হারিয়ে যাচ্ছে যেসব ভাষা

হারিয়ে যাচ্ছে যেসব ভাষা

  • আরফাতুন নাবিল

ভাষা মানুষের মূল্যবান সম্পদ হলেও পৃথিবীর অনেক ভাষাই এখন বিলুপ্তির মুখে। একটি ভাষা হারিয়ে যাওয়া মানে সেই দেশসহ বিশ্ব থেকেই ভাষাটি মুছে যাওয়া। বাংলাদেশেও বেশ কিছু ভাষা বর্তমানে বিপন্নতার মুখে। একুশে ফেব্রুয়ারি বাংলাদেশের ভাষা দিবস। শুধু দিবস পালনই নয়, ভাষাকে বাঁচিয়ে রাখতে এগিয়ে আসাও একুশের প্রেরণা। দেশ-বিদেশের বিলুপ্তপ্রায় ভাষা নিয়ে লিখেছেন আরফাতুন নাবিল


ডুমি : নেপালের খোটাং জেলার পাহাড়ি এলাকা এবং তাপ ও রাভা নদীর আশপাশ এলাকাজুড়ে ডুমি ভাষায় কথা বলা হয়। এটি মূলত ‘কিরান্তি’ ভাষা। কিরান্তি ভাষা তিব্বত-বার্মা ভাষা পরিবারের একটি অংশ। এ ভাষায় বর্তমানে কথা বলেন মাত্র আটজন মানুষ। ধারণা করা হচ্ছে, খুব দ্রুত কিরান্তি ভাষার বিলুপ্তি ঘটবে। মুখের ভাষার বিলুপ্তি ঘটলেও ছাপা অক্ষরে যেন ভাষাটিকে টিকিয়ে রাখা যায় সেজন্য তৈরি করা হয়েছে একটি ডিকশনারি। কিরান্তি ভাষার ব্যাকরণ এবং বাক্যগঠন নিয়েও বেশ কিছু বই আছে।

ডুসনার : ইন্দোনেশিয়ার পাপুয়ার উপসাগরীয় এলাকা সেন্ডেরাওয়াসিহতে আদিবাসীরা বিলুপ্তপ্রায় ডুসনার ভাষায় কথা বলে। এ ভাষায় বর্তমানে কথা বলে মাত্র তিনজন মানুষ। ভাষাটি দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাবে বলে ধারণা করা হচ্ছে। কারণ এ তিনজন ব্যক্তিও নানা অসুস্থতায় ভুগছেন বেশ অনেক দিন ধরে।

কাইজানা : বিলুপ্তপ্রায় ভাষার মধ্যে প্রথম সারির দিকে নাম রয়েছে কাইজানা ভাষার। এ ভাষায় কথা বলতে পারেন ৭৮ বছর বয়সী রাইমুন্ডু অ্যাভেলিনো নামে মাত্র একজন ব্যক্তি। তিনি আমাজনের জাপুরার লিমোইরোতে বসবাস করেন। পর্তুগিজরা স্থায়ী আবাস গড়ে তোলার আগপর্যন্ত জাপুরা নদীর তীরবর্তী গ্রামে এই ভাষায় কথা বলা হতো। কিন্তু বিলুপ্ত হতে হতে এ ভাষাভাষী মানুষের সংখ্যা শূন্যতে এসে ঠেকেছে।

কানসা : ওকলাহোমার ক’ গোষ্ঠীর জনগণ কানসা ভাষায় কথা বলত। এ ভাষাটি ধেকিহান ভাষাপরিবারের সদস্য। এটি মূলত সিওয়ান ভাষা। এ ভাষায় কথা বলা একমাত্র স্থানীয় ব্যক্তি ওয়ালটার কেকাবাহ ১৯৮৩ সালে মারা যান। কেকাবাহের মৃত্যুর আগে রবার্ট এল র‌্যাংকিন নামে একজন ব্যক্তি এবং স্থানীয় রালফ পিপার ও মুয়াদ ক্যাককাউলি রোয়ি তার সঙ্গে দেখা করেন। তারা তিনজনই কানসা ভাষার কিছু শব্দ তার কাছ থেকে রেকর্ড করে নেন। এ শব্দগুলো ক’ জাতির মধ্যে প্রাচীন ভাষা হিসেবে কিছুটা হলেও টিকে আছে।

