২০১৯ সালের ‘সেরা ১০’ বিলিয়ন ডলার স্টার্টআপ
- উদ্যোক্তা ডেস্ক
অল্প সময়ের মধ্যে বিপুলভাবে ব্যবসায়িক সাফল্য পেয়েছে এমন স্টার্টআপ কোম্পানিগুলোর একটি তালিকা বিগত পাঁচ বছর ধরে প্রকাশ করে আসছে বিশ্বখ্যাত সাময়ীকি ফোর্বস। এ বছরও এমন একটি তালিকা প্রকাশ করেছে সাময়ীকিটি। তালিকা তৈরিতে গবেষণা করে সহযোগিতা করেছে আরেক প্রখ্যাত গবেষণা প্রতিষ্ঠান ট্রুব্রিজ।
১. চেইন্যালাইসিস
প্রতিষ্ঠাতা : মিশেল গ্রোনাজার (সিইও), জনাথন লেভিন ও জন মোলার
শেয়ার : ৫৩ মিলিয়ন ডলার
২০১৮ সালের আয় : ৮ মিলিয়ন ডলার
প্রধান বিনিয়োগকারী : অ্যাশেল, বেঞ্চমার্ক
চেইন্যালাইসিস একটি নিউইয়র্কভিত্তিক প্রতিষ্ঠান। প্রতিষ্ঠানটি ক্রিপটো কারেন্সি ইনভেস্টিগেশন সফটওয়্যার তৈরি করে। এটি এমন এক ধরনের সফটওয়্যার যার মাধ্যমে মানুষ জানতে পারে কীভাবে বিটকয়েন, এথেরিয়াম, লাইটকয়েন ইত্যাদি ব্যবহার করা যায়। বিভিন্ন আর্থিক প্রতিষ্ঠান এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে মানিলন্ডারিং প্রতিরোধ করতে পারে। এছাড়া সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো যেমন ইন্টারনাল রেভিনিউ সার্ভিস ও ফেডারেল ব্যুরো অব ইনভেস্টিগেশন এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে অবৈধ অর্থ লেনদেন সনাক্ত করতে পারে এবং অপরাধীকে চিহ্নিত করতে পারে।
চেইন্যালাইসিসের প্রতিষ্ঠাতা মিশেল গ্রোনাজারের বয়স ৪৯। এর আগে তিনি ক্রিপ্টোকারেন্সি এক্সচেঞ্জ ক্রাকেনের সহপ্রতিষ্ঠাতা ছিলেন। অপরদিকে ৪৭ বছর বয়সী জন মোলার ছিলেন ক্রিপ্টোকারেন্সি ওয়ালেটের প্রতিষ্ঠাতা।
২. কনট্রাস্ট সিকিউরিটি
প্রতিষ্ঠাতা : আরশান দেবিরসিয়াঘি, জেফ উইলিয়ামস ও অ্যালান ন্যুমান (সিইও)
শেয়ার : ১২২ মিলিয়ন ডলার
২০১৮ সালের আয় : ২৫ মিলিয়ন ডলার
প্রধান বিনিয়োগকারী : এসিরো ক্যাপিটাল, ব্যাটারি ভেঞ্চার্স, জেনারেল ক্যাটালিস্ট ও ওয়ারবার্গ পিংকেস
জেফ উইলিয়ামসনের বয়স এখন ৫২। আজ থেকে নয় বছর আগে তার মাথায় আসে সফটওয়্যার নিরাপত্তার বিষয়টি। একজন সফটওয়্যার নিরাপত্তা বিশ্লেষক হিসেবে তাঁর কিছু একটা করা উচিত—এমন ভাবনা থেকেই ২০১০ সাল থেকে কনট্রাস্ট সিকিউরিটি অ্যাপ নিয়ে কাজ শুরু করেন তিনি। ২০১৪ সালে তাঁর সঙ্গে যোগ দেন ৩৬ বছর বয়সী আরশান দেবিরসিয়াঘি। তাঁরা দুজন মিলে সফটওয়্যারটির ব্যাপক উন্নয়ন করেন। আগে যেখানে সফটওয়্যার নিরাপত্তার