শীর্ষ দশে বাংলাদেশের সাত কারখানা

শীর্ষ দশে বাংলাদেশের সাত কারখানা

  • নিউজ ডেস্ক

পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা স্থাপনে বাংলাদেশে একধরনের নীরব বিপ্লবই ঘটে গেছে। সর্বোচ্চ নম্বর পেয়ে শীর্ষ ১০–এ স্থান পাওয়া বিশ্বের ২৫টি পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনার মধ্যে আছে বাংলাদেশের সাতটি। সব কটিই তৈরি পোশাক কারখানা।

যুক্তরাষ্ট্রের ইউএস গ্রিন বিল্ডিং কাউন্সিল (ইউএসজিবিসি) ‘লিড’ নামে পরিবেশবান্ধব স্থাপনার সনদ দিয়ে থাকে। লিডের পূর্ণাঙ্গ রূপ লিডারশিপ ইন এনার্জি অ্যান্ড এনভায়রনমেন্টাল ডিজাইন। বাংলাদেশের তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর অনুরোধে সম্প্রতি বিশ্বের পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনার একটি তালিকা পাঠিয়েছে ইউএসজিবিসি। অবশ্য প্রতিদিনই নিত্য নতুন পরিবেশবান্ধব কারখানা তালিকায় যোগ হচ্ছে।

১১০ নম্বরের মধ্যে সর্বোচ্চ ৯৭ পেয়ে বিশ্বের শীর্ষ পরিবেশবান্ধব শিল্পকারখানা হয়েছে নারায়ণগঞ্জের আদমজী রপ্তানি প্রক্রিয়াকরণ এলাকার (ইপিজেড) রেমি হোল্ডিংস নামের পোশাক কারখানা। ৯২ নম্বর পাওয়া দ্বিতীয় শীর্ষ অবস্থানে আছে নারায়ণগঞ্জের প্লামি ফ্যাশনস। কারখানাটিতে নিট পোশাক উৎপাদন করা হয়।

৯০ নম্বর পেয়ে যৌথভাবে তৃতীয় অবস্থানে আছে আয়ারল্যান্ডের একটি শিল্পকারখানা ও বাংলাদেশের ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও। আয়ারল্যান্ডের কারখানাটির নাম এবং সেটি কোথায় তা জানা যায়নি। পাবনায় অ্যাবা গ্রুপের ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিওতে জিনসসহ বিভিন্ন ধরনের প্যান্ট তৈরি হয়। ৮৬ নম্বর পেয়ে চতুর্থ অবস্থানে আছে ইতালির বত্তেগা ভেনতা আর্টিলার ও যুক্তরাষ্ট্রের মেথড প্রোডাক্টস পিবিসি। ইতালির কারখানাটিতে চামড়াজাতীয় পণ্য এবং যুক্তরাষ্ট্রের কারখানাটিতে সাবান তৈরি হয়।

পঞ্চম অবস্থানটি বাংলাদেশের পোশাক কারখানার। ময়মনসিংহের ‘এসকিউ সেলসিয়াস ২’ পেয়েছে ৮৫ নম্বর। ৮৪ নম্বর নিয়ে ষষ্ঠ অবস্থানে ভিয়েতনামের এফজিএল-তান পু এক্সপানশন। ৮৩ নম্বর পেয়ে সপ্তম অবস্থানে আছে যুক্তরাষ্ট্রের প্রিন্সটেল। ৮২ নম্বর পেয়ে অষ্টম অবস্থানে আছে চীনের ফক্সকন গুজিহুউ। ৮১ নম্বর নিয়ে বাংলাদেশ, চীন, তাইওয়ান ও মেক্সিকোর ১০টি স্থাপনা সম্মিলিতভাবে নবম স্থানে আছে। এর মধ্যে বাংলাদেশের তিনটি পোশাক কারখানা—জেনেসিস ওয়াশিং, এসকিউ কোলব্লেনস ও এসকিউ বিরিকিনা। আর ৮০ নম্বর নিয়ে দশম অবস্থানে সম্মিলিতভাবে আছে জার্মানি, যুক্তরাষ্ট্র ও চেক রিপাবলিকের তিনটি শিল্প স্থাপনা।

