ফিরে দেখি ফরাজী আন্দোলন

ফিরে দেখি ফরাজী আন্দোলন

  • মেহেদী হাসান

ইসলামী আন্দোলন হিসেবে ফরাজি আন্দোলন অন্যতম। ১৮১৮ সালে মূলত এই আন্দোলনের সূত্রপাত মনে করা হলেও ১৮৩০ সালে এই আন্দোলন সবার সম্মুখে আসে। ওয়াহাবী আন্দোলনের মতোই ফরাজী আন্দোলন সাড়া ফেলে দিয়েছিলো তখনকার মানুষদের মাঝে। এই আন্দোলনের ভৌগলিক অবস্থান ছিলো পূর্ববঙ্গের ঢাকা, ফরিদপুর, ময়মনসিংহ ও বাখেরগঞ্জে। ফরাজি আন্দোলনের শুরু করেছিলেন হাজি শরিয়তউল্লাহ। 

তিনি ছিলেন একজন ধর্মসংস্কারক। তিনি কুরআনের মৌলিক বিষয়ের ওপর গুরুত্বারোপ করেছিলেন এবং পৌত্তলিকাতাকে বর্জনের নির্দেশ দেন কলমা, নমাজ, রোজা, জাকাত হজের ওপর গুরুত্ব দেন। এমনকি পীরের দরগায় বাতি দেওয়ার মতো শিরকী কাজে তিনি বিরোধীতা করেন। মূলত তিনি এই আন্দোলনটি ধর্মীয় আন্দোলনের দিকে নিয়ে যান।

ধর্মীয় বিষয়ের পাশাপাশি অর্থনৈতিক ও অন্যান্য শোষণের হাত থেকে মানুষদের বাঁচাতে সচেতন থাকতেন। জমিদার ও নীলকরদের অন্যায় অবিচারের বিরুদ্ধে তিনি সোচ্চার ছিলেন। শরিয়উল্লাহ ফরিদপুর, বরিশাল, ঢাকা, নারায়নগঞ্জ, চাঁদপুর, কুমিল্লাতে ফরাজি আন্দোলন ব্যাপক জনপ্রিয় করে তুলেছিলন।

১৮৪৩ সালে শরিয়ত উল্লাহ মৃত্যুবরন করলে তার পুত্র মহসিন দুদু ফরাজি আন্দোলন পরিচালনার দায়িত্ব গ্রহণ করেন। দুদুমিয়া ফারাজি আন্দোলনকে রাজনৈতিক আন্দোলনে রুপান্তরিত করেন। তিনি তার সকলকে অন্যায় কার্যকলাপ থেকে বিরত থাকার আহ্বান জানান। তিনি দায়িত্বরত অবস্থায় মাজার, পীর, মহরম ইত্যাদি কাজে অযথা অর্থব্যয় করতে নিষেধ করেন। জমি যহেতু আল্লাহর দান এটি সবাই ভোগ করতে পারবে তাই তিনি খাজনা না দিতে ঘোষনা করেন।

হাজী শরিয়ত উল্লাহ। ছবি: সংগৃহীত

দুদুমিয়া ‘ফরাজি খিলাফত’ নামে একটি প্রশাসনিক ব্যবস্থা গড়ে তোলেন। এখানে শীর্ষ পর্যায়ের নেতা ছিলেন ‘ওস্তাদ’ এবং সর্বনিন্ম নেতা ছিলেন ‘খলিফা’। তিনি তার এলাকাকে ‘হক্কায়’ বিভক্ত করেন। প্রত্যেক হল্কায় একজন খলিফা থাকতেন। খলিফাদের কাজ ছিলো ঐ অঞ্চলের মানুষদের ইংরেজদের অত্যাচারের বিরুদ্ধে ঐক্যবদ্ধ করা।

ফরাজি আন্দোলনের প্রেক্ষিতে তারা সরকারি বিচারব্যবস্থার বিপরীতে নিজস্ব ফরাজি আদালত ও সালিশ ব্যবস্থা গড়ে তুলেছিলো। বিচারকদের বলা হতো্ মুন্সি। এরা দেওয়ানি এবং ফৌজদারি দুই ধরনের মামলার নিষ্পত্তি করতেন। দুদুমিঞার জনপ্রিয়তা জমিদারদের শঙ্কিত করে তুলেছিল।

১৮৪১ সালে কানাইপুরের এবং ১৮৪২ সালে ফরিদপুরের জমিদার বাড়িতে হামলা চালান দুদুমিয়া। তারা ফরিদপুরের নীলকুঠির ম্যানেজার ডানলপের নীলকুঠি ধ্বংস করেন। অতিরিক্ত জোড়পূর্বক খাজনা আদায় এবং মানুষদের ওপর অত্যাচার করায় এই হামলা করা হয়।

এই ঘটনায় দুদুমিয়া গ্রেফতার হলেও পর্যাপ্ত প্রমানের অভাবে ছেড়ে দিতে বাধ্য হয়। সে সময় থেকে তিনি অসুস্থ হয়ে পড়েন এবং আন্দোলনেও কিছুটা ধীরগতি হয়ে পড়ে। ১৮৬২ সালে দুদুমিয়া মারা গেলে তার ছেলে আন্দোলন চালিয়ে গেলেও তা অতটা বেগবান ছিলো না। ঐতিহাসিকদের মতে ১৮৫৭ সালই ছিলো ফরাজি আন্দোলনের শেষ সময়।

Sharing is caring!

Leave a Comment