নিরাপদ হোক অনলাইন-জীবন
- বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডেস্ক
ক্যাম্পাস, অফিস কিংবা বাসাবাড়িতে এখন প্রায়ই তরুণদের গাল ফুলিয়ে বসে থাকতে দেখা যায়। এ ক্ষেত্রে বড়রা এক ধাপ এগিয়ে। সবার সমস্যা একটাই_ হ্যাকিং। এর হাত ধরে আবার হয়রানি। অনেকের উধাও হয়ে যায় ব্যাংক ব্যালান্সও। সময়ের সঙ্গে আমরা নিজেদের অনলাইনে অভ্যস্ত করে ফেলেছি। অনলাইনটা যেমন গুরুত্বপূর্ণ, তেমনি এর সতর্কতাও মাথায় রাখা আমাদের জন্য আবশ্যক। না হলে পড়ে থাকতে হবে ঝুঁকিতে। যে কোনো সময় নোটিশ ছাড়াই আপনি পড়ে যেতে পারেন হ্যাকারদের খপ্পরে। এতে আপনার ব্যক্তিগত তথ্য চলে যেতে পারে অন্যের হাতে। চলুন, অনলাইন-বিষয়ক সতর্কতায় ডুব দিই:
পাসওয়ার্ডে কৌশলী
অনলাইনে অভ্যস্ত আপনাকে সবার আগে সতর্ক থাকতে হবে পাসওয়ার্ড নির্বাচনে। আপনার মেইল ফেসবুক থেকে শুরু করে সব যোগাযোগ মাধ্যমের জন্য পাসওয়ার্ড এমনভাবে নির্বাচন করা উচিত, যা শুধু আপনি ছাড়া অন্যরা বুঝতেই না পারে। নিজের নাম বা ডাকনাম কিংবা নিজের ফোন নম্বর পুরোটাই পাসওয়ার্ড হিসেবে ব্যবহারের মতো বোকামি নিশ্চয় আপনি এখন আর করেন না। এ ক্ষেত্রে ছোট ও বড় হাতের অক্ষর এবং সংখ্যায় পাসওয়ার্ডই হতে পারে নিরাপদ আশ্রয়।
অনেকে আবার মনে রাখার সুবিধার্থে বিভিন্ন সাইটে একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার করেন। এটা খুবই বিপজ্জনক। কেননা, কোনো হ্যাকার আপনার একটি অ্যাকাউন্ট হ্যাক করতে পারলে বাকিগুলো হ্যাকিং তার জন্য আলু ভর্তার মতো সহজ হয়ে যাবে। অনেকে আবার বিপদে পড়ে কিংবা সবাইকে মাইক লাগিয়ে পাসওয়ার্ড বলে বেড়ান। এটি আসলে কারও সঙ্গে শেয়ার করার মতো বিষয় নয়। তারপরও যদি কেউ আপনার পাসওয়ার্ড জেনে ফেলে তা দ্রুত বদলে নিন।
শেয়ারিং সতর্কতা
আমরা প্রায় সবাই সোশ্যাল মিডিয়ায় নিজের ছবি, ব্যক্তিগত তথ্য, স্বরচিত গল্প-কবিতা কিংবা স্ট্যাটাসের মাধ্যমে মনের ভাব শেয়ার করে থাকি। কিন্তু মনে রাখতে হবে, সোশ্যাল মিডিয়াতে আপলোডের পর সেগুলো আর আপনার থাকছে না। সেগুলো পরিচিত-অপরিচিত সবার হাতের নাগালে চলে যায়। তা ছাড়া আপনার তথ্য কিংবা ছবি ব্যবহার করে যে কেউ ইচ্ছা করলেই আপনার ক্ষতি করতে পারে। তাই এসব ক্ষেত্রে সাবধানতা বজায় রাখা খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