ইউএসজিবিসির লিড সনদ পেতে নয়টি শর্ত পরিপালন করতে হয়। এর মধ্যে উল্লেখযোগ্য হচ্ছে, এমন নির্মাণসামগ্রী ব্যবহার করতে হয়, যাতে কার্বন নিঃসরণ কম হয়। এ জন্য পুনরায় উৎপাদনের মাধ্যমে তৈরি হওয়া ইট, সিমেন্ট ও ইস্পাত লাগে। এ ছাড়া কারখানার ৫০০ বর্গমিটারের মধ্যে শ্রমিকদের বাসস্থান, স্কুল, বাজার, বাস বা ট্যাম্পোস্ট্যান্ড থাকতে হয়। কারণ দূরত্ব বেশি হলে শ্রমিকদের কারখানায় আসতে গাড়িতে চড়তে হবে। এতে করে জ্বালানি খরচের পাশাপাশি কার্বন নিঃসরণ বেশি হয়। এর বাইরে বিদ্যুৎ খরচ কমাতে সূর্যের আলো, বিদ্যুৎসাশ্রয়ী বাতি ও সৌরবিদ্যুৎ ব্যবহার করতে হয়। ভূগর্ভস্থ পানির ব্যবহার কমাতে বৃষ্টির পানি সংরক্ষণের পাশাপাশি পানিসাশ্রয়ী কল লাগে। এ ছাড়া কারখানাসহ অন্য ভবন নির্মাণের নির্দিষ্ট পরিমাণ খোলা জায়গা রাখার বাধ্যবাধকতা আছে। কারখানার ভেতরের কর্মপরিবেশ উন্নত এবং অবশ্যই শ্রমবান্ধব হতে হয়। উৎপাদনের জন্য সর্বাধুনিক যন্ত্রপাতি ব্যবহার করতে হয়।

ইউএসজিবিসির নয়টি শর্ত পরিপালনে মোট ১১০ পয়েন্ট আছে। এর মধ্যে ৮০ পয়েন্টের ওপরে হলে ‘লিড প্লাটিনাম’, ৬০-৭৯ পয়েন্টে ‘লিড গোল্ড’, ৫০-৫৯ পয়েন্টে ‘লিড সিলভার’ এবং ৪০-৪৯ পয়েন্ট হলে ‘লিড সার্টিফিকেট’ সনদ মেলে। এখন পর্যন্ত বাংলাদেশের ৩২টি কারখানা ও স্থাপনা পরিবেশবান্ধব সনদ অর্জন করেছে। পরিবেশবান্ধব কারখানার স্থাপনার দিকে এগোচ্ছেন আরও অনেক শিল্প উদ্যোক্তা। এ ক্ষেত্রে অবশ্য পোশাকশিল্পের মালিকেরাই এগিয়ে আছেন।

সংস্থাটির অধীনে কলকারখানার পাশাপাশি বাণিজ্যিক ভবন, স্কুল, হাসপাতাল, বাড়ি, বিক্রয়কেন্দ্র, প্রার্থনাকেন্দ্র ইত্যাদি স্থাপনা পরিবেশবান্ধব হিসেবে গড়ে তোলা যায়। এ জন্য একটি প্রকল্পকে ইউএসজিবিসির তত্ত্বাবধানে নির্মাণ থেকে উৎপাদন পর্যন্ত বিভিন্ন বিষয়ে সর্বোচ্চ মান রক্ষা করতে হয়। ভবন নির্মাণ শেষ হলে কিংবা পুরোনো ভবন সংস্কার করেও আবেদন করা যায়।

