ইউটিউব : শেখার প্ল্যাটফর্ম
- বিজ্ঞান প্রযুক্তি ডেস্ক
আমরা সবাই কোনো না কোনো স্কুল–কলেজে পড়ে এসেছি। কিন্তু বর্তমান বিশ্বের সবচেয়ে বড় স্কুল কোনটি, জানেন? ইউটিউব! অবাক হচ্ছেন? বিষয়টি কিন্তু সত্যি। ইউটিউব এমন এক ওয়েবসাইট, যেখান থেকে যার যা ইচ্ছে, তা–ই শিখে নিতে পারে। হোক সেটা ‘বটল ফ্লিপ’-এর মতো শিশুতোষ কোনো খেলা কিংবা ‘রকেট সায়েন্স’-এর মতো কঠিন কোনো সূত্র!
ধরুন আপনি গান গাইতে ভালোবাসেন। ‘বাথরুম সিঙ্গার’ হিসেবেই আপাতত আপনার পরিচিতি। কিন্তু আপনি সত্যিকারের গায়ক হতে চান। উপায় কী? উপায় সেই ইউটিউবই। এখানে ‘সার্চ’ করলে গান শেখার প্রক্রিয়া, নিয়ম, গিটার বা অন্য বাদ্যযন্ত্র বাজানোর উপায়—সব দেখে শিখে নিতে পারবেন। আবার ধরুন আপনি বিশাল ফুটবল ফ্যান। আপনার ধ্যানজ্ঞান, শয়নে–স্বপনে শুধু ফুটবল আর ফুটবল। ফুটবল নিয়ে যেকোনো ভিডিও দেখতে ওই ইউটিউবই কিন্তু সাহায্য করবে আপনাকে।
নতুন কোনো ভাষা শিখতে চান? ইউটিউবের শরণাপন্ন হোন। ভিডিও দেখেই একটা প্রাথমিক ধারণা করে নিতে পারবেন নতুন ভাষা সম্পর্কে। রান্নায় আপনার ভীষণ আগ্রহ, কিন্তু রান্না করতে পারেন না। চিন্তা নেই, এখানেও ইউটিউব থাকছে আপনার সহায়তায়। ভিডিও দেখে শিখে নিতে পারেন রান্নাও। বিভিন্ন বৈজ্ঞানিক পরীক্ষা–নিরীক্ষা থেকে শুরু করে জীবনে চলার পথে কার্যকর সব টিপস জানতেও প্রয়োজন ইউটিউবের।
আশ্চর্যের ব্যাপার হলো, ইউটিউব কিন্তু জীবনও বাঁচায়। ধরা যাক, কেউ একজন তাঁর জীবন নিয়ে ভীষণ হতাশ। সে সিদ্ধান্ত নিল, আত্মহত্যা করে এই বিষাদময় জীবন থেকে মুক্তি পাবে। এই আত্মহত্যাপ্রবণ মানুষটির কাছে জীবনের মানে খুঁজে দেওয়ার জন্যও ইউটিউবে আছে হাজারো অনুপ্রেরণামূলক ভিডিও। যেগুলো দেখলে মানুষটির কাছে মনে হতে বাধ্য যে তার জীবনেরও সার্থকতা আছে!
একটা সময় ছিল যখন আমাদের নানা রকম ‘শখ’ থাকত। কেউ ভালোবাসত আঁকতে, কেউ গাইতে, কেউ লেখালেখি করতে। লক্ষ করে দেখবেন, আজকাল আমাদের ‘শখ’ হারিয়ে যাচ্ছে। বুঝে না–বুঝে আমরা শুধু প্রতিযোগিতায় শামিল হচ্ছি। প্রতিদিন নতুন কিছু না কিছু শিখলেই কিন্তু নিত্যনতুন শখ তৈরি হবে। নিজের শখের বিষয়টা চর্চা করতে করতেই আপনি ‘আপনাকে’ আবিষ্কার করতে পারবেন। ইউটিউব যেখানে এত ভালো কিছু শেখার সুযোগ করে দিচ্ছে, এই সুযোগ কেন আমরা ব্যবহার করব না!