কেনাকাটা
বর্তমানে অনলাইনে কেনাকাটা খুব সাধারণ ব্যাপার। ঝামেলাবিহীন হওয়ায় সবাই ঘরে বসেই কাজটা সেরে নিচ্ছেন। সে ক্ষেত্রেও সাবধান থাকতে হবে আপনাকে। কেননা, আপনার কার্ডের তথ্য ছাড়াও অন্যান্য প্রয়োজনীয় তথ্য হাতিয়ে নিতে হ্যাকার গ্রুপ তৎপর। তাই মাথায় রাখবেন, যে সাইটে আছেন সেটি সিকিউরড কি-না। ওয়েবসাইটটি আসল কি-না তা জেনে নিন। তা ছাড়া কোনো পাবলিক কম্পিউটার থেকে অনলাইনে কেনাকাটা না করাই বুদ্ধিমানের কাজ। কারণ যদি আপনি সাইন আউট করতে ভুলে যান, সে ক্ষেত্রে আপনার গুরুত্বপূর্ণ তথ্য পরবর্তী ব্যবহারকারীর কাছে চলে যাবে। তাই শতভাগ নিশ্চিন্ত হয়েই অনলাইনে কেনাকাটা করুন।
ব্রাউজিং
যে কোনো ধরনের লিংকে ক্লিক করার আগে সাবধান হতে হবে। তা ছাড়া যে কোনো সফটওয়্যার ডাউনলোডে পুরোপুরি নিশ্চিন্ত না হয়ে কোনো লিংকে ক্লিক করা যাবে না। অপরিচিত কারও কাছ থেকে মেইলের মাধ্যমে কোনো লিংক পেলে তাতে ক্লিক করবেন না। এ ধরনের লিংক পরিচিত কেউ পাঠালেও সতর্ক থাকুন। কারণ এসব লিংক হ্যাকাররা পাঠিয়ে থাকে, যা সেই ইউজার জানেও না। লিংকে ক্লিক করার সঙ্গে সঙ্গে আপনার অ্যাকাউন্টের তথ্য তাদের কাছে চলে যাবে। তাই সাবধান!
অ্যান্টি ভাইরাস ও আপডেটেড সফটওয়্যার
আপনার কম্পিউটারকে সিকিউরড রাখতে একটি ভালো মানের অ্যান্টি ভাইরাস ব্যবহার করুন। এটি আপনার কম্পিউটারের সব ভাইরাস দূর করে তাকে হ্যাকিংয়ের হাত থেকে রক্ষা করবে। বাজারে বেশকিছু ব্র্যান্ডের অ্যান্টি ভাইরাস পাওয়া যায়। ট্রায়াল ভার্সন ব্যবহার না করে অরিজিনাল ভার্সন ব্যবহার করা উচিত। তা ছাড়া কম্পিউটারের প্রয়োজনীয় সফটওয়্যার পুরনো কি-না সেদিকে খেয়াল রাখবেন। পুরনো হলে আপডেট দিন।
হ্যাকারদের নজরদারি
হ্যাকাররা ওঁৎ পেতে থাকে। আপনার কোনোরকম অসাবধানতা তাদের অপব্যবহারমূলক কর্মকাণ্ডকে উস্কে দেবে। তাই প্রয়োজনীয় সতর্কতা আপনাকে নিতেই হবে। খুব বেশিদিন একই পাসওয়ার্ড ব্যবহার না করে মাঝেমধ্যে বদলালে তা সুরক্ষিত থাকে। আমরা এখন অনলাইনে অভ্যস্ত হয়ে পড়েছি। তাই সবাই চাই আমাদের ভার্চুয়াল জীবনটা গতিময় আর সুন্দর হয়ে উঠুক। মনে রাখবেন, আপনার সতর্কতাই কেবল পারে আপনাকে হ্যাকিং কিংবা অনলাইনে ঘাপটি মেরে থাকা হ্যাকারদের হাত থেকে রক্ষা করতে। তাই সবার আগে নিজেকে সচেতন করে তুলুন শুধুই নিজের জন্য।
নিরাপদ হোক আপনার অনলাইন-জীবন।