‘স্টপ ডেঙ্গু’ অ্যাপের কাজ কী?
- বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডেস্ক
ডেঙ্গু প্রতিরোধে জনসচেতনতা বাড়াতে ও দেশজুড়ে ছড়িয়ে পড়া ডেঙ্গুর ছোবল থেকে মুক্তি পেতে ‘স্টপ ডেঙ্গু’ নামের মোবাইল অ্যাপ চালু হয়েছে। সরকারের পাঁচটি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ এবং চারটি সংস্থা একত্রে অ্যাপটি তৈরি করেছে। অ্যাপটি তৈরির কাজ তত্ত্বাবধান করেছে ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ই-ক্যাব)।
ই-ক্যাবের সাধারণ সম্পাদক মোহাম্মাদ আবদুল ওয়াহেদ বলেন, ‘স্টপ ডেঙ্গু’ অ্যাপ ব্যবহারের মাধ্যমে যেকেউ দেশের যেকোনো স্থানে মশার প্রজননস্থান স্বয়ংক্রিয়ভাবে শনাক্ত করতে পারবেন। এর মাধ্যমে পুরো দেশের মশার প্রজননস্থানের ম্যাপিং তৈরি করা হবে। ফলে সিটি করপোরেশন এবং স্থানীয় সরকার খুব সহজেই কোন এলাকায় কতজন লোক নিয়োগ করতে হবে, তা মশার জন্মস্থানের ঘনত্ব দিয়ে নির্ধারণ করতে পারবে। মশা নিয়ন্ত্রণে কী পরিমাণ ওষুধ কিনতে হবে বা ব্যবহার করতে হবে, সে বিষয়টিও জানা যাবে অ্যাপটির মাধ্যমে। একই সঙ্গে পরবর্তী বছরের জন্য আগে থেকে সতর্কতামূলক প্রস্তুতি গ্রহণ করা যাবে।
আবদুল ওয়াহেদ আরও বলেন, দেশে তিন কোটি স্মার্টফোন ব্যবহারকারীকে লক্ষ্য করে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। তারা যেন ডেঙ্গু বিষয়ে সচেতনতা তৈরিতে কাজ করতে পারেন, সে লক্ষ্যে অ্যাপটি তৈরি করা হয়েছে। এখন ডেঙ্গু নিয়ে অনেকে অনেক রকম তথ্য দিচ্ছে। কিন্তু সঠিক তথ্য যাচাইয়ের কোনো সুযোগ বা সুবিধা নেই। ডেঙ্গু বিষয়ে সঠিক তথ্য দেওয়ার প্ল্যাটফর্ম হিসেবে এই অ্যাপ তৈরি করা হচ্ছে। এতে বিভিন্ন কমিউনিটিকে যুক্ত করার চেষ্টা করা হচ্ছে। এতে তাৎক্ষণিক ছবি আপলোড করা যাবে। ছবি আপলোড করলে অটো ম্যাপিংয়ে যুক্ত হবে। বিভিন্ন এলাকা থেকে যুক্ত হওয়া ছবি ও তথ্য অনুযায়ী অভিযোগগুলো তদন্ত করে সে অনুযায়ী ব্যবস্থা নেওয়া হবে। অ্যাপটি সরকারি একটি টুল হিসেবে নাগরিকদের ফিডব্যাক বা প্রতিক্রিয়া জানানোর প্ল্যাটফর্ম হবে।
গতকাল শনিবার রাজধানীর কাকরাইলের জাতীয় স্কাউট ভবনের শামস হলে ‘পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ’ শীর্ষক অনুষ্ঠানে বহুপক্ষীয় সমঝোতা চুক্তিতে স্বাক্ষর করে বাংলাদেশ স্কাউটস, ই-ক্যাব, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশন, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন, স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের কার্যালয়, স্বাস্থ্যসেবা বিভাগ, স্থানীয় সরকার অধিদপ্তর, আইসিটি বিভাগের অধীনস্থ এটুআই প্রকল্প এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের কর্মকর্তারা।
চুক্তি অনুযায়ী, পরিচ্ছন্ন বাংলাদেশ গড়তে সংক্রমিত রোগ প্রতিরোধে প্রয়োজনীয় তথ্য-উপাত্ত সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মাধ্যমে প্রযুক্তির সহায়তায় নাগরিক পর্যায়ে সচেতনতা সৃষ্টিতে যে যার অবস্থান থেকে দায়িত্ব পালন করবে।
অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায়মন্ত্রী তাজুল ইসলাম। বিশেষ অতিথি হিসেবে উপস্থিত ছিলেন ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশন মেয়র আতিকুল ইসলাম, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা ও ত্রাণ প্রতিমন্ত্রী এনামুর রহমান, দুর্নীতি দমন কমিশনের (দুদক) কমিশনার মোজাম্মেল হক খান।
ই-ক্যাব বাংলাদেশ সভাপতি শমী কায়সার বলেন, ই-কমার্স অ্যাসোসিয়েশন তাদের ১ হাজার সদস্য নিয়ে ডেঙ্গু সচেতনতায় সম্পৃক্ত হয়। কাজ করতে গিয়ে তাঁরা ডেঙ্গু সচেতনতা ও পরিচ্ছন্নতা ব্যবস্থাপনায় একটি অ্যাপের প্রয়োজনীয়তা বোধ করেন। তথ্য-উপাত্তভিত্তিক সেবা দিতেই ‘স্টপ ডেঙ্গু’ অ্যাপের ম্যাপিং করা হয়। সাধারণ মানুষ যেন অ্যাপটি সহজেই ব্যবহার করতে পারে, সে দিকটায় খেয়াল রাখা হয়েছে।
অ্যাপটি তৈরিতে কারিগরি সহায়তা করেছে ই-পোস্ট ও বিডি-ইয়ুথ। অ্যাপটি এখন অ্যান্ড্রয়েড প্ল্যাটফর্মে পাওয়া যাবে।
স্টপ ডেঙ্গু অ্যাপের উদ্বোধনের পর বাংলাদেশ স্কাউটের নির্বাহী পরিচালক আরশাদুল মোকাদ্দেস, ই-কমার্স বাংলাদেশ সভাপতি শমী কায়সার, ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনের সিইও মোস্তাফিজুর রহমান, ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের সিইও আবদুল হাই, ডাইরেক্টর হেলথ ডিজি আবুল কালাম আজাদ, হেলথ সার্ভিস ডিভিশনের অতিরিক্ত সচিব জাকিয়া সুলতানা, স্থানীয় সরকার বিভাগের অতিরিক্ত সচিব মাহবুব হোসেন, এটুআই প্রকল্প পরিচালক আবদুল মান্নান এবং দুর্যোগ ও ত্রাণ মন্ত্রণালয়ের অতিরিক্ত সচিব মো. মহসিন নিজ নিজ প্রতিষ্ঠানের পক্ষে সমঝোতা চুক্তিতে সই করেন।