পরিবেশবান্ধব শিল্প স্থাপনার শীর্ষে থাকা রেমি হোল্ডিংসের ব্যবস্থাপনা পরিচালক মিরান আলী বলেন, পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনের মাধ্যমে ক্রেতাদের আকৃষ্ট করা যাচ্ছে, তবে ব্যবসায়িকভাবে লাভবান হওয়া যাচ্ছে না। কারণ সাধারণ কারখানার চেয়ে এখানে খরচ একটু বেশি। তবে ক্রেতারা এসব কারখানায় পোশাক তৈরির জন্য বেশি পয়সা দিচ্ছে না। তাই পরিবেশবান্ধব কারখানার ব্র্যান্ডিংটা আরেকটু জোরেশোরে করা দরকার।

জানতে চাইলে তৈরি পোশাকশিল্পের মালিকদের সংগঠন বিজিএমইএর সহসভাপতি মাহমুদ হাসান খান বলেন,    পরিবেশবান্ধব কারখানা স্থাপনের কারণে দেশের ব্র্যান্ডিং হবে। কারণ আমাদের দেশের ব্র্যান্ডিংটা এখনো অতটা উজ্জ্বল নয়। একই সঙ্গে অবশ্যই আমাদের পোশাক খাতের ব্র্যান্ডিংটাও হবে। দেশে নতুন নতুন পরিবেশবান্ধব কারখানা হচ্ছে। বিষয়টি নিয়ে পোশাকমালিকদের মধ্যে একধরনের সুস্থ প্রতিযোগিতা আছে।’

বিজিএমইএর এই সহসভাপতি বলেন, বর্তমানে পরিবেশবান্ধব কারখানার রক্ষণাবেক্ষণ মূল চ্যালেঞ্জ। কারণ সঠিকভাবে দেখভাল করতে না পারলে হয়তো সনদ বাতিল হয়ে যাবে। সে জন্য বিষয়টি নিয়ে সংশ্লিষ্ট কারখানার মালিককে সচেতন হতে হবে। শোনা যাচ্ছে, ইউএসজিবিসি বাংলাদেশে তাদের একটি কার্যালয় করবে বা অন্য কোনো প্রতিষ্ঠানকে দায়িত্ব দেবে।

শীর্ষ ১০ পরিবেশবান্ধব কারখানা

পজিশন    পয়েন্ট        কারখানার নাম          দেশ

  ১         ৯৭        রেমি হোল্ডিংস                     বাংলাদেশ

  ২        ৯২        প্লামি ফ্যাশনস                     বাংলাদেশ

  ৩       ৯০        গোপনীয়                           আয়ারল্যান্ড

  ৩       ৯০        ভিনটেজ ডেনিম স্টুডিও             বাংলাদেশ

  ৪        ৮৬        বত্তেগা ভেনতা আর্টিলার           ইতালি

  ৪        ৮৬        মেথড প্রোডাক্টস পিবিসি           যুক্তরাষ্ট্র

  ৫       ৮৫        এসকিউ সেলসিয়াস ২             বাংলাদেশ

  ৬       ৮৪        এফজিএল-তান পু এক্সপানশন     ভিয়েতনাম

  ৭        ৮৩        প্রিন্সটেল                           যুক্তরাষ্ট্র

  ৮       ৮২        ফক্সকন গুজিহুউ ফোরজি           চীন

  ৯       ৮১        জেনেসিস ওয়াশিং                 বাংলাদেশ

  ৯       ৮১        এসকিউ কোলব্লেনস                বাংলাদেশ

  ৯       ৮১        এসকিউ বিরিকিনা                 বাংলাদেশ

  ১০      ৮০        প্রজেক্ট আই সিএফকে              জার্মানি

*৮১ পয়েন্ট পাওয়া আরও সাতটি ও ৮০ পয়েন্ট পাওয়া আরও দুইটি স্থাপনা আছে

সূত্র: প্রথম আলো

Sharing is caring!

Leave a Comment