কবিগুরুর কুঠিবাড়ি

কবিগুরুর কুঠিবাড়ি

  • আল রাউফ

“সকলই ফুরাইল। যামিনী পোহাইল। যে যেখানে সবে চলে গেল। রজনীতে হাসিখুশি, হরষপ্রমোদরাশি–
নিশি শেষে আকুলমনে চোখের জলে সকলে বিদায় হল।”

আজ সে কবি আর নেই। কবি গুরুর দেহটা আজ ঘুরে বেড়ায়না এ প্রাঙ্গনে। বয়বৃদ্ধ গাছগুলো আর সেই পরিচিত উঠানে পায়ের শব্দটা আর শোনা যায়না। পদ্মার স্রোতের ধ্বনিতেও বেজে ওঠেনা কারো মন। পুরনো আসবাবপত্র যেন গন্ধ ছড়ায় তার উপস্থিতির। ডায়েরির পাতাজুড়ে কাটাকুটির লাইনগুলো আজ ইতিহাস। সব স্মৃতি পিছনে ফেলে, রেখে গেছেন তার ভালোলাগার কুঠিবাড়ি।
বাংলাদেশের দক্ষিণ-পশ্চিমাঞ্চলের কুষ্টিয়া জেলা শহর থেকে ১৫ কিলোমিটার উত্তর-পূর্বে কুমারখালী উপজেলায় অবস্থিত শিলাইদহ গ্রাম। এখানে বিশ্বকবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের স্মৃতি বিজড়িত কুঠিবাড়ি অবস্থিত। রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর তার জীবদ্দশার একটি উল্লেখযোগ্য সময় এখানে কাটিয়েছেন।

তিনি এখানে বসেই রচনা করেছিলেন তার বিখ্যাত গ্রন্থ ‘সোনার তরী‘, ‘চিত্রা’, ‘চৈতালী’, ইত্যাদি। তাঁর বিখ্যাত গ্রন্থ ‘গীতাঞ্জলী কাব্য’ এর অনুবাদের কাজও শুরু করেন এখানেই। এছাড়াও রচনা করেছে কবিতা, উপমাসহ নানান ছোটো গল্প।

১৯৫৮ সাল থেকে প্রত্নতত্ত্ব অধিদপ্তরের ব্যবস্থাপনায় শিলাইদহ কুঠিবাড়িটি স্মৃতিরূপে সংরক্ষিত আছে । ১৯৭১ সালে বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর কবির বিভিন্ন শিল্পকর্ম সংগ্রহপূর্বক কুঠিবাড়িটিকে একটি জাদুঘর হিসেবে প্রতিষ্ঠা করা হয়। পুরো ভবনটি এখন জাদুঘর হিসেবে দর্শকদের জন্যে উম্মুক্ত। জাদুঘরের নীচ ও ২য় তলায় ১৬টি কক্ষেই কবি রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, শিল্পী রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর, জমিদার রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর অর্থাৎ নানা বয়সের বিচিত্র ভঙ্গির রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এর বাল্যকাল থেকে মৃতু্শয্যার ছবি পর্যন্ত সংরক্ষিত আছে। তাছাড়াও রয়েছে শিল্পকর্ম এবং তাঁর ব্যবহার্য কিছু আসবাবপত্র।

কুঠি-বাড়ির তিন তলার ছোটো কামরাটা ছিল কবি গুরুর লেখার ঘর। কবি এই ছাদের উপর বসে সূর্যোদয়, সূর্যাস্ত ও জ্যোৎস্না প্লাবিত প্রকৃতির শোভায় মুগ্ধ হতেন। তাঁর এই মুগ্ধতা তিনি বিভিন্ন কাব্যে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন ভাবে প্রকাশ করেছেন।

প্রায় ৩০ বিঘা এলাকাজুড়ে বিস্তৃত কুঠিবাড়িতে রয়েছে চিরসবুজ বৃক্ষের বাগান, একটি পুষ্পদ্যোন ও দুটি পুকুর। পুকুরের একপাশে রবীন্দ্রনাথের ‘পদ্মা-বোটের’ প্রতিকৃতি সংরক্ষণ করা হয়েছে৷ এছাড়াও কুঠিবাড়ির পিছন দিকটায় রয়েছে একটি টেনিস কোর্ট।

দূর দুরান্ত থেকে রবীন্দ্রনাথ প্রেমী মানুষেরা ছুটে আসেন শিলাইদহের কুঠিবাড়িতে। স্মৃতিবিজারিত এ কুঠিবাড়িতে সময় কাটান কিছুক্ষণ। এখানে বিভিন্ন সময় হয় রবীন্দ্রসংগীত চর্চা৷ দর্শনার্থীদের প্রাণচাঞ্চল্যে যেন ভরপুর হয়ে ওঠে শিলাইদহের এ কুঠিবাড়ি।

Sharing is caring!

Leave a Comment