সংকেত শুধু নিরাপত্তা বিশ্লেষকদের কাছে যেত, এখন সেটা সরাসরি ডেভলপারদের কাছে চলে যায়। এ ধরনের একটি স্বতন্ত্র ও প্রয়োজনীয় বৈশিষ্ট্য যোগ করার ফলে তাদের সফটওয়্যারটি দ্রুত জনপ্রিয় হতে শুরু করে। কনট্রাস্ট সিকিউরিটি এতই বিস্তৃত হতে শুরু করে যে ২০১৬ সালে তাঁদেরকে একজন প্রধান নির্বাহী নিয়োগ দিতে হয়। সেই নির্বাহীর নাম অ্যালান ন্যুমান।
৩. সাইবারেসন
প্রতিষ্ঠাতা : লিওর ডিভ (সিইও), ইয়োসি নার, ইয়োনাটান স্ট্রিয়েম আমিট
শেয়ার : ১৮৯ মিলিয়ন ডলার
২০১৮ সালের আয় : ৫০ মিলিয়ন ডলার
প্রধান বিনিয়োগকারী : সিআরভি, লকহিড মার্টিন, সফটব্যাংক ও স্পার্ক ক্যাপিটাল
সাইবারেসন একটি ক্লাউডভিত্তিক সাইবার সিকিউরিটি প্ল্যাটফর্ম। এটি সাইবার নিরাপত্তাকে সার্বক্ষণিকভাবে নজরদারিতে রাখে। স্টার্টআপটি ২০১২ সালে ইসরায়েল থেকে যাত্রা শুরু করে। তবে পরের বছরই তা যুক্তরাষ্ট্রের বোস্টনে স্থানান্তর করা হয়। প্রতিষ্ঠানটির তিন উদ্যোক্তা লিওর ডিভ, ইয়োসি নার, ইয়োনাটান স্ট্রিয়েম আমিট প্রথমে ইসরায়েলের ডিফেন্স ফোর্স এলিট ইউনিটের কাছে গিয়েছিলেন এই উদ্যোগে বিনিয়োগ করার জন্য। তখন তাঁরা ইসরায়েল সেনাবাহিনিতে সাইবার সিকিউরিটি নিয়ে কাজ করতেন। বলা বাহুল্য, তখন তাঁদের প্রস্তাবে সাড়া দেয়নি ইসরায়েল সেনাবাহিনি।
৪. ডেভ
প্রতিষ্ঠাতা : পেরাস চিত্রকর, জ্যাসন উইক (সিইও) ও জন ওলেনিন
শেয়ার : ১৩ মিলিয়ন ডলার
২০১৮ সালের আয় : ১৯ মিলিয়ন ডলার
প্রধান বিনিয়োগকারী : মার্ক কিউবান, সেকশন ৩২
জ্যাসন উইক যখন লয়োলা মেরিমাউন্ট ইউনিভার্সিটির শিক্ষার্থী তখন দেখতেন ‘ওভার ড্রাফট ফি’র কারণে প্রায়ই তার ব্যাংক একাউন্ট শূন্য হয়ে যাচ্ছে। তিনি দেখলেন, সমস্যাটি প্রায় সব শিক্ষার্থীরই সাধারণ সমস্যা। সমস্যাটি কীভাবে দূর করা যায় তা নিয়ে ভাবতে ভাবতেই ২০১৬ সালে তৈরি করে ফেলেন ডেভ অ্যাপ। অ্যাপটি ২০১৭ সালের এপ্রিল মাসে অ্যাপলের অ্যাপ স্টোরে ‘অ্যাপ অব দ্য ডে’ হিসেবে ছিল। গত দুই বছরে এটি ১০ মিলিয়নেরও বেশিবার ডাউনলোড হয়েছে। জ্যাসন উইকের বয়স এখন মাত্র ৩৪।
৫. ডিভি
প্রতিষ্ঠাতা : ব্লেক মারি (সিইও) ও অ্যালেক্স বিন
শেয়ার : ২৫৭ মিলিয়ন ডলার
২০১৮ সালের আয় : ৮ মিলিয়ন ডলার
প্রধান বিনিয়োগকারী : ইনসাইট পার্টনার্স, নিউ এন্ট্রারপ্রাইজ অ্যাসোসিয়েটস, পেলিন ভেঞ্চার পার্টনার্স