লেমেরিগ : লেমেরিগ এক ধরনের সামুদ্রিক ভাষা। উত্তর অস্ট্রেলিয়া থেকে ১০০০ মাইল পূর্বদিকে অবস্থিত প্যাসিফিক সমুদ্রের দক্ষিণাংশে ভানুয়াতু নামে একটি দ্বীপ আছে। সেখানের মানুষদের ভাষা এ লেমেরিগ। এ ভাষায় সেখানে তেমন কেউ আর কথা বলে না। ২০০৮ সাল নাগাদ মাত্র দুজন ব্যক্তি লেমেরিগ ভাষায় কথা বলত বলে সর্বশেষ জানা গিয়েছিল। তাই এ ভাষাটিও যে খুব দ্রুত বিপন্ন হতে যাচ্ছে। লেমেরিগ যে চারটি উপভাষার মিশ্রণে গঠিত হয়েছিল সেগুলোও বিলুপ্তির মুখে।

অঙ্গোটা : বিলুপ্তপ্রায় আফ্রো-এশিয়াটিক ভাষা অঙ্গোটা। দক্ষিণ-পশ্চিম ইথিওপিয়ার ওয়েইটো নদীর পশ্চিম তীরে ছোট্ট একটি গ্রাম আছে। সে গ্রামেই মাত্র ছয়জন ব্যক্তি এ ভাষায় কথা বলে। বাকি গ্রামবাসী ইতিমধ্যে সামাই ভাষায় কথা বলা শুরু করেছে। অন্যান্য লুপ্তপ্রায় ভাষার মতো, অঙ্গোটা ভাষা নিয়েও কাজ করেছেন ইথিওপিয়ার আদ্দিস আবাবা ইউনিভার্সিটির আকলিলু জিলমা নামে একজন প্রফেসর। অনুশীলন শেষে তিনি বুঝতে পারেন, অঙ্গোটা ভাষার নিজস্ব ব্যাকরণগত বৈশিষ্ট্য আছে। অঙ্গোটা ভাষায় আফ্রো-এশিয়াটিক এবং নিলো-সাহারান দুই ভাষারই কিছুটা মিশেল রয়েছে।

প্যাটউইন : প্যাটউইন স্থানীয় একটি আমেরিকান ভাষা। এ ভাষায় পশ্চিম আমেরিকার মানুষ কথা বলে। প্যাটউইন জাতিগোষ্ঠীর পূর্বপুরুষদের অনেক উত্তরসূরি বর্তমানে সান ফ্রান্সিসকোর বাইরে কর্টিনা এবং কলুসাতে বসবাস করে। ১৯৯৭ সাল পর্যন্ত সেখানে মাত্র একজন ব্যক্তিই এ ভাষায় নির্ভুলভাবে কথা বলতে পারতে। ভাষাটিকে টিকিয়ে রাখতে ২০১০ সালে ইয়োচা দেহি উইনতুন ন্যাশন ট্রাইবাল স্কুলে প্যাটউইন ভাষায় ক্লাস নেওয়া শুরু করা হয়। ক্যালিফোর্নিয়ার ভারতীয় লাইব্রেরির সংগ্রহেও প্যাটউইন ভাষার বই আছে। ইয়োচা দেহি উইনতুন ন্যাশনের তিও কিও কালচারাল সেন্টারে এ ভাষাটি নিয়ে গবেষণা করার জন্য একটি বিভাগও আছে।

পাজেহ : পাজেহ ভাষাটি এসেছে তাইওয়ানিজ আদিবাসী জনগণের কাছ থেকে। এ ভাষাটি অস্ট্রোনেশিয়ান ভাষার একটি উপভাষা। পাজেহ ভাষায় একমাত্র কথা বলতে পারতেন ৯৬ বছর বয়সী পান জিন জু নামে স্থানীয় নামে একজন নারী। মৃত্যুর আগে তিনি পুলিতে প্রায় ২০০ শিক্ষার্থী এবং মিয়াওলি ও তাইচুংয়ের কিছু শিক্ষার্থীকে নিয়মিত এ ভাষাটি শেখাতেন।

পুয়েলচি : আর্জেন্টিনার বিস্তীর্ণ একটি জনপদের পুয়েলচি জনগণের মৃতপ্রায় একটি ভাষার নাম ‘পুয়েলচি’। এ ভাষায় কথা বলে মাত্র পাঁচ থেকে ছয়জন মানুষ। তারা মারা গেলে ভাষাটি হয়তো একদম বিলুপ্ত হয়ে যাবে।

