কানাডায় ইমিগ্রেশনের নতুন সুযোগ
- মোহাম্মদ সাকিবুর রহমান খান, কানাডা
২০১৯ সালের জুন থেকে কানাডা সরকার একটি নতুন পাইলট প্রোগ্রাম হাতে নিয়েছে। এর নাম হচ্ছে চাইল্ড কেয়ার প্রোভাইডার ও হোম সাপোর্ট ওয়ার্কার। এই প্রোগ্রামের আওতায় কানাডিয়ান সরকার প্রতিবছর পৃথিবীর বিভিন্ন দেশ থেকে এই প্রোগ্রামের অধীনে ওয়ার্ক পারমিট দিয়ে কানাডাতে লোক আনবে। তাঁরা কানাডায় আসার পর এই কাজ যদি দুই বছর করে, তাহলে তাঁদের পারমানেন্ট রেসিডেন্সি দেওয়া হবে। পরবর্তী সময়ে তাঁরা তাঁদের পরিবারের অন্যান্য সদস্যের আনতে পারবেন। এটি কানাডার ন্যাশনাল অকুপেশনাল ক্লাসিফিনেশন কোডের ৪৪১১ ও ৪৪১২–তে পড়েছে।
এই কোডে কেউ দরখাস্ত করতে চাইলে এইচএসসি পাশ হতে হবে এবং আইইএলটিএসে কমপক্ষে ৫ পেতে হবে। কানাডায় এ ধরনের কাজ পেতে হলে বাংলাদেশ বা অন্যান্য দেশে এই ধরনের কাজ করার অভিজ্ঞতা থাকতে হবে। কোভিড-১৯–এর কারণে এই প্রোগ্রামে এখন পর্যন্ত কাউকে আমন্ত্রণ জানানো হয়নি, তবে ১ জানুয়ারির পর থেকে এই প্রোগ্রামে যাঁরা আবেদন করেছেন তাঁদের আবেদনগুলো যাচাই-বাছাই করা হবে। এখন পর্যন্ত মোট ২ হাজার ৭৫০টি আবেদন পড়েছে।
আবেদন কীভাবে
এই স্ট্রিমে কেউ আবেদন করতে চাইলে, তাঁকে কানাডা থেকে একটি জব অফার জোগাড় করতে হবে। কানাডায় অনেকে আছেন যাঁরা তাঁদের সন্তান বা বৃদ্ধ মা–বাবার সময় দিতে পারেন না, তাঁরা এই প্রোগ্রামে বিদেশ থেকে লোক আনতে পারবেন। এই প্রোগ্রামের মাধ্যমে যাঁরা বিদেশ থেকে সাপোর্ট ওয়ার্কার আনবেন, তাঁদের বাৎসরিক আয় অনেক হতে হবে। কারণ, তাঁরা যে ওয়ার্কারকে আনবেন, তাঁকে কমপক্ষে বছরে ২০ থেকে ২২ হাজার ডলার বেতন দিতে হবে। মনে রাখবেন, মধ্যবিত্ত কানাডিয়ানরা এই প্রোগ্রামে বাসার জন্য সাপোর্ট ওয়ার্কার আনতে পারবেন না। শুধু অর্থনৈতিকভাবে ধনী পরিবারগুলো এ প্রোগ্রামে লোক আনতে পারবেন। কেউ বাসায় সাপোর্ট ওয়ার্কার রাখতে চাইলে সরকার তাঁর কমপক্ষে গত তিন বছরের আয় দেখবে। কানাডার পরিবারগুলো এই ধরনের চাইল্ড কেয়ার প্রোভাইডার এবং হোম সাপোর্ট ওয়ার্কার তেমন একটা রাখে না। তারা শিশুদের ডে-কেয়ার সেন্টারে রাখে এবং বয়স্করা বৃদ্ধনিবাসে থাকে। এই প্রোগ্রাম শুরু হওয়ার ফলে কানাডার ধনী লোকজন তাঁদের পিতা-মাতাসহ বাড়িতে একসঙ্গে থাকতে পারবে।
তথ্য পাবেন কোথায়
