জিডি কী ও কেন, কীভাবে জিডি করবেন

জিডি কী ও কেন, কীভাবে জিডি করবেন

  • আমিনুল ইসলাম মল্লিক

জিডি অর্থাৎ সাধারণ ডায়েরি একটি আইনগত বিষয়। তবে বিষয়টি একেবারে সাদামাটা নয়। কারণ যেসব বিষয়আশয় নিয়ে জিডি করতে হয় তা দৈনন্দিন জীবনের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণও। জিডি করা নিয়ে সাধারণ মানুষের মধ্যে কিছু ভ্রান্ত ধারণাও রয়েছে।

অনেকেই মনে করেন জিডি করতে টাকা খরচা করতে হয়। কিন্ত তা একেবারেই ভুল। এটি একটি সাধারণ সেবা যা পুলিশ দিয়ে থাকে। জিডি করতে আপনাকে খুব বেশি জানতে হবে বা অনেক পড়ালেখা করতে হবে বিষয়টি এমনও নয়। তবে জিডি করতে হলে অন্তত কিছু বিষয় অবশ্যই জানা থাকতে হবে।

জিডি বা সাধারণ ডায়েরি করতে যেসব তথ্য দিতে হয়

জিডি বা সাধারণ ডায়েরী করতে জাতীয় পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডি কার্ড), পেশাগত বিষয়ে বর্ণণাসহ জিডির সঙ্গে আরও কিছু তথ্য দিতে হবে। যে বিষয়টি ভয় বা শঙ্কায় আছেন সে বিষয়গুলো জিডিতে বিস্তারিত উল্লেখ করতে হবে। যেমন কার দ্বারা ভয় পাচ্ছেন। কে আপনাকে ভয় দেখাচ্ছে। কখন আপনা্র জিনিস হারিয়েছে। কিভাবে হারিয়ে। হারানো বস্তুর বিবরণ ইত্যাদি। 

কেন জিডি করবেন?

কারও দ্বারা ক্ষতিগ্রস্থ হওয়ার আশংকা করছেন বা ভয় পেয়েছেন। বিষয়টি সহজে মেনে নিতে পারছেন না। হারানো কোনো জিনিস উদ্ধার করতে চাচ্ছেন। এমন বিষয়ে জিডি করতে হবে।  কোনো প্রয়োজনীয় কাগজপত্র, যেমন জাতীয় পরিচয়পত্র (ন্যাশনাল আইডিকার্ড), পেশাগত পরিচয় পত্র, পাসপোর্ট, চেকবই, লাইসেন্স, শিক্ষাসংক্রান্ত কোনো সার্টিফিকেট (সনদ) দলিল ইত্যাদি হারিয়ে গেলে নিকটস্থ থানায় গিয়ে জিডি করতে হয়। এছাড়া কেউ কারও সম্পদের ক্ষতি করতে চাইলে, হত্যার হুমকি দিলে। সন্দেহভাজন কোনো ঘটনা ঘটার আশঙ্কায় থাকলে। জিডি লিখবেন কিভাবে?

পুলিশের দেওয়া নির্দিষ্ট ফরমে অথবা সাদা কাগজেও থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) বরাবর জিডি করা যায়।

অবশ্যই আপনাকে আশঙ্কার কারণ, যার জন্য আশঙ্কা করা হচ্ছে বা যে হুমকি দিয়েছে, তার নাম, ঠিকানা, হুমকির স্থান, তারিখসহ বিস্তারিত জিডিতে উল্লেখ করতে হবে। কিছু হারিয়ে গেলে তার বিস্তারিত বিবরণের সঙ্গে সেই জিনিসের একটি ফটোকপি যুক্ত করে দেবেন। এ বিষয়ে আপাতত কোনো মামলা করবেন না। তবে মনে রাখতে হবে পুলিশ যদি মনে করে যেকোনো গুরুতর অপরাধ ঘটেছে, তাহলে জিডি থেকেও মামলা হতে পারে। এখন জিডি করার পর তদন্ত শুরু করে পুলিশ। 

জিডি করার স্থান হবে কোন থানায়?