কাওয়াসকার : কাওয়াসকার ভাষাটি মূলত আলকালুফান ভাষা। এ ভাষায় কথা বলে দক্ষিণ চিলির কাওয়াসকার জনগণ। ভাষাটি বিভিন্ন ভাষা পরিবার থেকে এসে মিশেছে। এর মধ্যে আছে কাকাউহুয়া নামের একটি ভাষাও। যদিও বলা হয়, এ ভাষাটি কাওয়াসকার ও কাকাউহুয়া নামে দুটি ভাষা পরিবার থেকেই এসেছে। এ দুটি ভাষাকে আবার একত্রে বলা হয় আলকালুফান। বর্তমানে মাত্র ২০ জন মানুষ এ ভাষায় কথা বলতে পারে। এদের মাঝে কয়েকজন থাকে চিলির দক্ষিণ উপকূলের দ্বীপ ওয়েলিংটনে।

তানিমা : সলোমন দ্বীপপুঞ্জের তেমুতো প্রদেশের ভানিকরো দ্বীপ এবং ইমুয়া গ্রামের প্রায় হারিয়ে যেতে বসা ভাষার নাম ‘তানিমা’। ২০১২ সাল পর্যন্ত সেখানে লাইনল নালো নামে মাত্র একজন ব্যক্তি এ ভাষায় কথা বলতেন। গ্রামের প্রায় সবাই আগে তানিমা ভাষায় কথা বলত, এখন তারা সবাই সে অঞ্চলের জনপ্রিয় ভাষা পিজিন অথবা তিনু ভাষায় কথা বলে। তানিমা ভাষা শুধু অস্ট্রোনেশিয়ানই নয়, মালায়ো-পলিনেশিয়ান, মধ্যপ্রাচ্য এবং মহাসাগরীয় ভাষাও বটে।

তাওসিরো  : স্থানীয় পেরু থেকে ভিন্ন একটি ভাষা ‘তাওসিরো’। আহুরুনা নদীর উপনদী টাইগার এবং অকায়ুর তীরের মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। ২০০৮ সালে এক গবেষণা থেকে জানা যায়, এ ভাষায় নির্ভুলভাবে কথা বলতে পারে মাত্র একজন মানুষ। যার কারণে এটি বিলুপ্তপ্রায় ভাষার মধ্যে একটি। লরেটো রাজ্য এবং টাইগার নদীর আশপাশে অনেক স্থানীয়ই তাওসিরো ভাষায় কথা বলে না এমন ব্যক্তিদের বিয়ে করে স্প্যানিশ ভাষায় কথা বলা শুরু করে।

তিনিগুয়া : কলম্বিয়ার গুয়াবেরো নদীর কাছে একটি এলাকায় প্রায় হারিয়ে যেতে বসা একটি ভাষার নাম তিনিগুয়া। ২০০৮ সাল নাগাদ সেখানে মাত্র একজন ব্যক্তি এ ভাষায় কথা বলত। বিলুপ্ত ভাষা ‘পামিকুয়া’ থেকে এ ভাষার উৎপত্তি। ইয়ারি নদীর পাশে তিনিগুয়া গোষ্ঠী থেকে এ ভাষাটির মূল উৎপত্তি। তবে বর্তমানে এ গোষ্ঠীর বংশধররা আপার গুয়াবেরো এবং ইয়ারি নদীর মাঝে মেটা ডিপার্টমেন্টে বসবাস করছে। তাদের মাঝে কেউ এ ভাষায় আর কথা বলে না।

তলোয়া : ক্যালিফোর্নিয়ার ক্রিসেন্ট সিটির কাছে স্মিথ নদীর পাশে রাঞ্চেরিয়ায় তলোয়া নামে স্থানীয় আমেরিকান গোষ্ঠী আছে। সেখানেই কয়েকজন সদস্য তলোয়া ভাষায় কথা বলে। আথাবাসকান ভাষা পরিবারের সদস্য এ তলোয়া ভাষা। ২০০৮ সাল নাগাদ এ ভাষায় কথা বলতে পারত মাত্র একজন ব্যক্তি। সে হিসাবে তলোয়া ভাষার খুব দ্রুত বিলুপ্ত হয়ে যাওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