ডেভি একটি ব্যয় সনাক্তকারী সেবা। এতে বাজেট প্রণয়ন, জালিয়াতি সনাক্তকরণ ও ব্যয় ব্যবস্থাপনা টুল রয়েছে। এছাড়া এই অ্যাপের মাধ্যমে ব্যবহারকারীরা মাস্টারকার্ড সুবিধা ব্যবহার করতে পারে। ব্যবহারকারীরা যখন এই অ্যাপের মাধ্যমে কেনাকাটা করেন তখন তার ব্যাংক একাউন্ট থেকে অর্থ ব্যয় হতে থাকে। এই স্টার্টআপটির উদ্যোক্তা ব্লেক মারি ও অ্যালেক্স বিন—দুজনেরই বয়স এখন ৩৫।
৬. ডুয়োলিংগো
প্রতিষ্ঠাতা : লইস ভন অন (সিইও), সেভেরিন হ্যাকার
শেয়ার : ১০৮ মিলিয়ন ডলার
২০১৮ সালের আয় : ৩৬ মিলিয়ন ডলার
প্রধান বিনিয়োগকারী : ক্যাপিটাল জি, ক্লেইনার পারকিন্স, ইউনিয়ন স্কয়ার ভেঞ্চার্স
অনলেইনে ভাষা শেখার সবচেয়ে জনপ্রিয় প্ল্যাটফর্ম ডুয়োলিংগো। মাত্র সাত বছর বয়সী এই স্টার্টআপটিতে এখন ২৮ মিলিয়ন ব্যবহারকারী রয়েছে। ফলে এর সবচেয়ে বড় আয় আসে ব্যবহারকারীর রেজিস্ট্রেশন ফি থেকে। তবে ব্যবহারকারীরা গ্যামিফিল্ড কোর্স নামের ফ্রি ভার্সনটিও ব্যবহার করতে পারেন। ডুয়োলিংগোর প্রধান নির্বাহী ৩৯ বছর বয়সী লুইস ভন আশা করছেন, আগামী বছর তাদের আয় দ্বিগুণ হবে। লু্ইস এর আগে ২০০৬ সালে ম্যাকআর্থার কর্তৃক প্রদত্ত ‘জিনিয়াস’ গ্রান্ট পুরস্কার অর্জন করেছিলেন। এছাড়াও তিনি ছিলেন কার্নেগি ম্যালন বিশ্ববিদ্যালয়ের কম্পিউটার বিজ্ঞান বিষয়ের অধ্যাপক।
৭. ফেয়ার
প্রতিষ্ঠাতা : মার্সেলো কর্টেজ, ড্যানিয়েল পেরিটো ও ম্যাক্স রোডস (সিইও)
শেয়ার : ১১৬ মিলিয়ন ডলার
২০১৮ সালের আয় : ১০০ মিলিয়ন ডলার
প্রধান বিনিয়োগকারী : ফোররানার ভেঞ্চার্স, খোসলা ভেঞ্চার্স, লাইটস্পিড ভেঞ্চার পার্টনার্স ও ওয়াই কমবাইনেটর।
ফেয়ার শুধু একটি গতানুগতিক অনলাইন মার্কেটপ্লেস নয়। এটি এমন একটি মার্কেটপ্লেস যেখানে হাজার হাজার দোকান খুঁজে পাওয়া যায়। খুচরো ক্রেতারা এসব দোকান থেকে পণ্য কিনতে পারেন এবং কোনো কারণে পছন্দ না হলে ষাট দিনের মধ্যে ফেরতও দিতে পারেন। এজন্য কোনো টাকা কেটে রাখা হয় না। উদ্যোগটির প্রতিষ্ঠাতা ম্যাক্স রোডসের বয়স মাত্র ৩২। এর আগে তিনি স্কোয়ারের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠানে চাকরি করেছেন এবং নিউজিল্যান্ড ভিত্তিক একটি ছাতা প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানে কাজ করেছেন।
৮. ফিগমা
প্রতিষ্ঠাতা : ডিলান ফেইল্ড (সিইও) ও ইভান ওয়ালেস
শেয়ার : ৮৩ মিলিয়ন ডলার
২০১৮ সালের আয় : ৩ মিলিয়ন ডলার
