ইউটিউবে প্রথম ভিডিও আপলোড করেছিলেন কে?

ইউটিউবে প্রথম ভিডিও আপলোড করেছিলেন কে?

  • আল মোমিন

বর্তমান সময়ে ভিডিও মানেই যেন ইউটিউব। এমন কাউকে খুঁজে পাওয়া সত্যিই কঠিন, যিনি ইন্টারনেট ব্যবহার করেন অথচ ইউটিউব ব্যবহার করেন না। শিক্ষা, বিনোদন, খেলা, সংবাদ, প্রযুক্তি, সাজসজ্জা, রান্না ও ভ্রমণ থেকে শুরু করে প্রায় সব ধরনের ভিডিও রয়েছে ইউটিউবে। ইউটিউব যেন শিক্ষা-বিনোদনের এক অনন্য মাধ্যমে পরিণত হয়েছে। পেপ্যালের তিন প্রাক্তন কর্মচারী চড হারলি, স্টিভ চেন, এবং জাওয়াদ করিম এই তিন জন মিলে ২০০৫ সালের ফেব্রুয়ারিতে ইউটিউব তৈরি করেন।

ইউটিউবে শুধু শেয়ার করা না, ভিডিও ক্লিপ, সিনেমা, গান, ডকুমেন্টরি এবং আরো নানা ধরণের ভিডিওর বিশাল একটি আর্কাইভে পরিণত হয়েছে। ২০০৬ সালের নভেম্বরে তারা এটি গুগল এর কাছে ১.৬৫ বিলিয়ন মার্কিন ডলারে বিক্রি করে দেয়।

আধুনিক সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যম গুলির মধ্যে ইউটিউবের জনপ্রিয়তা দিন দিন বেড়েই চলেছে। বর্তমানে মানুষ ফেসবুক থেকেও বেশি সময় দিচ্ছে ইউটিউবে। বর্তমানে মানুষ কোন তথ্য খোজার জন্য গুগুল সার্চ এর পাশাপাশি ইউটিউবেও সার্চ করে। অপর দিকে গুগুলের তথ্য থেকে ইউটিইবের তথ্যগুলি অনেকটা গোছানো। ইন্টারনেট জগতের প্রায় অনেকেই এখন নিয়মিতভাবে ইউটিউব ব্যবহার করেন। গড়ে প্রতিমাসে প্রায় ২ বিলিয়ন মানুষ নিয়মিত ইউটিউব ব্যবহার করে এবং গড়ে প্রতিদিন ৩০ থেকে ৩৫ মিলিয়ন মানুষ ইউটিউব দেখে থাকে।

বিনোদনের পাশাপাশি ইউটিউব এর আরো অনেক সুবিধা রয়েছে। আমরা কোন কিছু জানার জন্য আগে যেমন গুগুলের উপর নির্ভর ছিলাম এখন অনেক কিছুই আমরা ইউটিউবে পেয়ে যাই। কোন কিছু শিখতে চাইলে আমরা এখন ইউটিউব থেকে শিখতে পারি।

শুধু বিনোদন বা খবর নয়, ইউটিউব বর্তমান সময়ে অর্থ উপার্জনেরও একটি জনপ্রিয় মাধ্যম। ইউটিউবের আয় মূলত পরোক্ষ আয়। ইউটিউবের ভিডিওতে বিজ্ঞাপন দেখিয়েও  আয় করা হয় এবং তার একটি অংশ ভিডিও নির্মাতা বা ক্রিয়েটরকে দেওয়া হয়। ইউটিউব থেকে আয় করতে ইউটিউবের পার্টনার প্রোগ্রামে অংশ নিতে হয়। যদি কোন  চ্যানেলের  ১২ মাসে কমপক্ষে এক হাজার সাবস্ক্রাইবার ও চার হাজার ঘণ্টা ওয়াচটাইম থাকে, তাহলে ঐ চ্যানেলটি  মনিটাইজেশনের জন্য আবেদন করতে পারবে। তবে চ্যানেলে সাবস্ক্রাইবার বেশি থাকলে এবং ভিডিও ভিউ অনেক বেশি হলে ইউটিউবের আয়ের বাইরে আপনি স্পন্সরও জোগাড়ের চেষ্টা করতে পারেন। বিভিন্ন পণ্যের রিভিউ বা পর্যালোচনা করেও আয় করা যায়। বর্তমানে টেলিভিশন চ্যানেলগুলোর বিকল্প হয়ে দাঁড়িয়েছে ইউটিউব চ্যানেল। প্রফেশনাল ভিডিও নির্মাতারা ইউটিউব চ্যানেলেই সরাসরি ভিডিও আপলোড দেয়।

