ষা শুরু হয় ছাত্রজীবনে। এটি হলো উপন্যাস, থ্রিলার, কবিতা, গল্প, প্রবন্ধ পাঠের এক অমোঘ প্রহর। কিন্তু সেই পাঠচক্র কিংবা বই পড়ার অভ্যাসটা এখন আর আগের মতো জমাট বাঁধা ভালো লাগায় আপ্লুত করে না এ সময়ের তরুণদের। একটা সময়, অর্থাত্ গত দুই দশক আগেও দৈনন্দিন জীবনে, বিশেষ করে শিক্ষিত মধ্যবিত্ত পরিবারে বই-ম্যাগাজিন পড়ার একটা প্রচলন ছিল অত্যন্ত গভীরভাবে। পড়ার তালিকায় ছিল মাইকেল মধুসূদন, রবীন্দ্রনাথ থেকে শুরু করে কাজী নজরুল, জীবনানন্দ, জসীমউদ্দীন, তারাশঙ্কর, মানিক বন্দ্যোপাধ্যায়, বুদ্ধদেব বসু, সমরেশ বসু, সত্যজিত্ রায়, আহ্সান হাবীব, শামসুর রাহমান, বিমল মিত্র, সৈয়দ শামসুল হক, আখতারুজ্জামান ইলিয়াস, শওকত আলী, মাহমুদুল হক, শহীদ কাদরী, নির্মলেন্দু গুণ, মহাদেব সাহা, আশাপূর্ণা দেবী, শীর্ষেন্দু মুখোপাধ্যায়, সুনীল গঙ্গোপাধ্যায়, শক্তি চট্টোপাধ্যায়, নীরেন্দ্রনাথসহ কতশত লেখক-লেখিকার কবিতা, গল্প, উপন্যাস।

কাজী আনোয়ার হোসেনের গোয়েন্দা সিরিজ ‘মাসুদ রানা’র জনপ্রিয়তার কথা তো এক প্রজন্ম আগেও ছিল কিংবদন্তিতুল্য। কবিতাসাহিত্য, কথাসাহিত্য, নাট্যসাহিত্যের প্রতি এক তীব্র টান অনুভব করত এক প্রজন্ম আগের তারুণ্য। সে জায়গা আজ দখল করে নিয়েছে কম্পিউটার, মোবাইল, ইন্টারনেট, ফেসবুক, টুইটার, ইউটিউবের মতো সোশ্যাল মিডিয়া। এই প্রজন্মের তারুণ্যের কাছে বইয়ের চেয়ে মোবাইল মনিটরই হয়ে উঠেছে বেশি প্রিয়। সঙ্গে আছে বিদেশি অসংখ্য টিভি চ্যানেল। বাঙালি মধ্যবিত্ত সমাজে তিন দশক আগেও যে ব্যক্তিগত লাইব্রেরি গড়ে তোলার প্রবণতা লক্ষ করা যেত। সেখানে ঠাঁই পেয়েছে কম্পিউটার আইটেম, প্যাডসহ প্রযুক্তির উত্কর্ষের সর্বশেষ সংযোজন। সময়ের প্রয়োজনে মানুষের মন হয়ে উঠেছে যান্ত্রিক, শেকলবন্দী।

তবে এই যান্ত্রিক ব্যস্ততার মাঝেও আমাদের উচিত বইয়ের জন্য সময় বের করা। কারণ বই শাশ্বত, বই চির তরুণ। বইয়ের গ্রহণযোগ্যতা ফুরালেও প্রয়োজনীয়তা ফুরাবার নয়। যুগে যুগে বই-ই মানুষকে আলোর পথ দেখিয়েছে। সত্য, সুন্দর ও কল্যাণের পথে এগিয়ে যেতে হলে বই পড়া অবশ্যম্ভাবী। সাহিত্য, দর্শন, ইতিহাস, সভ্যতা, সংস্কৃতি, রাজনীতি ও সমাজনীতিসহ জ্ঞানের এক অফুরান ভাণ্ডার হলো বই। বর্তমান তথ্যপ্রযুক্তির যুগে এসে নতুন প্রজন্ম বই পড়া ভুলে যাচ্ছে। অথচ জ্ঞান ও অভিজ্ঞতার জগতকে প্রসারিত করতে হলে বই পাঠে মনোযোগী হতে হবে। একটি ভালো বই অশান্ত মনে শান্তির পরশ বুলিয়ে দেয়। বই পড়ার এমন রঙিন চিত্রকে বিবর্ণ হতে দেওয়া যাবে না কোনোভাবেই। শুভ হোক বইয়ের সাথে তারুণ্যের পথচলা!

সূত্র: ইত্তেফাক

Sharing is caring!

Leave a Comment