টি-টোয়েন্টি ক্রিকেট এলো যেভাবে
- আব্দুল কাইয়ুম তালুকদার
ক্রিকেট শব্দটি শুনলেই মাথায় আসে হেলমেট পরে ব্যাট হাতে দুজন ব্যক্তি বাইশ গজের দুই প্রান্তে দাঁড়ানো, একজন বোলার বল ছুড়ে মারতে প্রস্তুত, একজন উইকেট কিপার ও বাকিরা ফিল্ডার। ক্রিকেট খেলা যখন শুরু হয় তখন নির্দিষ্ট সময় ছিল না। যতদিন খেলায় ফল না আসবে, ততদিন খেলা চলবে। এরপরই খেলায় উত্তেজনা আনতে তা পাঁচ দিনের খেলায় রূপান্তর করা হয়। সেখান থেকে আসে একদিনের ম্যাচ। দীর্ঘদিন ক্রিকেটে এই দুই ফরমেটই চালু ছিল। কিন্তু ২০০৩ সালে এমন কিছু শুরু হয় যা আগে কোনোদিন কেউ ভাবেনি। ক্রিকেটকে নামিয়ে আনা হয় বিশ ওভারের খেলায়।
ক্রিকেটের জন্মভূমি ইংল্যান্ড। সেখানে ক্রিকেটকে রক্ষা করার জন্য সর্বোচ্চ চেষ্টা করা হয়। ২০০২ সালের দিকে ইসিবি বা ইংল্যান্ড ক্রিকেট বোর্ড মাঠে দর্শক কমে যাওয়ায় দুশ্চিন্তায় ছিল। ধীরে ধীরে ক্রিকেট উন্মাদনা যেমন কমছিল তেমনি স্পন্সর সংকট দেখা দিতে শুরু করে। বিশেষ করে ইংল্যান্ডের তরুন প্রজন্মের লোকেরা ক্রিকেট বিমুখ হয়ে ওঠে। এমন অবস্থায় ইসিবি খুঁজছিল এমন কিছু যা দর্শকদের মাঠে টানতে ভূমিকা রাখবে এবং বিনোদন দিবে। সে সময় ইসিবির মার্কেটিং ম্যানেজার ছিলেন স্টুয়ার্ট রবার্টসন। তিনি একটি জরিপ শুরু করেন পুরো ইংল্যান্ড জুড়ে। জরীপে দেখতে পান, মানুষ বিশেষ করে তরুণরা মবে করে ক্রিকেট লম্বা সময় ধরে দেখতে হয়। এটা অনুষ্ঠিত হয় এমন সময়ে যখন তারা বাইরের নানা কাজে ব্যস্ত। পৃথিবীর সবকিছুই যখন দ্রুত গতীতে যাচ্ছে সেখানে সারাদিন ধরে একটা ক্রিকেট ম্যাচ দেখাটার মানসিকতা অনেকেরই নেই। তাই অনেকেই মনে করেন ক্রিকেট বৃদ্ধদের দেখার খেলা, যাদের হাতে অফুরন্ত সময় আছে।
এই জরিপ থেকেই ইসিবির মার্কেটিং ম্যানেজার স্টুয়ার্ট রবার্টসন চিন্তা করে একটি যুগান্তকারী আবিষ্কার করেন। তিনি চিন্তা করেন, ক্রিকেট খেলাকে ৩ ঘন্টায় নামিয়ে আনার। সেটি আয়োজিত হবে সন্ধ্যার পরে যখন পরিবারসহ মাঠে আসতে পারবে। স্টুয়ার্ট রবার্টসনের এই আইডিয়া ইসিবির অনেকেরই পছন্দ হয় আবার অনেকেরই হয় না। শেষ পর্যন্ত ভোটাভুটি হলে ১১-৭ ভোটে প্রস্তাবটি পাশ হয়। পরিকল্পনা অনুসারে ২০০৩ সালের ১৩ জুন প্রথম বারের মতো টি-টুয়ান্টি ম্যাচ আয়োজিত হয়। প্রথম মৌসুমেই এটি ইংল্যান্ডে দারুণ জনপ্রিয়তা দেখায়। টি-টুয়ান্টি লীগ ইংল্যান্ডে চালু হয়ে গেলেও ক্রিকেট বিশ্ব এ নিয়ে দুইভাগে ভাগ হয়ে যায়। কিন্তু বর্তমান বাজারের চাহিদা অনুসারে গ্রহণ করলেও ক্রিকেটের বিশুদ্ধবাদিরা এর বিপক্ষে ছিলেন৷ প্রবল সমালোচনার কারণে এটি প্রথমে নিছক বিনোদন বলে প্রচার পায়। ২০০৫ সালে পরীক্ষামূলকভাবে সর্বপ্রথম আন্তর্জাতিক ক্রিকেটে টি-টুয়েন্টি ক্রিকেট ম্যাচ অনুষ্ঠিত হয়। ম্যাচটি খেলেছিল অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ড। সে ম্যাচটি তারা খেলতে নামে বিচিত্র সাজে। আন্তর্জাতিক ম্যাচ হলেও সেটি ছিল কৌতুক ও রসিকতায় ভরপুর। কারণ তখনও টি-টুয়ান্টি ছিল নিছকই বিনোদন। এই অল্প সময়ে বিনোদনের কারণেই বিশ্ব ক্রিকেটে তুমুল সমালোচনা সত্ত্বেও টি-টুয়ান্টি ক্রিকেট জনপ্রিয় হয়ে ওঠে। ফলে প্রতিটি দ্বিপাক্ষিক সিরিজে দুয়েকটি করে টি-টুয়ান্টি ম্যাচ রাখা হতো। তখন শুধু বিনোদনের জন্যই এই ম্যাচগুলো খেলা হতো। কিন্তু ২০০৭ সালে এই জনপ্রিয়তাকে কাজে লাগিয়ে আইসিসি প্রথম আন্তর্জাতিক টি-টুয়ান্টি বিশ্বকাপের আয়োজন করে। প্রথমে অনেক দেশই তা খেলতে চায়নি। বিশেষ করে ভারত এর তীব্র বিরোধিতা করে।
তারা প্রথমে খেলতে চায়নি। পরে আইসিসির চাপে খেলতে এলেও অভিজ্ঞদের রেখে তরুণ দলকে বিশ্বকাপে পাঠায়। সে দলই বিশ্বকাপে শিরোপা লাভ করে এবং রাতারাতি টি-টুয়ান্টি ভারতে জনপ্রিয়তার তুঙ্গে পৌঁছে যায়। এরপরেই বদলে যায় টি-টুয়ান্টির গল্প। নিছক বিনোদন থেকে তা যুক্ত হয় ক্রিকেটের অবিচ্ছেদ্য অংশে।
দেখতে দেখতে চলে এলো টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপের নবম আসর। জমজমাট এ আসরকে কেন্দ্র করে নতুন উল্লাসে মাতওয়ারা ক্রিকেট প্রেমিরা। শুধু বিশ্বকাপই নয়, টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে প্রতিটা দেশেই রয়েছে আলাদা টুর্নামেন্ট। বাংলাদেশে বাংলাদেশ প্রিমিয়ার লিগ বিপিএল, ইন্ডিয়াতে ইন্ডিয়ান প্রিমিয়ার লিগ আইপিএল সহ বিশ্বের প্রতিটা দেশেই টি-টোয়েন্টি এখন জনপ্রিয়তার তুঙ্গে। আইপিএলের মতো আসরকে তো অনেক ক্রিকেটার বিশ্বকাপের সাথেও তুলনা করে থাকেন।