বিধ্বস্ত অস্ট্রেলিয়া
স্পোর্টস ডেস্ক : ২০১৫ বিশ্বকাপ গ্রুপপর্বে অস্ট্রেলিয়া-নিউজিল্যান্ড ম্যাচের কথা মনে আছে? অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে সেদিন টস জিতে ব্যাট করতে নেমে কিউই পেসার ট্রেন্ট বোল্টের আগুন ঝরা বোলিংয়ে মাত্র ১৫১ রানেই গুটিয়ে গিয়েছিল অস্ট্রেলিয়া। পরে অবশ্যলি নিউজিল্যান্ডও চরম ব্যাটিং বিপর্যয়ে পড়েছিল, তবে ১ উইকেটের রুদ্ধশ্বাস জয় তুলে নিয়েছিল।
গত ফেব্রুয়ারির সেই দুঃস্মৃতি ঠিক এক বছরের মাথায় ইডেন পার্কেই আবার ফিরিয়ে আনল অস্ট্রেলিয়া। তবে এবার আগে ব্যাট করতে নেমে নয়, বুধবার নিউজিল্যান্ডের দেওয়া ৩০৮ রানের লক্ষ্যে খেলতে নেমে ১৪৮ রানেই অলআউট অস্ট্রেলিয়া। আগের বারের চেয়েও এবার ৩ রান কম। এবারও নিউজিল্যান্ডের বোলিং আক্রমণে সামনে থেকে নেতৃত্ব দিয়েছেন বোল্ট। তার সঙ্গে ছিলেন আরেক পেসার ম্যাট হেনরি।
এই দুজন তাদের প্রথম স্পেলেই অস্ট্রেলিয়ার টপ অর্ডার ভেঙে চুরমার করে দেন। দুজনের তোপে পড়ে ৪১ রান তুলেই ওপরের দিকের ৬ ব্যাটসম্যানকে হারায় অসিরা। সপ্তম উইকেটে ম্যাথু ওয়েড ও জেমস ফকনারের ৭৯ রানের জুটিতে সফরকারীরা কোনোমতে এক শ’র আগে অলআউট হওয়ার লজ্জা থেকে বেঁচেছে, তবে বড় পরাজয় এড়াতে পারেনি। অস্ট্রেলিয়াকে ১৫৯ রানের বড় ব্যবধানে হারিয়ে ছয় বছর পর মাঠে গড়ানো চ্যাপেল-হ্যাডলি সিরিজে ১-০ ব্যবধানে এগিয়ে গেছে নিউজিল্যান্ড। আগামী শনিবার ওয়েলিংটনে হবে তিন ম্যাচ সিরিজের দ্বিতীয়টি।
৩০৮ রান তাড়া করতে নেমে দলীয় ১০ রানেই শন মার্শের উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া। হেনরির বলে মার্টিন গাপটিলকে ক্যাচ দেন মার্শ। তখনও কে জানত, একটু পরেই তাসের ঘরের মতো ভেঙে পড়বে অস্ট্রেলিয়ার ব্যাটিং লাইনআপ। দলীয় ৩৩ থেকে ৪১, ৮ রানের মধ্যে পরের পাঁচ উইকেট হারায় অস্ট্রেলিয়া! এর মধ্যে ৩৯ থেকে ৪১, ৩ রানের মধ্যেই হারায় ৪ উইকেট! প্রথমে হেনরির বলে বোল্ড অধিনায়ক স্টিভেন স্মিথ (১২)। বোল্টের বলে এলবিডব্লিউ ডেভিড ওয়ার্নার (১২)। চারে নামা জর্জ বেইলি হেনরির বলে কোরি অ্যান্ডারসনকে ক্যাচ ২ রান করেই। পরের ওভারের প্রথম ও শেষ বলে যথাক্রমে গ্লেন ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল মার্শকে বিদায় করেন বোল্ট। ম্যাক্সওয়েল ও মিচেল- দুজনই ডাক মারেন। সপ্তম উইকেটে প্রতিরোধ গড়ার চেষ্টা করেছিলেন ওয়েড ও ফকনার। তবে এই দুজনের ৭৯ রানের জুটি ভাঙার পরেই আবার পথ হারায় অস্ট্রেলিয়া। পর পর দুই ওভারে ফিরে যান ওয়েড (৩৭) ও ফকনার (৩৬)। ওয়েডের উইকেটটি নেন অ্যান্ডারসন। আর ফকনারকে ফেরান অ্যাডাম মিলনে।