সরাসরি সরকারি ওয়েবসাইট www.cic.gc.ca তে যাবেন। সেখানে ওপরের ডান দিকে সার্চ ইঞ্জিন আছে সেখানে লিখবেন, Caregivers-Home Child care provider and home support workers pilot। সেখানে এ প্রোগ্রামের সবকিছু দেখতে পাবেন। এখানে আবেদন করতে হলে কোন ধরনের যোগ্যতা প্রয়োজন তা জানতে পারবেন। এটি কানাডিয়ান সরকারের ইমিগ্রেশন–সংক্রান্ত একমাত্র ওয়েবসাইট। এখানে যা লেখা আছে, তা–ই সবকিছু, এর বাইরে আর কিছু নেই।
বায়োডাটা বানানোর আগে যা করবেন
কানাডার সব চাকরিতে ন্যাশনাল অকুপেশনাল ক্লাসিফিনেশন কোড রয়েছে। এই পাইলট প্রোগ্রামের কোড হচ্ছে ৪৪১১ ও ৪৪১২। কানাডার সরকারি ওয়েবসাইট www.canada.ca/en.html এ গিয়ে সার্চ ইঞ্জিনে 4411 ও 4412 লিখলে এই ধরনের কাজের জন্য যে ধরনের যোগ্যতা প্রয়োজন তা দেখতে পাবেন। কোন ধরনের ট্রেনিং থাকলে এই ধরনের কাজ পাবেন তার বিস্তারিত জানতে পারবেন।
কীভাবে চাকরি খুঁজবেন
কারও যদি এ ধরনের কাজের অভিজ্ঞতা থাকে এবং কেয়ার গিভারের কাজ করার মতো কোনো ডিপ্লোমা থাকে তা হলে কানাডিয়ান যেকোনো চাকরি খোঁজার ওয়েবসাইটে গিয়ে চাকরির জন্য আবেদন করতে পারবেন। সরকারি একটি ওয়েবসাইট রয়েছে Job Bank Canada সেখানে গেলে এই ধরনের চাকরির বিজ্ঞাপন দেখতে পাবেন। আরও অনেক ওয়েবসাইট রয়েছে, তার মধ্যে www.indeed.ca, www.kijiji.ca, ইত্যাদিতেও পাবেন বিস্তারিত। তা ছাড়া গুগুলে সার্চ দিলে অনেক জবসাইট খুঁজে পাবেন।
যাঁরা আপনাকে চাকরি দেবেন, তাঁদের আপনার বায়োডাটা পছন্দ হলে ভার্চ্যুয়াল ইন্টারভিউতে ডাকবে। সেখানে যদি সফল হন, তাঁরা জব অফার পাঠাবেন। পরে সেই জব অফার নিয়ে কানাডাতে ওয়ার্ক ভিসার জন্য আবেদন করতে হবে। যদি এই প্রক্রিয়া অনুসরণ করে জব অফার পান, তাহলে আপনি ভিসা পাবেন।
মনে রাখবেন, কানাডাতে জব অফার পেতে কোনো টাকার প্রয়োজন হয় না। কেউ যদি জব অফারের নামে আপনার কাছে টাকা চায়, তবে কানাডাতে এটি একটি দণ্ডনীয় অপরাধ। আপনার চাকরি আপনাকে খুঁজতে হবে এবং আপনার ইন্টারভিউ আপনাকে দিতে হবে।
যে কথাটি মনে রাখবেন
আরেকটি কথা, মনে রাখবেন সারা জীবন যে আপনাকে এই কাজ করতে হবে তা কিন্তু না। ২ বছর পর পার্মানেন্ট রেসিডেন্ট হলে আপনি অন্য চাকরি করতে পারবেন। এই দেশে যেকোনো বয়সে পড়াশোনাতে ভর্তি হওয়া যায়। চাইলে পড়াশোনা করে আরও অনেক বেশি বেতনের কাজ করতে পারবেন। আর একটি কথা, কানাডাতে সব কাজের সামাজিক মূল্য আছে। এই দেশে কোনো কাজকে ছোট করে দেখা হয় না।
লেখক: কানাডাপ্রবাসী। mdsakibur73@gmail.com
সূত্র: প্রথম আলো