তিনিই এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট

তিনিই এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট

  • ফয়সাল আহমেদ

বয়স ৭৭! র্দীঘ প্রায় ৫০ বছরের রাজনৈতিক জীবন তার। হোয়াইট হাউসে যাবার যে স্বপ্ন বহুদিন থেকে লালন করে আসছিলেন, সেই স্বপ্ন পূরণ হলো এবার।

তাঁর জন্ম ১৯৪২ সালের ২০ নভেম্বর পেনসিলভেনিয়ার স্ক্রানটনে। চার ভাই-বোনের মধ্যে সবার বড় বাইডেন বেড়ে ওঠেন স্ক্রানটন, নিউ ক্যাসল কাউন্টি ও ডেলওয়ারের মধ্যেই। বাবা জোসেফ রবনিটে বাইডেন সিনিয়র আর আইরিশ বংশোদ্ভূত মা ক্যাথরিন ইউজনিয়া ফিনগোন। ডেলওয়ার ইউনিভার্সিটিতে ইতিহাস ও রাষ্ট্রবিজ্ঞানে পড়াশোনা করেন তিনি। পরে আইনে ডিগ্রি নেন সিরাকিউজ ইউনিভার্সিটি থেকে।

১৯৭০ সালে ডেলওয়ারের নিউ ক্যাসল কাউন্ট্রি কাউন্সিলম্যান নির্বাচিত হন জো বাইডেন। এরপর তাকে আর পিছন ফিরে তাকাতে হয়নি। ৩০ বছর বয়সের মধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রের সিনেটর হওয়ার স্বপ্ন পূরণ হয় তার।

১৯৭২ সালের নভেম্বরে তৎকালীন জনপ্রিয় রিপাবলিকান সিনেটর স্যালবে বগসের বিপক্ষে ডেমোক্রেটিক দল থেকে প্রার্থী হন তিনি। তারপর নাম লেখান ইতিহাসে। মাত্র ৩০ বছর বয়সে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে সবচেয়ে কম বয়সী পঞ্চম সিনেটর নির্বাচিত হন।

১৯৮৭ সালে একবার আমেরিকার প্রেসিডেন্ট প্রার্থী হওয়ার জন্য মাঠে নামেন। ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়ন চেয়েছিলেন। কিন্তু তার বিরুদ্ধে অভিযোগ উঠে যে তিনি অন্যের লেখা চুরি করে নিজের নামে চালিয়েছেন! এই অভিযোগের সূত্র ধরে আরেকটা অভিযোগ সামনে আনা হয়। ছাত্র জীবনের একটি ঘটনা, যখন তিনি আইনের ছাত্র হিসেবে তার সাইটেশন পেপারে আরেকজনের লেখা হুবহু ব্যবহার করেছিলেন। তিনি তখন বলেছিলেন, সেটা যে নিয়ম বহির্ভূত তা তিনি জানতেন না।

এমন অসততার অভিযোগ আনা হলে তিনি প্রচারণা থেকে সরে দাঁড়াতে বাধ্য হন!

পরে তার এক জীবনীকারকে বাইডেন বলেছিলেন, ওই ঘটনা তাকে কুরে কুরে খেয়েছে। ‘নিজেকে আমি চিরকাল একজন সৎ মানুষ হিসেবে মনে করেছি। সেই জায়গাটা বিরাট ধাক্কা খেয়েছে।’

আরেক জায়গায় তিনি লিখেছেন, ‘এর জন্য দায়ী আমি নিজে। নিজের ওপর রাগ আর হতাশায় ভুগছি। আমেরিকার মানুষকে আমি কীভাবে বোঝাবো এটাই জো বাইডেনের আসল পরিচয় নয়। এটা শুধু আমার মস্ত একটা ভুল!’

এরপর স্বজন হারানো, স্ত্রী-পুত্রবিয়োগ, নিজের মস্তিষ্কে রক্তক্ষরণসহ নানা সংকটে আরও ২০ বছর নিজের সঙ্গে সংগ্রাম করেন বাইডেন। এর মাঝে আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হয়ে গেছেন তার থেকে বয়সে কনিষ্ঠ অনেকে যেমন—বিল ক্লিনটন, র্জজ ডব্লিউ বুশ, বারাক ওবামা ও ট্রাম্প!

২০০৮ সালে দলীয় মনোনয়ন দৌঁড়ে নামেন। তবে বারাক ওবামার সঙ্গে পেরে ওঠেননি। যদিও ওবামা তাকে ভাইস প্রেসিডেন্ট করে নেন। ২০১৬ সালের নির্বাচনেও দলীয় মনোনয়ন পাননি, হিলারির কাছে হেরে যান। কিন্তু প্রেসিডেন্ট হন রিপাবলিকান দলের ডোনাল্ড ট্রাম্প।

কিন্তু হাল ছাড়েননি জো বাইডেন! তার স্বপ্ন ছিলো আমেরিকার প্রেসিডেন্ট হবেন। অবশেষে ২০২০ সালের পেসিডেন্ট নির্বাচনের মনোনয়ন লাভ করেন। সেখানেও অনিশ্চয়তা ছিল। পদে পদেই যেন হেরে যাচ্ছিলেন। তবে একেবারে শেষ মুহূর্তে এসে মনোনয়ন পান।

এমনই হাল না ছাড়া মানুষ জো বাইডেন। মানুষ স্বপ্ন কীভাবে লালন করতে পারে র্দীর্ঘ সময় ধরে, তা তিনি দেখিয়ে দিয়েছেন।

জো বাইডেন প্রায়ই একটা কথা বলেন, ‘বাবার একটা কথা আমার জীবনের সবচেয়ে বড় শিক্ষা—কে তোমাকে কতবার ধাক্কা দিয়ে ফেলে দিল, সেটা বড় কথা নয়, কত দ্রুত তুমি উঠে দাঁড়াতে পারলে, মানুষ হিসেবে সেটাই হবে তোমার সাফল্যের পরিচয়।’

এমন সংগ্রামমুখর যার জীবন, এমন সুন্দর কথা যিনি বলেন, তিনিই এখন আমেরিকার প্রেসিডেন্ট।

Sharing is caring!

Leave a Comment