যদি আপনিও হতে চান ইউটিউব–শিক্ষক
মোটামুটি ১০ বছরের মধ্যেই ইউটিউব বাংলাদেশের একটি জনপ্রিয় সাইট হয়ে দাঁড়িয়েছে। এরই মধ্যে ইউটিউবিংকে পেশা হিসেবেও নিয়েছেন কেউ কেউ। ইউটিউব থেকে কীভাবে আয় করতে হয়, সে সম্পর্কে জানতে এই লিঙ্কে ঢুঁ মারতে পারেন: goo.gl/esbebv
ইউটিউবই কিন্তু হতে পারে আমাদের নতুন কিছু করার জায়গা! আমরা অনেকেই অনেক কাজে পটু, আমরাও কেন শিক্ষক হয়ে যাই না? ইউটিউবার হতে তো বিলিয়নিয়ার হতে হয় না, স্মার্টফোন বা কম্পিউটার আর ইন্টারনেটের সংযোগ থাকলেই হয়।
ইউটিউবিং করতে হলে কয়েকটা বিষয় মাথায় রেখে কাজ শুরু করলেই হয়। সে রকম কয়েকটি দরকারি বিষয়ের কথা বলা যাক:
* নিজের জন্য একটা ‘থিম’ খুঁজে নিতে হবে। কোন কাজটা আপনি ভালো পারেন, আপনার কোন গুণটি মানুষ পছন্দ করে, সেটাই খুঁজে বের করুন। তারপর সেই অনুযায়ী কাজ শুরু করুন। আপনি হয়তো ভালো গান গাইতে পারেন, সেটি নিয়েই এগিয়ে যান। যা পারেন না, অন্যের দেখাদেখি তা করতে যাবেন না।
* কী ক্যামেরা দিয়ে ভিডিও করলেন বা ‘সাউন্ড কোয়ালিটি’ কেমন, এসব কারিগরি দিকের চেয়ে বেশি গুরুত্বপূর্ণ আপনার ভিডিওর বিষয়বস্তু ভালো কি না। আপনার ভিডিওটির কনটেন্ট যদি অসাধারণ হয়, দর্শক তা মহা আগ্রহ নিয়ে এমনিতেই দেখবে।
* ক্যামেরার সামনে আত্মবিশ্বাসী হতে হবে। মনে রাখতে হবে, ক্যামেরার সামনে আপনিই রাজা। তাই সাহস করে, আত্মবিশ্বাস নিয়ে ভিডিও ধারণ করে ফেলতে হবে। ক্যামেরার সামনে আপনি নড়বড়ে হলে আপনার পুরো ভিডিওটাই দর্শকের কাছে নড়বড়ে আর অগ্রহণযোগ্য মনে হবে।
* আপনার ভিডিওর বিষয়বস্তুর সঙ্গে দর্শকের যেন সংযোগ থাকে, দর্শক যেন বিষয়টা পছন্দ করে। আপনার উপস্থাপন যেন সহজ হয়। যত জটিল বিশ্লেষণমূলক ভিডিও দেবেন, দর্শকসংখ্যা তত ছোট হয়ে আসবে। তাই দর্শকের মানসিকতা বুঝে আপনাকে ‘কনটেন্ট’ বানাতে হবে।
* একটি ভালো আর জনপ্রিয় ভিডিও বানাতে গেলে একাগ্রতা, সময় আর শ্রম দিতে হবে। এর কোনোটির ঘাটতি হলে আপনার ইউটিউবার হওয়ার সম্ভাবনা সত্যিই অনেক কমে যাবে। আমরা সারা দিনে যে সময়টা অকারণে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যমে বা এমনিই আলসেমি করে কাটাই, সেই সময়টা ইউটিউবিং করে কাটালেই কিন্তু হয়ে যায়।