এরপর ইনিংসে প্রথমবারের মতো বল করতে এসে পর পর দুই বলে জন হাস্টিং ও কেন রিচার্ডসনকে ফিরিয়ে অস্ট্রেলিয়ার ইনিংসে ইতি টেনে দেন মিচেল স্যান্টনার। ৩৮ রানে ৩ উইকেট নেন বোল্ট। হেনরিও ৩ উইকেট নেন ৪১ রানের বিনিময়ে। আর স্যান্টনার কোনো রান না দিয়েই নেন ২ উইকেট! এর আগে মার্টিন গাপটিলের ৯০, হেনরি নিকোলাসের ৬১, ব্রেন্ডন ম্যাককালামের ৪৪ ও মিচেল স্যান্টনারের অপরাজিত ৩৫ রানের সুবাদে ৮ উইকেটে ৩০৭ রান করে নিউজিল্যান্ড।
নিউজিল্যান্ডের সংগ্রহটা অবশ্য ৩৩০ থেকে ৩৫০ হতে পারত, ২৪.৩ ওভারেই ২ উইকেটে ১৮০ রান তুলেছিল তারা। কিন্তু মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা কার্যকরী ইনিংস খেলতে না পারায় শেষ পর্যন্ত ৩০৭ রানের বেশি হয়নি। অকল্যান্ডের ইডেন পার্কে টস হেরে ব্যাট করতে নেমে স্বাগতিকদের উড়ন্ত সূচনা দেন দুই উদ্বোধনী ব্যাটসম্যান গাপটিল ও ম্যাককালাম। চোট কাটিয়ে পাকিস্তানের বিপক্ষে ওয়ানডেতে ফিরে গোল্ডেন ডাক মেরেছিলেন ম্যাককালাম। তবে এদিন অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে চিরচেনা আগ্রাসী ম্যাককালামকেই দেখা যায়। এটা যে তার বিদায়ী সিরিজও। অস্ট্রেলিয়ার বিপক্ষে ওয়ানডের পর দুই ম্যাচের টেস্ট সিরিজ খেলে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটকে বিদায় বলবেন নিউজিল্যান্ডের অন্যতম সেরা এই ব্যাটসম্যান। গাপটিলের সঙ্গে ১০.৫ ওভারে ৭৯ রানের উদ্বোধনী জুটি গড়েন ম্যাককালাম। জেমস ফকনারের বলে বোল্ড হয়ে ফেরা ম্যাককালাম ২৯ বলে ৫টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৪৪ রান করেন।
কেন উইলিয়ামসন অবশ্য এদিন রানের খাতা খোলার আগেই সাজঘরের পথ ধরেন। ওয়ানডেতে ২০১৩ সালের পর এই প্রথম ডাক খেলেন এই ডানহাতি। এরপর তৃতীয় উইকেটে হেনরি নিকোলাসের সঙ্গে ঠিক ১০০ রানের আরেকটি ভালো জুটি গড়েন গাপটিল। কিন্তু গাপটিল নিজের ১১তম ওয়ানডে সেঞ্চুরিটা মিস করেছেন রানআউটে কাটা পড়ায়। গ্লেন ম্যাক্সওয়েলের থ্রোতে রানআউট হওয়া গাপটিল ৭৬ বলে ৮ চার ও ৫ ছক্কায় ৯০ রান করেন। দলীয় ২৩১ রানে নিকোলাস ফেরার আগে করেন ৬১ রান।
এরপর মিডল অর্ডার ব্যাটসম্যানরা কার্যকরী ইনিংস খেলতে না পারলেও শেষ দিকে আটে নামা মিচেল স্যান্টনারের অপরাজিত ৩৫ রানের সুবাদে নির্ধারিত ৫০ ওভারে ৮ উইকেটে ৩০৭ রানের ভালো পুঁজি পায় নিউজিল্যান্ড। স্যান্টনারের ৩৯ বলের ইনিংসে ছিল ২টি ছক্কা ও একটি চারের মার। অস্ট্রেলিয়ার পক্ষে জস হ্যাজেলউড, মিচেল মার্শ ও জেমস ফকনার দুটি করে উইকেট নেন। জন হাস্টিংয়ের ঝুলিতে জমা পড়ে একটি উইকেট।