ভিলেলা : আর্জেন্টিনার স্বদেশি ভাষা ভিলেলা। প্যারাগুয়ে বর্ডারের কাছে পশ্চিম চাকোতে রেসিসটেন্সিয়া নামক অঞ্চলে বর্তমানে এ ভাষায় শুধু কয়েকজন বয়স্ক ব্যক্তি কথা বলে। ভিলেলা গোষ্ঠীর অনেকেই এখন শহরমুখী হচ্ছে। তারা স্প্যানিশে কথা বলতেই বর্তমানে বেশি স্বাচ্ছন্দ্যবোধ করে। ওকোল, চিনিপি এবং সিনিপি নামে ভিলেলার কয়েকটি উপভাষা ছিল। এদের মধ্যে বর্তমানে শুধু ওকোল ভাষাটিই টিকে আছে। ভাষাবিদদের অনেকেই ভিলেলাকে বিচ্ছিন্ন ভাষা বলে। আবার অনেকের মতে, এটি লুলে-ভিলা নামক ভাষা পরিবারের ‘লুলে’ নামক আর্জেন্টেনিয়ান ভাষারও অন্তর্ভুক্ত।

বাংলাদেশে বিপন্ন কিছু ভাষা

বাংলাদেশেও বেশকিছু ভাষা রয়েছে যেগুলো বর্তমানে ব্যবহার করে খুব কমসংখ্যক মানুষ। এ ভাষায় কথা বলা স্থানীয়রা যদি নিশ্চিহ্ন হয়ে যায় তবে ভাষাগুলোও বিলুপ্ত হয়ে যাবে। ঢাকার আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা ইনস্টিটিউট বেশ কয়েকটি ভাষাকে বিপন্ন বলে চিহ্নিত করেছে। বাংলাদেশের বিলুপ্তপ্রায় ভাষার মধ্যে আছে

বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী : বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী মূলত মণিপুরী একটি জাতি এবং এদের ভাষার নামও বিষ্ণুপ্রিয়া মণিপুরী। উত্তর-পূর্ব ভারত, বাংলাদেশ, মিয়ানমার ও অন্যান্য কিছু দেশ থেকে এ জাতির উদ্ভব হয়েছে। বাংলাদেশ ও ভারতের প্রায় ১ লাখ ১৫ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলে। তারা নিজেদের ভাষাকে ‘ইমার ঠার’ বা মাতৃভাষা বলে। ভাষাটি ইতিমধ্যেই বিপন্নের তালিকায় রয়েছে।

বম : ‘বম’ ভাষা বম নৃগোষ্ঠীর ভাষা। এ ভাষা চীনা-তিব্বতি ভাষা পরিবারের কুকি-চিন-নাগা শাখার অন্তর্ভুক্ত। বান্দরবান জেলাতেই মূলত বমদের বসবাস। বাংলাদেশের প্রায় ১৪ হাজার মানুষ বম ভাষায় কথা বলে। বাংলাদেশের বিপন্ন ভাষা তালিকায় চলে এসেছে বম ভাষার নামও।

চাক : সিনো-তিব্বতীয় ভাষা গোষ্ঠীর শাখার নাম চাক ভাষা। এ ভাষায় কথা বলে মূলত বার্মা এবং চীনের অধিবাসীরা। বাংলাদেশের প্রায় ৫ হাজার ৫০০ মানুষ চাক ভাষায় কথা বলে। চাক ভাষার বেশ কয়েকটি কথ্যরূপ আছে। যেমনÑ কাদো, কানান ইত্যাদি। চক জনগোষ্ঠীরা চাক ভাষায় কথা বলে। চাক মূলত টোনাল বা সুরপ্রধান ভাষা। এ ভাষার বাক্যগঠন বাংলার মতোই। বিপন্ন তালিকায় নাম রয়েছে বলে ভাষাটিকে টিকিয়ে রাখার জন্য ইদানীং কিছু সাহিত্যচর্চা করা হচ্ছে চাক ভাষায়।

শো : শো ভাষা হচ্ছে বাংলাদেশ এবং বার্মার কুকি ভাষা থেকে উৎপন্ন উপভাষা গুচ্ছ। বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের ২ হাজার ৩৪০ জন মানুষ শো ভাষায় কথা বলে।

হাকা চিন : পূর্ব ভারত, মিয়ানমার ও বাংলাদেশে প্রচলিত একটি তিব্বতি-বর্মী ভাষার নাম হাকা চিন। এ ভাষায় কথা বলে প্রায় সাড়ে চার লাখ মানুষ। তরুণদের মধ্যে হাকা চিন ভাষায় সাক্ষরতার হার বেশি। ভাষাটি লাতিন লিপিতে লেখা হয়। আশি ও নব্বইয়ের দশকে এ ভাষায় বাইবেল অনুবাদ করা হয়।