প্রধান বিনিয়োগকারী : গ্রেলক, ইনডেস্ক ভেঞ্চার্স, ক্লেইনার পারকিন্স, সিকোইয়া
ফিগমা হচ্ছে ডিজাইনারদের একটি প্ল্যাটফর্ম। এখানে ডিজাইনাররা নিজেদের মধ্যে সমন্বয় করতে পারেন এবং একযোগে কাজ করতে পারেন। ফিগমার উদ্যোক্তা দুজনের মধ্যে ইভানের বয়স ২৯ আর ডিলানের বয়স ২৭। তাদের সাক্ষাৎ হয়েছিল ব্রাউন বিশ্ববিদ্যালয়ে। ইভান সেখান থেকে স্নাতক সম্পন্ন করতে পারলেও ডিলান ছিলেন ড্রপআউট। তারা ২০১২ সালে সানফ্রান্সিসকোতে স্টার্টআপটি চালু করেন। পাঁচ বছর পর ফিগমা পেশাদার ব্যবহারকারীর জন্য ফি নির্ধারণ করে দেয়। ফিগমাতে ডিজাইনারদের জন্য ৫০ হাজারেও বেশি উপকরণ রয়েছে। মাইক্রোসফট, ভলভো, উবার এবং স্কোয়ারের মতো বিশ্বখ্যাত প্রতিষ্ঠান ফিগমার গ্রাহক।
৯. ফোরকাইটস
প্রতিষ্ঠাতা : অরুন চন্দ্রসেকারাঁ ও ম্যাট এলেনজিক্যাল (সিইও)
শেয়ার : ১০১ মিলিয়ন ডলার
২০১৮ সালের আয় : ১৬ মিলিয়ন ডলার
প্রধান বিনিয়োগকারী : আগস্ট ক্যাপিটাল, বেইন ক্যাপিটাল ভেঞ্চার্স, হাইড পার্ক ভেঞ্চার্স পার্টনার্স
নর্থওয়েস্টার্ন ইউনিভার্সিটির কিলগ স্কুল থেকে ব্যবস্থাপনা বিষেয়ে এমবিএ সম্পন্ন করার পর ২০১৪ সালে ম্যাট এলেনজিক্যাল ফোরকাইটস প্রতিষ্ঠা করেন। এটি একটি সাপ্লাইচেইন ম্যানেজমেন্ট সফটওয়্যার। এর মাধ্যমে কোনো প্রতিষ্ঠান সহজেই বুঝতে পারে কোথায় তাদের পণ্য বিতরণ ডেলিভারি দিতে হবে, কোথায় যেতে হবে এবং যাত্রাপথে ডেলিভারিম্যান কোথায় আছেন, কী করছেন ইত্যাদি। বেস্ট বাই, ক্রাফট হেইঞ্জ, নেসলে ও স্মিথফিল্ড ফুডসের মতো খ্যাতনামা কোম্পানিগুলো এই সফটওয়্যার ব্যবহার করে।
১০. ফ্রন্ট
প্রতিষ্ঠাতা : মাথিলদে কলিন (সিইও) ও লরেন্ট পেরিন
শেয়ার : ৭৯ মিলিয়ন ডলার
২০১৮ সালের আয় : ১৬ মিলিয়ন ডলার
প্রধান বিনিয়োগকারী : সিকোইয়া, আনকর্ক ক্যাপিটাল
স্নাতক সম্পন্ন করার পরপরই মাথিলদের মাথায় এই আইডিয়াটি এসেছিল। তিনি বলেন, ‘ইমেইল বাছাই করতে গিয়ে মানুষ কত সময় ব্যয় করছে তা দেখে আমি অবাক হই। এর কি কোনো সমাধান নেই?’ এরপর ২০১৩ সালে তিনি নিজেই সমাধান বের করেন, যার নাম ফ্রন্ট। ফ্রন্ট একটি শেয়ার ইমেইল ইনবক্স যার মাধ্যমে ফেসবুক, টুইটার, এসএমএস ইত্যাদি সমন্বয় করা যায়। এতে কর্মীদের অনেক সময় বেঁচে যায়। বর্তমানে ফ্রন্টের ৫ হাজার গ্রাহক রয়েছে। এদের মধ্যে শপিফাই, মেইলচ্যাম্প ও স্ট্রাইপের মতো বড় প্রতিষ্ঠানও রয়েছে।
সূত্র : ফোর্বস
ইংরেজি থেকে অনুবাদ : মারুফ ইসলাম