কত শত নির্মমতার সাক্ষী জল্লাদখানা বধ্যভূমি!

কত শত নির্মমতার সাক্ষী জল্লাদখানা বধ্যভূমি!

  • জশোয়া

বাংলাদেশের ইতিহাসের উল্লেখযোগ্য একটি অংশ মুক্তিযুদ্ধ। স্বাধীন বাংলাদেশের পেছনে কতটা ত্যাগ তিতীক্ষা জড়িয়ে আছে তার প্রমাণ যেন আজও জীবন্ত হয়ে আছে মিরপুরের জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে। দর্শকদের আনাগোনা খুব একটা বেশি না হলেও মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসের সাথে জল্লাদখানা বধ্যভূমির রয়েছে সরাসরি সম্পৃক্ততা! 

‘স্বাধীনতা’, ৪ অক্ষরের সহজ শব্দ বটে, উচ্চারণে বাঁধা বিপত্তিও খুব একটা নেই। তবে এর পেছনের ইতিহাস এতোটাও সহজ নয়। আজও স্পষ্ট চোখে ফুটে উঠে সেই নির্মম হত্যাকান্ড, অত্যাচার, নির্যাতন। এই প্রজন্ম বই পড়ে ইতিহাস ঘাটাঘাটি করে হয়তোবা অনুভব করার চেষ্টা করে সেই নির্মমতা। তবে কতটুকু সফল হতে পারে তা বলা দায়!

তবে মুক্তিযুদ্ধের সময়কার সেই নির্মমতা যেন আজও জীবন্ত মিরপুরের এই জল্লাদখানা বধ্যভূমিতে। জল্লাদখানা বধ্যভূমি বা পাম্পহাউজ বধ্যভূমি ঢাকার মিরপুর-১০ নম্বরে অবস্থিত, যা বাংলাদেশের অন্যতম একটি বধ্যভূমি। ১৯৭১ সালের স্বাধীনতা যুদ্ধের সময় বাঙ্গালিদের পাকিস্তানি হানাদার বাহিনী ও তাদের এদেশীয় দোসর বিহারি, রাজাকার, আলবদর, আল-শামস ,তাদের ট্রেনিং প্রাপ্ত জল্লাদ দিয়ে জবাই করে বড় বড় সেফটি ট্যাঙ্কির ভিতরে ফেলে রাখত।

স্বাধীনতার পর এ বধ্যভূমি থেকে ৭০টি মাথার খুলি, ৫৩৯২টি অস্থিখণ্ড, মেয়েদের শাড়ি, ফ্রক, ওড়না, অলংকার, জুতা, তসবিসহ শহীদদের ব্যবহার্য নানা জিনিসপত্র উদ্ধার করা হয়েছিল। যা মুক্তিযুদ্ধের সময় পাকবাহিনীর নির্মমতার প্রতীক।  

১৯৯৮ সালে তৎকালীন সরকার দেশের বধ্যভূমিগুলো চিহ্নিতকরণ ও সংস্কারের প্রকল্প গ্রহণ করে এবং ১৯৯৯ সালের ১৫ই নভেম্বর বাংলাদেশ সেনাবাহিনী-এর ৪৬ স্বতন্ত্র পদাতিক ব্রিগেড এর সহযোগিতায় মিরপুরের দুটি জায়গায় খননকাজ চালিয়ে মুক্তিযুদ্ধ যাদুঘর ও দুটি বধ্যভূমি আবিষ্কার করে। এরপর এ দুটিসহ পুরো মিরপুরে মোট চারটি বধ্যভূমি চিহ্নিত করা হয়।

২০০৮ সালে তৎকালীন সরকার পুনরায় জল্লাদখানা কর্মসূচি শুরু করে এবং স্থপতি ও কবি রবিউল হুসাইন এর সার্বিক পরিকল্পনায় মুক্তিযুদ্ধ জাদুঘর এর প্রচেষ্টায় তৈরি করা হয় জল্লাদখানা বধ্যভূমি স্মৃতিপীঠ। এই বধ্যভূমিটি আয়তনে খুব বড় নয়।  ছোট্ট এই জায়গাটির পূর্বপাশে রয়েছে টেরাকোটা ইট ও লোহার সমন্বয়ে তৈরি শিল্পী রফিকুন নবী ও মুনিরুজ্জামান এর যুগ্মভাবে করা একটি ভাস্কর্য “জীবন অবিনশ্বর”। 

বধ্যভূমির পাশেই, সর্বসাধারণের দেখার জন্য রাখা হয়েছে সে কূপ যার ভেতরে অসংখ্য মানুষের লাশ গুম করা হয়েছিলো। সে কূপের ওপরে রয়েছে একটি কাচের ঢাকনা। যেখানে লাল রং দিয়ে লেখা আছে, ‘মাথা নত করি সকল শহীদদের প্রতি’। শুরু দিকেই একটি ঘরে রয়েছে রেজিষ্ট্রেশন বুক, যারা ইতিহাসের সাক্ষী হতে এই বধ্যভূমি ভ্রমণে আসেন তাদের সকলের নাম ও ইতিহাসের প্রতি শ্রদ্ধা জানিয়ে কিছু মন্তব্য লিপিবদ্ধ করা হয় এখানে। 

স্বাধীনতার অর্ধশত বছর পার হলেও ৫০ বছর পূর্বের সেই নির্মমতা, ধ্বংসযজ্ঞ আমরা এতো সহজে ভুলতে পারিনা। কত ত্যাগ তিতিক্ষার বিনিময়ে আমাদের এই স্বাধীনতা তা এই বধ্যভূমির মধ্যে প্রবেশ করলে যেন চোখের সামনে দৃশ্যমান হয়। এই বধ্যভূমির ভেতরে প্রবেশ করলে মনে হয় যেনো বাতাসে ভেসে বেড়াচ্ছে রক্তের গন্ধ, দেয়ালজুড়ে ভেসে বেড়াচ্ছে সেই নির্মম চিত্র।

Sharing is caring!

Leave a Comment