হাজং : তিব্বতি-বর্মী শব্দবিশিষ্ট একটি ইন্দো-আর্য ভাষার নাম হাজং। ভারতের পশ্চিমবঙ্গ, আসাম, মেঘালয় ও অরুণাচল প্রদেশে এবং বাংলাদেশের ময়মনসিংহে প্রায় ১৯ হাজার হাজং জাতির লোক এ ভাষাতে কথা বলে। ভাষাটি অসমিয়া লিপিতে লেখা হয়।

খাসি : ‘খাসি’ ভাষা একটি অস্ট্রো-এশীয় ভাষা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যে এ ভাষার প্রচলন বেশি। আসামের পাহাড়ি জেলাগুলোতে, বাংলাদেশ-ভারত সীমান্তের কাছে, বাংলাদেশের অভ্যন্তরে অধিকাংশ লোক এ ভাষায় কথা বলে। খাসি ভাষার মৌখিক সাহিত্য লোককথা ও লোকগাথায় সমৃদ্ধ। খাসিরা যে এলাকায় বাস করে সেখানকার পাহাড়, পর্বত, নদী, জলপ্রপাত, পাখি, ফুল ও প্রাণীর পেছনে সাধারণত খাসি ভাষায় একটি করে গল্প আছে।

ককবরক : ভারতের ত্রিপুরা এবং বাংলাদেশে বসবাসরত ত্রিপুরি জাতির লোকদের মাতৃভাষার নাম ককবরক। ‘কক’ অর্থ ‘ভাষা’ এবং ‘বরক’ অর্থ ‘মানুষ’ নিয়ে ককবরক শব্দটি গঠিত। এ শব্দটির অর্থ ত্রিপুরি মানুষের ভাষা। ১৯৭৯ সালে ত্রিপুরার সরকারি ভাষা হিসেবে স্বীকৃতি পায় এটি। এ ভাষায় কথা বলে ৬ লাখ ৯৪ হাজার মানুষ।

কুরুখ : কুরুখ ভাষা মূলত দ্রাবিড় ভাষা। ওঁরাও এবং কিশান জনগোষ্ঠী এ ভাষায় কথা বলে। বাংলাদেশের উত্তরাংশে, ভারতের ওড়িশা, বিহার, ঝাড়খ-, মধ্যপ্রদেশ, ছত্রিশগড়, পশ্চিমবঙ্গ, নেপাল এবং ভুটানের জনগোষ্ঠীরা এ ভাষায় কথা বলে। নারায়ণ ওঁরাও নামে একজন চিকিৎসক এ ভাষার জন্য তোলং সিকি লিপি উদ্ভাবন করেছে। বাংলাদেশে ১৪ হাজার মানুষ এ ভাষায় কথা বলে।

রাখাইন : মারমার একটি উপভাষার নাম রাখাইন। এটি বেশ প্রাচীন একটি ভাষা। রাখাইন ভাষায় সাহিত্য রচনা হচ্ছে দীর্ঘদিন ধরে। বাংলাদেশের পটুয়াখালী, কক্সবাজার, বরগুনা, চট্টগ্রাম ও পার্বত্য চট্টগ্রামের প্রায় ১৭ হাজার লোক রাখাইন ভাষায় কথা বলে।

পাংখুয়া : বাংলাদেশের কুকি উপজাতিরা মূলত এ ভাষায় কথা বলে। এ উপজাতিরা দ্বিভাষী। বাংলাতেও তারা লেখাপড়া করে। ভারতেও এ ভাষার কিছু জনগণ বাস করে।

জয়ন্তিয়া : এ ভাষাটি একটি অস্ট্রো-এশীয় ভাষা। এটি ভারত ও বাংলাদেশে জয়ন্তিয়া জনগোষ্ঠীর লোকেদের কথ্যভাষা। ভারতের মেঘালয় রাজ্যের কিছু অংশে এ ভাষায় মানুষ কথা বলে। জয়ন্তিয়া ভাষাতে ৩০টি বর্ণমালা আছে।

সাদরি : সাদরি ভাষার আরেক নাম নাগপুরি। এ ভাষায় ভারতের বিহার, ঝাড়খ-, ওড়িশা, উত্তর পশ্চিমবঙ্গ ও বাংলাদেশের ক্ষুদ্র জনগোষ্ঠী কথা বলে।

সূত্র: দেশ রূপান্তর

Sharing is caring!

Leave a Comment