এক করুণ ভবিষ্যৎ!
- আদিবা ইসলাম
জলবায়ু পরিবর্তন এমন একটি সমস্যা যা প্রতিটি মহাদেশের প্রতিটি দেশকে প্রভাবিত করছে। কোনো দেশে কম, কোনো দেশে বেশি। এই পরিবর্তন দিন দিন হয়ে উঠছে চিন্তার কারণ। কিন্তু আপনি হয়তো ভাবতে পারেন যে আপনার তো চিন্তা করার কোনো কারণ নেই।
বিশ্বের এই পরিবর্তনের প্রভাব বহুমুখী। একদিকে যেমন প্রতিনিয়তই আমাদের বেঁচে থাকার সম্বল অক্সিজেন কমে যাচ্ছে, ঠিক অন্যদিকে পৃথিবীর তাপমাত্রা অনবরত বেড়ে যাওয়ায় বরফ গলে সমুদ্রের উচ্চতা বেড়ে যাচ্ছে। পরিবেশের ভারসাম্য নষ্ট এবং বন উজারের জন্য প্রতি বছরই দেখা দিচ্ছে নানা ধরণের প্রাকৃতিক দুর্যোগ। আসলে কী ভুলই বা আমরা করছি এবং এর সমাধান কী?
চলুন কিছু রিপোর্ট দিয়েই আমাদের আলোচনা শুরু করা যাক। আলজাজিরার একটি প্রতিবেদন অনুযায়ী, আমাদের পরিবেশে ১৯৫০ সাল থেকে রেকর্ড সংখ্যক হারে কার্বন ডাই অক্সাইড বাড়ছে যা থামার কোনো নাম নেই। কিন্তু কীভাবে বাড়ছে? বিজ্ঞানীরা বলছেন, ৯৫% সম্ভাবনা রয়েছে যে এই পরিবেশের পিছনে মানুষের কার্যকালাপই দায়ী। আমরা প্রায় প্রতিদিনই তেল-কয়লাসহ বিভিন্ন জ্বালানি পোড়াচ্ছি। শুধু তাই নয়, বিশ্বের জন্যসংখ্যা গত ৭০ বছরে তিনগুন বেড়েছে। উদ্বেগের বিষয় এই নয় যে পৃথিবী উষ্ণ হচ্ছে। উদ্বেগের বিষয় এই যে পৃথিবী খুব তাড়াতাড়ি উষ্ণ হচ্ছে। জাতিসংঘের মতে, এই মুহূর্তে আমাদের পৃথিবী প্রাক-শিল্প সময়ের চেয়ে প্রায় ১ ডিগ্রি বেশি গরম হচ্ছে যা ঠিক আছে। আসলে জাতিসংঘ বলে, যদি ১.৫ ডিগ্রিও হয় তাহলেও আমাদের জন্য ভালো। সমস্যা এটা না যে তাপমাত্রা বাড়ছে, সমস্যা এটা যে তাপমাত্রা অতি দ্রুত মাত্রায় বাড়ছে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বছরে প্রায় ৩ মিলিমিটার বৃদ্ধি পাচ্ছে কারণ তাপমাত্রা উষ্ণ হওয়ার সাথে সাথে সমুদ্রের জল প্রসারিত হচ্ছে। বিভিন্ন প্রাকৃতিক দুর্যোগের কারণে বিশ্বজুড়ে মানুষ ইতিমধ্যে নিজেদের ঘর হারাচ্ছে। এভাবে চলতে থাকলে হয়তো আমার বা আপনারও ঘর হারাতে হতে পারে।
এ সকল সমস্যার সমাধান অবশ্যই আছে। ২০১৬ সালে তথাকথিত প্যারিস চুক্তিতে স্বাক্ষর করেছিল বিশ্বনেতারা পরিবেশকে রক্ষার স্বার্থে। এই চুক্তিতে সবচেয়ে বড় অঙ্গীকার ছিল ২১০০ সালের মধ্যে তাপমাত্রা ১.৫ থেকে সর্বোচ্চ ২ ডিগ্রি বাড়তে পারে। এই চুক্তিকে কেন্দ্র করে অংশগ্রহণকারী দেশগুলো তাদের নিজেদের লক্ষ্য করেছে যে কতোটুকু কার্বন ডাই অক্সাইড তাদের দেশ থেকে নির্গত হবে। কিন্তু সবচেয়ে দুঃখজনক ব্যাপার হচ্ছে চুক্তির ৩ বছর হয়ে গেলেও কার্বন ডাই অক্সাইডের মাত্রা এখনও অধিক হারে বেড়ে যাচ্ছে। অর্থাৎ যত যাই করা হোক, আমরা অতীতেই ফিরে যাচ্ছি।
অন্যদিকে কিছু আশার আলোও দেখা দিয়েছে কিছু দেশে। ভারত, মরক্কো এবং গাম্বিয়ার মতো দেশ বিশাল নবায়নযোগ্য শক্তি প্রকল্প তৈরি করেছে। আরও অনেক দেশ আছে যে দেশগুলো পরিবেশ রক্ষার্থে তাদের স্থান থেকে কাজ করে যাচ্ছে। যেমন কিছু দেশ আছে যারা সমস্ত গণপরিবহণ বিনামূল্যে চলাচলের ব্যবস্থা করেছে। এটি কিন্তু একটি সেরা উপায় মানুষকে নিজস্ব যানবাহন কেনা থেকে বিরত রাখার জন্য। তবে বিশেষজ্ঞরা বলছেন যে এখন যা প্রয়োজন তা হলো আরও বড় পরিবর্তনের যা আমাদের পৃথিবীকে সুস্থ করতে বড় ভূমিকা পালন করবে।