দুই ক্ষুদে বিজ্ঞানীর ‘ট্রেন ট্রেকিং সিস্টেম’
- বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি ডেস্ক
রেল স্টেশনে ট্রেনের জন্য অপেক্ষা করতে করতে যখন ক্লান্ত বা ট্রেন কোথায় আছে তা জানারও কোনো সুযোগ নেই, তেমন এক অবস্থায় দুই ক্ষুদে বিজ্ঞানীর মাথায় এলো, এমন কোনো সিস্টেম কি আবিষ্কার করা যায় না যে ট্রেনের অবস্থান জানা যাবে? যেই ভাবা তেমন কাজ। এই দুই বিজ্ঞানী আবিষ্কার করে ফেললেন ‘ট্রেন ট্রেকিং সিস্টেম’। রেলযাত্রীদের দুর্ভোগের কথা চিন্তা করে নেত্রকোনার ক্ষুদে বিজ্ঞানী ত্রিদীপ বিশ্বাস ওরফে হিমেল তার অপর এক সহপাঠী বন্ধুর সহযোগিতায় আবিষ্কার করেছেন ট্রেন ট্রেকিং সিস্টেম। রেলপথের যেকোনো স্টেশনে এই পদ্ধতিতে ট্রেনের অবস্থান জানা যাবে বিনা খরচে। তাদের এই আবিষ্কারটি নেত্রকোনার বিজ্ঞান মেলায় দর্শকদের নজর কাড়ে এবং প্রথম পুরস্কার লাভ করে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার পিএস-১ সাজ্জাদুল হাসান খান তাদের এই পুরস্কার প্রদান করেন।
নেত্রকোনার ত্রিদীপ বিশ্বাস ওরফে হিমেল ময়মনসিংহের রুমডো পলিটেকনিক ইনস্টিটিউটে ইলেকট্রিক্যাল বিভাগে চতুর্থ পর্বের ছাত্র। তার বাবা হারান বিশ্বাস একজন ব্যবসায়ী। নেত্রকোনা পৌর শহরের উকিলপাড়ায় তাদের বসবাস। অপরজন ময়নসিংহের পুলিশ লাইন এলাকার মৃত আবদুল হেলিমের ছেলে নাজমুল হুদা ওরফে রাতুলকে নিয়ে প্রায় সাত মাস চেষ্টার পর ‘ট্রেন ট্রেকিং সিস্টেম’ পদ্ধতি তারা আবিষ্কার করেন। তাদের বিশ্বাস, একদিন তাদের এ আবিষ্কার দেশের উন্নয়নে কাজে লাগবে। মানুষ এ পদ্ধতি থেকে উপকৃত হবে, বাঁচবে সময়।
ত্রিদীপ বিশ্বাস এ প্রতিবেদককে বলেন, ‘এ ট্রেন ট্রেকিং সিস্টেমটি হলো, প্রত্যেক রেল স্টেশনে একটি ডিসপ্লে বোর্ড থাকবে। ডিসপ্লে বোর্ডে থাকবে প্রত্যেক রেল স্টেশনের জন্য বিভিন্ন কালারের এলইডি লাইট এবং সাউন্ড সিস্টেম। এছাড়া প্রতিটি স্টেশনে থাকবে সেন্সর, যার মাধ্যমে ট্রেন স্টেশনে পৌঁছা মাত্রই অপরাপর সকল স্টেশনে সিগন্যাল বাতি জ্বলে উঠবে। সঙ্গে সঙ্গে ঘণ্টা বাজার মতো শব্দও হবে। এছাড়া রেলের ইঞ্জিনে থাকবে চুম্বক জাতীয় পদার্থ অথবা সেন্সর। ফলে চৌম্বকত্বের মাধ্যমে স্টেশনে থাকা ডিসপ্লে বোর্ডের সবসময় সংযোগ থাকবে এবং ট্রেন ট্রেকিং সিস্টেম তখনই কার্যকারিতা পাবে।
নেত্রকোনা জেলা প্রশাসন আয়োজিত জেলা শহরের মোক্তারপাড়ায় তিনদিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় ক্ষুদে বিজ্ঞানীর ‘ট্রেন ট্রেকিং সিস্টেম’ পদ্ধতি প্রদর্শন করা হয়। প্রধানমন্ত্রীর একান্ত সচিব সাজ্জাদুল হাসান, জেলা প্রশাসক ড. মো. মুশফিকুর রহমান, নেত্রকোনা জেলা পরিষদের চেয়ারম্যান প্রশান্ত কুমার রায়, আটপাড়া উপজেলা পরিষদ চেয়ারম্যান খায়রুল ইসলামসহ মেলায় আসা বিভিন্ন শ্রেণি পেশার মানুষ হিমেলের উদ্ভাবিত পদ্ধতিটি দেখে অভিভূত হন। নেত্রকোনায় ডিজিটাল মেলায় ক্ষুদে এই বিজ্ঞানীর আবিষ্কার প্রথম স্থান অধিকার করে। এর আগে ময়মনসিংহে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায়ও এই পদ্ধতি প্রদর্শন করে প্রশংসিত হন তারা।
নেত্রকোনায় তিনদিনব্যাপী ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় কথা হয় ক্ষুদে বিজ্ঞানী ত্রিদীপ বিশ্বাস ও তার বন্ধু নামমুল হুদার সঙ্গে। তারা উভয়েই জানান, তাদের উদ্ভাবিত পদ্ধতি তৈরি করতে তেমন খরচ হয়নি। মাত্র দুই হাজার টাকায় তারা ওই পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। ওই পদ্ধতি ব্যবহার করলে সাধারণ মানুষ উপকৃত হবে। পদ্ধতির সুফল ভোগ করতে কোনো টাকা খরচ হবে না। তবে এজন্য দেশের বিভিন্ন রেল স্টেশনে ডিসপ্লে স্থাপন করতে হবে। ডিসপ্লের মাধ্যমে ট্রেনের অবস্থান জানা যাবে। তাদের উদ্ভাবিত সিস্টেম রেল স্টেশনে চালু করার জন্য বিভিন্ন সংস্থার সঙ্গে যোগাযোগ করছেন তারা। এরইমধ্যে হেল্প ফর পুওর পিপল ইন বাংলাদেশের সঙ্গে তাদের কথা হয়েছে। ওই সংস্থার পক্ষ থেকে বিষয়টি দেখা হবে বলে জানিয়েছে। সরকারি পৃষ্ঠপোষকতা পেলে ক্ষুদে এই বিজ্ঞানীদের স্বপ্ন বাস্তবায়িত হবে। তাদের সাফল্য কামনা করে নেত্রকোনার জেলা প্রশাসক ড. মো. মুশফিকুর রহমান বলেন, ‘ক্ষুদে এই বিজ্ঞানীর আবিষ্কার মেলায় প্রথম স্থান অধিকার করেছে। বিভাগীয় পর্যায়ে ডিজিটাল উদ্ভাবনী মেলায় ওই পদ্ধতি প্রদর্শনের ব্যবস্থা করা হবে। এছাড়া জেলা প্রশাসনের পক্ষ থেকে তাকে সব ধরনের সহযোগিতা প্রদান করা হবে।’