এ কি অবস্থা পাংশার কলেজ মোড়ের!

এ কি অবস্থা পাংশার কলেজ মোড়ের!

  • ঋতুপর্না চাকী

রাজবাড়ি জেলার পাংশা উপজেলার কলেজ মোড় এলাকাটি এখন হয়ে উঠেছে বর্জ্য ফেলার এক অন্যতম স্থান। ফলে দূষিত হচ্ছে এই এলাকার পরিবেশ, ক্ষতি হচ্ছে ফসলি জমিরও। চরম দূর্গন্ধ আর মশা মাছিতে অতিষ্ঠ এলাকাটির প্রায় শতাধিক মানুষ।

২০১৭ সাল থেকে পাংশা উপজেলার কলেজ মোড় এলাকাটিকে বর্জ্য ফেলার স্থান হিসেবে ব্যবহার করে আসছে পাংশা পৌরসভার সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষ। প্রতিদিন পৌরসভার নয়টি ওয়ার্ডের বর্জ্য ফেলা হয় এখানে।

পৌরসভার এই জায়গাটি মূলত একটি বাস টার্মিনালের জায়গা হিসেবে চিহ্নিত থাকলেও তা এখন পৌরসভার বর্জ্য ফেলার জায়গা হিসেবেই ব্যবহৃত হচ্ছে। একদিকে পৌরসভার বর্জ্য আর অন্য দিকে পাশেই ইট ভাটা এবং একটি রাইস মিল থাকার করণে এই এলাকাটির পরিবেশ হয়ে উঠেছে বসবাসের অনুপযোগী। 

ফলে কলেজ মোড় এলাকাটিতে বসবাসরত শতাধিক পরিবার দিন কাটাচ্ছে চরম অস্বাস্থ্যকর পরিবেশে। আর এজন্য তাঁদের রোগব্যাধি লেগেই আছে। প্রতিনিয়ত তাঁরা হাঁপানি ও শ্বাসকষ্টজনিত রোগে আক্রান্ত হচ্ছে। 

এলাকাটিতে একটি  বাস টার্মিনাল থাকায় এলাকাটিকে ঘিরে গড়ে উঠেছে  বাজার ও দোকানপাট। কিন্তু এখন এখানে  বর্জ্য ফেলার করণে চরম দূর্গন্ধ আর মশা মাছির অত্যাচারে বাস থেকে নেমে আসা কোনো যাত্রী আর এই বাজারে প্রবেশ করে না। ফলে দিন দিন কমে যাচ্ছে  ক্রেতা। এ বিষয়ে স্থানীয় ফাস্ট ফুড দোকানদার মোহাম্মদ  শরিফ  বলেছেন, আগে এখানে  অনেক  বেঁচাকেনা হতো। দূর থেকে আসা যাত্রীরা এখানে এসে বিশ্রাম নিয়ে  খাওয়া  দাওয়া  করে তারপর  আবার গন্তব্যে যাত্রা করতো। কিন্তু  এখন প্রচণ্ড দূর্গন্ধ আর দোকানগুলোর খাবারে মশা মাছি বসে থাকা দেখে ক্রেতারা দূর থেকেই চলে যায়। ফলে স্থানীয় দোকানদারদের ব্যবসা এখন প্রায় বন্ধ  হয়ে যাওয়ার পথে। যেখানে এই একটিমাত্র দোকান চালিয়ে নির্বাহ করতে হয় তাদের সংসারের যাবতীয় খরচ ও ছেলে মেয়েদের লেখাপড়ার খরচ, সেখানে প্রতিনিয়ত এভাবে পৌরসভার ময়লা ফেলার কাজ চলতে থাকলে এসময়  তাঁদের দোকান  বন্ধ  করে দিতে হবে। আর দোকান বন্ধ হলে অনেক পরিবার হারাবে তাদের একমাত্র কর্মক্ষেত্র ও আয়ের একমাত্র উৎস। বন্ধ হয়ে যাবে তাদের ছেলে মেয়েদের পড়াশোনা। 

উন্মুক্ত আবর্জনার কারণে দূষিত হচ্ছে পরিবেশ। ছবি: ঋতুপর্না চাকী

বিভিন্ন বাসা-বাড়ি আর ব্যবসা প্রতিষ্ঠান থেকে যে বিপুল পরিমাণ বর্জ্য তৈরি হয় তা এই উন্মুক্ত স্থানে সরাসরি ফেলার কারণে নষ্ট হচ্ছে এলাকাটির পরিবেশ। এ বিষয়ে সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের দপ্তরে ঘুরেও মিলছে না কোনো ফল। স্থানীয়দের অভিযোগ, এই জায়গাটিতে বর্জ্য ফেলার কারণে দৈনন্দিন জীবনে নানান সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন তাঁরা। ক্ষতি  হচ্ছে  তাদের ফসলি জমিরও।

এলাকাটির স্থানীয় বাসিন্দা সীমা অধীকারির সাথে কথা বললে তিনি বলেন এখানে সব সময় নোংরা আর্বজনা ছিটানো পড়ে থাকে।এর থেকে নানা রোগ জীবাণু সৃষ্টি হচ্ছে। প্রচণ্ড দূর্গন্ধে তাঁদের নিশ্বাস নিতেও কষ্ট হয়। ফলে বাড়ছে তাঁদের স্বাস্থ্য ঝুঁকিও। কিন্তু পৌরসভা থেকে কখনোই স্থানটিকে জীবাণুমুক্ত করার জন্য কোনো ব্যবস্থা গ্রহণ করা হয় নাই।

পরিবেশ রক্ষায় সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষকে যত তাড়াতাড়ি সম্ভব কার্যকারী পদক্ষেপ গ্রহণের আহ্বান জানান এলাকাটিতে বসবাসকারী শিক্ষিত যুব সমাজ।

এ বিষয়ে পৌরমেয়রের সঙ্গে কথা বললে তিনি জানিয়েছেন বর্জ্য নিষ্কাশনের জন্য জায়গা নির্ধারণ নিয়ে কিছু জটিলতা রয়েছে। সঠিক কোনো  জায়গা  না থাকায় আপাতত তাঁরা এখানে বর্জ্য ফেলছেন। তবে দ্রুতই সঠিক  জায়গা নির্ধারণ করে এই এলাকাটি থেকে বর্জ্য নিষ্কাশনের ব্যবস্থা করা হবে বলে আশ্বাস দেন তিনি।

Sharing is caring!

Leave a Comment