আচরণের অর্থনীতি : পর্ব-১

আচরণের অর্থনীতি : পর্ব-১

  • সৈয়দ রাজু

মানুষের আচরণ কি অর্থনীতির উপর প্রভাব ফেলে? জটিল প্রশ্ন বটে! আজকের লেখায় এই প্রশ্নের উত্তর খোঁজার চেষ্টা করা হয়েছে Manipulation (নিজের সুবিধার জন্য অন্যকে ব্যবহার করা), Fluke (আকস্মিক সৌভাগ্য) এবং Personal Capacity (ব্যক্তিগত যোগ্যতা)—এই তিনটি বিষয়ের আলোকে।


মনে করুন বড়লোক বন্ধু বা আত্মীয়র বাড়িতে বেড়াতে গিয়ে চিৎ হয়ে শুয়ে রয়েছেন। দেখতে পেলেন এক হাড়ি মিষ্টি ঝুলছে সিকেতে। ইচ্ছে হলো খেতে। পা নাড়িয়ে ভাবছেন কীভাবে মিষ্টিগুলো খেয়ে নেবেন। কল্পনাতে মিষ্টি প্রাপ্তির নানা উপায় ঘুড়ে বেড়াচ্ছে মাথায়।

উপায়-১: একবার ভাবলেন, আহা ! কেউ যদি এসে হাড়িটা নামিয়ে মুখের সামনে এনে ধরতো, তাহলে সাবাড় করে ফেলতেন পরম তৃপ্তিতে। এমন সময় একটি ছোট্ট মেয়ে তার হারিয়ে যাওয়া খেলনা খুঁজতে এলো আপনার ঘরে। আপনি পেয়ে গেলেন এমুহূর্তের পরম ত্রাতাকে। তাকে ফুসলিয়ে উপরে তুলে মিষ্টির হাড়িটা নামিয়ে গিলে নিলেন গোগ্রাসে। এই পদ্ধতিকে বলা হয় ম্যানিপুলেশন (manipulation)।

উপায়-২:  ভাবলেন একটি বিড়াল ইঁদুর ধরার জন্য ছুটছে। ছুটোছুটির এক পর্যায়ে আপনার কাঙ্খিত মিষ্টির হাড়িটা বিড়ালের অসতর্ক ধাক্কায় পরে গেলো মাটিতে। আর যায় কোথায় ? আপনার সুপ্রসন্ন মিষ্টিভাগ্য ! পরম তৃপ্তিতে কুড়িয়ে খেলেন নির্বিকার তৃপ্তিতে !! এর নাম আকস্মিক সৌভাগ্য (fluke)।

উপায়-৩ : যেটা আপনি দিব্যি ভুলে বসে আছেন, আপন শক্তি ও ইচ্ছাতে নিজে উঠে নিমেষেই খেতে পারতেন মিষ্টি মানসম্পন্ন পরিচ্ছন্ন উপায়ে এবং রেখে দিতে পারতেন বাদবাকী মিষ্টিগুলো অন্যদের জন্য, সম্পদ বিনষ্ট না করে। এটি হচ্ছে নিজের সক্ষমতা (personal capacity)।

মানুষ যখন ব্যক্তিগত যোগ্যতায় কিছু অর্জন থেকে দূরে সরে যায় তখন fluke, manipulation ইত্যাদি রোগের দ্রুত উৎপত্তি ঘটে প্রথমে ব্যক্তি তথা পরিবার, অতঃপর সমাজে। এমতাবস্থায় রাষ্ট্র পিছিয়ে পড়ে সামাজিক ও অর্থনৈতিক সক্ষমতার দিক থেকে।

ভুলে গেলে চলবে না যে, মানুষ দেখে শেখে অথবা শেখাটাই দেখায় অবলীলায় সচেতন-অবচেতন- নির্বুদ্ধিতায়! যুগে যুগে এভাবেই সংস্কৃতির অংশ হিসাবে আচরণ গজিয়ে উঠে অথবা আচরণ সংস্কৃতির অংশ হয়ে যায়। যখন আমরা দীর্ঘস্থায়ী দারিদ্রের মধ্যে পরে যাই। ভাবনাটা যেখান থেকে শুরু করা দরকার।

(আচরণের অর্থনীতি নিয়ে ১৩ পর্বের ধারাবাহিক লেখার প্রথম কিস্তি প্রকাশিত হলো আজ। আগামী সোমবার প্রকাশিত হবে এর দ্বিতীয় কিস্তি।)

সৈয়দ রাজু : ড্যাফোডিল ইন্টারন্যাশনাল ইউনিভার্সিটির স্টুডেন্টস অ্যাফেয়ার্সের পরিচালক

Sharing is caring!

Leave a Comment