সমাধান দেবে ডিজিটাল মানুষ
- বিজ্ঞান প্রযুক্তি
ধরুন আপনার বাসায় সামান্য শর্ট-সার্কিট থেকে পুরো বিদ্যুত্ সংযোগ বন্ধ হয়ে গেল। কোনো ইলেকট্রিশিয়ানের খোঁজ না পেয়ে দ্রুত মেরামত না করতে পেরে প্রচণ্ড গরমে হাঁসফাঁস করছেন। ফ্যান, বাতি, সব বন্ধ। কিংবা, আপনার বাসার পানির কলে সমস্যা। অবিরাম পানি পড়েই যাচ্ছে, প্লাম্বারের দেখা পাচ্ছেন না।
এমন সব সমস্যার সহজ সমাধান দিতে পারবে স্মার্টফোনের ডিজিটাল মানুষ অ্যাপ। এটির প্রধান উদ্যোক্তা খন্দকার মোহাম্মদ আলিফ, যিনি ঢাকা পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটের প্রথম বর্ষের ছাত্র।
বৈদ্যুতিক সমস্যা, গ্যাস, স্যানিটারি, প্লাম্বিং, বাসার রং, তালা এমনকি গাড়ির যান্ত্রিক সমস্যাসহ যেকোনো সমস্যায় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের মিস্ত্রী খুঁজে দেবে অ্যাপটি। আলিফ ও তার দুই ভাই খন্দকার অলিউল আজম ও খন্দকার কফি আনান মিলে এটি তৈরি করেছেন। তাদের সঙ্গে ছিলেন সাজিদ হাসান, মোস্তাহিত আহমেদ ও নাজমুল আকাশ।
আলিফ জানান, এটি আসলে শ্রমিকদের জন্য ডিজিটাল প্ল্যাটফর্ম। অ্যাপটিকে ২২টি ভাগে ভাগ করা হয়েছে। আলাদা আলাদা ভাগ থেকে দরকারি কাজের কর্মী খুঁজে পাওয়া যাবে। এখন পর্যন্ত এতে ঢাকা শহরের ৮৪টি এলাকার কর্মীদের পাওয়া যাচ্ছে। নির্দিষ্ট এলাকা ‘লোকেশন’ হিসেবে নির্বাচন করলে অ্যাপে চলে আসছে সেখানকার শ্রমজীবীদের তালিকা। নাম, পরিচয়, ফোন নম্বরের সঙ্গে আছে তাদের ভোটার আইডি কার্ড নম্বর ও অভিজ্ঞতার তথ্য। অ্যাপে ‘কল’ বোতাম চাপলেই ফোনে আলাপ করা যাবে। সহজেই সেই কর্মী এসে বাসার সমস্যা সমাধান করে দিতে পারবেন। পারিশ্রমিক ও অন্যান্য ব্যাপারে নিজেরাই আলাপ করে নেওয়া যাবে।
জানা গেল, গত বছরের পহেলা মে শ্রমিক দিবসে এ ধরনের একটা অ্যাপ তৈরির চিন্তা তাদের মাথায় আসে। তারপর তারা বিভিন্ন এলাকা খুঁজে খুঁজে শ্রমজীবীদের তথ্য ও যোগাযোগের নম্বর সংগ্রহ করেছেন। শুরুতে অনেকেই ইতিবাচক সাড়া দিতেন না। কথা বলে বোঝাতে হত। এক বছর ধরে তথ্য সংগ্রহ করে অ্যাপটির ডাটাবেজ তৈরি করা হয়। এতে নিজেদের টিউশনি ও পকেট খরচের টাকা ব্যয় করতে হয় তাদেরকে।
গত ১ মে ‘ডিজিটাল মানুষ’ অ্যান্ড্রয়েড স্মার্টফোনের জন্য গুগল প্লে-স্টোরে উন্মুক্ত করা হয়। এটি সম্পূর্ণ বিনামূল্যে ব্যবহার করা যায়। https://goo.gl/xiXZGR লিংকে গেলেও অ্যাপটি সরাসরি ডাউনলোড করা যায়। আছে নানা সুযোগ-সুবিধা। কর্মী খোঁজার পাশাপাশি অ্যাপে কর্মীর কাজের মান নিয়ে মত জানানো যায়। সেসব পরবর্তীতে যাচাই-বাছাই করা হয়।
আলিফ জানান, অ্যাপটি প্লে-স্টোরে ছাড়বার মাত্র ২২ দিনেই এটি পাঁচহাজারের বেশি ডাউনলোড হয়েছে। প্রতিদিন ব্যবহারকারীরা শ্রমজীবী কর্মীর খোঁজে পাঁচশ’র বেশি কল করছেন। এরমধ্যে অর্জনের খাতায় একটি পুরস্কার যোগ হয়েছে। এশিয়া প্যাসিফিক বিশ্ববিদ্যালয়ের ইয়ুথ কার্নিভালে সফটওয়্যার ক্যাটাগরিতে চ্যাম্পিয়ন হয়েছে ডিজিটাল মানুষ। বেশকিছু টেলিফোন কোম্পানিও তাদের সহযোগিতার জন্য এগিয়ে আসতে চেয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে আলিফরা কঠোর, তারা ‘ডিজিটাল মানুষ’-কে বাণিজ্যিকভাবে ব্যবহার করতে চান না। সেবামূলক এই অ্যাপটি বিনামূল্যেই চালাতে চান।
এখন ভবিষ্যৎ পরিকল্পনা হলো, ডিজিটাল মানুষকে তারা কর্মসংস্থানের প্ল্যাটফর্ম হিসেবে গড়ে তুলবেন। গতানুগতিক সেবার বাইরে আরও অনেক সেবা যোগ করবেন। এছাড়া অতি শীঘ্রই ঢাকার বাইরে অন্যান্য শহরেও ডিজিটাল মানুষের ডাটাবেজ তৈরির জন্য কাজ করবেন তারা। এছাড়া সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা প্রত্যাশা করছেন, যাতে করে আর্থিক সংকটে ডিজিটাল মানুষের পথচলা থেমে না থাকে।