শুরুর গল্প ও একজন জাওয়াদ করিম

১৯৭৯ সালের ২৮ অক্টোবর পূর্ব জার্মানিতে জন্মগ্রহণ করেন জাওয়াদ করিম। ১৩ বছর বয়স পর্যন্ত সেখানেই বেড়ে উঠেন তিনি। জাওয়াদ করিমের বাবার নাম, নাইমুল করিম। তিনি একজন বাংলাদেশি এবং মায়ের নাম হল ‘ক্রিস্টিনা করিম” একজন জার্মান। তাঁরা উভয়েই ছিলেন গবেষক। ১৯৯২ সালে নাঈমুল করিম স্বপরিবারে পাড়ি জমান আমেরিকায়।

জাওয়াদ করিম। ছবি: সংগৃহীত

জাওয়াদ আমেরিকাতেই তাঁর পড়াশোনা শুরু করেন। স্নাতক কোর্স চলাকালীন পড়াশোনার পাশাপাশি পেপালে তাঁর কর্মজীবন শুরু করেন। পরবর্তীতে তিনি স্ট্যানফোর্ড বিশ্ববিদ্যালয় থেকে কম্পিউটার বিজ্ঞানে মাস্টার্স ডিগ্রি অর্জন করেন। তারপর চাকরিতে যোগ দেন পেপালে।

পেপালে কাজ করা অবস্থায় জাওয়াদ করিমের দেখা হয় বাকি দু’জন অর্থাৎ, চ্যাড হার্লি ও স্টিভ চেন এর সাথে। তাঁরাও তখন একই সাথে পেপালে কাজ করতেন। ধীরে ধীরে এই তিনজনের মাঝে গড়ে উঠে গভীর বন্ধুত্ব। স্টিভ ছিলেন একজন কম্পিউটার সায়েন্সের ছাত্র। আর, হার্লি মূলত ছিলেন একজন ডিজাইনার। তিনজনই নতুন কিছু করতে চাইতেন। একে অপরের সাথে নিজেদের সুখ-দূঃখ, পরিকল্পনা গুলো ভাগ করে নিতেন। কিন্তু এরমাঝে পারস্পরিক যোগাযোগের অভাবে কিছুদিন ভাঁটা পড়ে তাঁদের পরিকল্পনায়। এই যোগাযোগ বিচ্ছিন্নতার কারণে তাদের পরিকল্পনা বাস্তবায়ন করতে বিলম্ব হয় প্রায় এক বছর। কিন্তু, না। এভাবে তো আর চলতে দেওয়া যায়না। তাই তাঁরা একসাথে আলোচনায় বসার সিদ্ধান্ত নেন। পরিকল্পনাকে বাস্তবে রুপ দিতে এবার তাঁরা নড়ে-চড়ে বসেন। আলোচনার জন্য স্থান নির্ধারণ করা হল সান ফ্রান্সিস্কোতে স্টিভ চেনের বাসায়। রাতের খাবারের সময় সিদ্ধান্ত নেয়া হল ইউটিউব সাইটটি তৈরি করার। অনলাইনে প্রচুর সাইট থাকলেও ভিডিও শেয়ার করার মতো তেমন উল্লেখযোগ্য সাইট নেই। এজন্য ভিডিও শেয়ারিং সাইটের সম্ভাবনা যাচাই করে একটি ভিডিও শেয়ারিং সাইট তৈরির সিদ্ধান্ত হল। ১৪ ফেব্রুয়ারি ২০০৫, তাঁরা তিনজন মিলে YouTube ডোমেইনটি নিবন্ধন করেন। ডোমেইন নাম নিবন্ধনের পর তিন তরুণ প্রকৌশলী হাত লাগালেন সাইট ডিজাইনের কাজে। কয়েক মাসের অক্লান্ত পরিশ্রমে দাঁড় করে ফেললেন সুন্দর একটি সাইট। আরও একটি তথ্য যেটা জেনে অনেকের ভাল লাগবে তা হল, ইউটিউবে সর্বপ্রথম আপলোড করা ভিডিওটি ছিল জাওয়াদ করিমেরই। এপ্রিল ২৩, ২০০৫ এ আপলোড করা Me at the zoo নামক ১৮ সেকেন্ডের ভিডিও। চাইলে এখনই দেখে আসতে পারেন ইউটিউব থেকে।

Sharing is caring!

Leave a Comment