মায়ের দুধ থেকে অ্যান্টিবায়োটিক
বিজ্ঞান-প্রযুক্তি ডেস্ক : মায়ের দুধের প্রোটিন থেকে নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরি করেছেন যুক্তরাজ্যের একদল বিজ্ঞানী। ওষুধ-প্রতিরোধী রোগজীবাণু প্রতিরোধে এটি বিশেষ কার্যকর হবে বলে তাঁরা দাবি করছেন। এতে সিকল-সেল অ্যানিমিয়ার (রক্তশূন্যতা) জিনগত রোগের চিকিৎসায় নতুন আশার সঞ্চার হয়েছে। সংবাদ : দ্য টেলিগ্রাফ।
ব্রিটিশ বিজ্ঞানীরা বলছেন, বিশ্বে ওষুধ প্রতিরোধী রোগজীবাণুর আক্রমণে প্রতিবছর প্রায় সাত লাখ মানুষ প্রাণ হারায়। প্রচলিত অ্যান্টিবায়োটিকের বিরুদ্ধে বিভিন্ন রোগজীবাণু নিজস্ব প্রতিরোধ গড়ে তুললে ওষুধগুলো কার্যকারিতা হারায়। তখনই নতুন অ্যান্টিবায়োটিকের প্রয়োজন পড়ে। তাই মায়ের দুধ থেকে তৈরি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক এসব রোগজীবাণু দমনে সাফল্যের নতুন সম্ভাবনা জাগিয়েছে।
লন্ডনের ন্যাশনাল ফিজিক্যাল ল্যাবরেটরি (এনপিএল) এবং ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের বিজ্ঞানীরা অ্যান্টিবায়োটিকটি তৈরি করেছেন। তাঁরা বলছেন, মায়ের দুধে ল্যাকটোফেরিন নামের প্রোটিন থাকে। এটি বিভিন্ন ব্যাকটেরিয়া, ছত্রাক ও ভাইরাসকে মেরে ফেলতে পারে। মায়ের দুধের এই জীবাণুরোধী সামর্থ্যের কারণে নবজাতকেরা প্রথম কয়েক মাস বিভিন্ন অসুখের আক্রমণ থেকে সুরক্ষা পায়।
এনপিএলের গবেষকেরা দেখতে পান, একটি সূক্ষ্ম কণা আকৃতির (১ ন্যানোমিটারের চেয়ে সরু) উপাদানের কারণে ল্যাকটোফেরিন বিভিন্ন রোগজীবাণুকে মেরে ফেলতে পারে। তাঁরা ওই উপাদানকে কিছুটা পরিবর্তন করে ‘ক্যাপসুল’ তৈরি করেন। এটি মানুষের শরীরের কোনো কোষের ক্ষতি না করেই সুনির্দিষ্ট কিছু ব্যাকটেরিয়াকে চিহ্নিত করে ধ্বংস করতে পারে। রয়েল সোসাইটি অব কেমিস্ট্রির সাময়িকী কেমিক্যাল সায়েন্স ওই নতুন অ্যান্টিবায়োটিক তৈরির বিষয়ে একটি গবেষণা প্রতিবেদন প্রকাশ করেছে।
যুক্তরাজ্যের প্রধান চিকিৎসা কর্মকর্তা ডেম স্যালি ডেভিস টাইমস পত্রিকাকে বলেন, ‘আরও নতুন নতুন অ্যান্টিবায়োটিক নিশ্চয়ই পাওয়া যাবে। প্রতি দশকে আমাদের গড়ে ১০টি নতুন অ্যান্টিবায়োটিক প্রয়োজন। এগুলো আমার বৃদ্ধ বয়সের জন্য নয়, আমার শিশুসন্তানদের বৃদ্ধ বয়সের জন্য কাজে লাগবে।’
ওষুধ প্রতিরোধী রোগজীবাণু মোকাবিলার জন্য যুক্তরাজ্য সরকারের বিশেষজ্ঞ প্যানেলের মতে, ২০৫০ সালের মধ্যে আরও নতুন ওষুধ আবিষ্কার না হলে বিশ্বজুড়ে বছরে কোটি মানুষের মৃত্যু পর্যন্ত হতে পারে।