জিডি করার ক্ষেত্রে সাধারণত ঘটনাস্থলকেই প্রাধান্য দেওয়া হয়। যে এলাকায় ঘটনা ঘটেছে বা ঘটার আশঙ্কা রয়েছে, সে এলাকায় অবস্থিত থানাতেই জিডি করা উচিত। জিডি করতে যেকোনো পরামর্শের জন্য থানায় দায়িত্ব পালনরত অফিসারের সহযোগিতা নিতে পারেন।আপনি যদি জিডি লিখতে না পারেন, তবে দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তাকে লিখে দিতে অনুরোধ করবেন। এজন্য কোনো ধরনের ফি দিতে হবে না। অনেক থানায় লেখা আছে জিডি করতে টাকা লাগে না।

যদি সাদা কাগজে জিডি করেন তাহলে এর একটি কপিতে জিডির নম্বর, সময়, তারিখ এবং অফিসারের স্বাক্ষর ও সিল দেওয়ার পর আপনাকে প্রদান করা হবে। জিডিটি নথিভুক্ত হবে। আপনার কপিটি আপনি নিজের জন্য সংরক্ষণ করবেন। জিডি হওয়ার পর তা কর্তব্যরত কর্মকর্তা থানার ওসির কাছে পাঠাবেন। আপনার আবেদনের প্রেক্ষিতে ঘটনাটি আমলযোগ্য হওয়ার মতো হলে পুলিশ সঙ্গে সঙ্গে তদন্ত করে ব্যবস্থা নিবে। কী ব্যবস্থা নিচ্ছে পুলিশ তা আপনাকে অবহিত করবে।

পুলিশ দেশের যেকোনো নাগরিকের জিডি গ্রহণ করতে বাধ্য। তবে অস্তিত্বহীন, গুরুত্বহীন, তুচ্ছ তাচ্ছিল্য বিষয়ে জিডি গ্রহণ করতে পুলিশ গুরুত্ব কম দেয়। আবার একই বিষয়ে বা তুচ্ছ বিষয়ে বার বার জিডির বিষয়টিও পুলিশ ভালোভাবে নিবে না।

আইনে কোথায় জিডির কথা উল্লেখ আছে?

জিডি করতে ১৮৬১ সালের পুলিশ আইনের ৪৪ ধারা ও ফৌজদারী কার্যবিধির ১৫৪ ও ১৫৫ ধারা অনুসরণ করতে হয়। থানায় রাখা নির্ধারিত ফরমে সংশ্লিষ্ট বিষয়ে বর্ণনা দিয়ে জিডি করবেন। থানায় দায়িত্বরত পুলিশ কর্মকর্তা সংশ্লিষ্ট বিষয়ের বর্ণনাটি জিডির ৬৫ নম্বর ফরমে অন্তর্ভুক্ত করবেন।

অনেকে জিডি ও এজাহারের মধ্যে গুলিয়ে ফেলেন। মনে রাখতে হবে জিডি ও এজাহারের মধ্যে কিছু পার্থক্য রয়েছে। জিডি হলো কোনো ঘটনা ঘটার আগেই ভয় বা আশঙ্কা থেকে জিডি করতে হবে। নিকটস্থ থানায় গিয়ে লিখিত আকারে জানাতে হয়। আর কোনো একটি ঘটনা ঘটে যাওয়ার পর সংশ্লিষ্ট বিষয়ে যে অভিযোগ দায়ের করেন সেটি হলো এজাহার। তবে, অনেক সময় দেখা যায় জিডিকে গুরুত্ব দিয়ে এজাহার হিসেবে গণ্য করা হয়।

সূত্র: ঢাকাটাইমস

Sharing is caring!

Leave a Comment