সুইডেনে পড়াশোনা

সুইডেনে পড়াশোনা

  • ক্যাম্পাস ডেস্ক :

সুইডেন। উত্তর ইউরোপের আধুনিক একটি দেশ। শান্ত পরিবেশ,বিশ্বস্বীকৃত গবেষণাকর্ম, আধুনিক শিক্ষাব্যবস্থা, প্রচুর স্কলারশিপ, গ্রুপ ওয়ার্ক, স্বাধীন চিন্তার সুযোগ- এসবের জন্য উচ্চশিক্ষার ক্ষেত্রে সুইডেন বেশ জনপ্রিয় হয়ে উঠছে। বর্তমানে এখানে প্রায় ৮০টি দেশের শিক্ষার্থীরা পিএইচডি গবেষণারত। সুইডেনে পড়াশোনা সম্পর্কে জানাচ্ছেন-রবিউল কমল

পড়ার বিষয়

পরিবেশ বিজ্ঞান, ভাষা শিক্ষা , কৃষি গবেষণা ও  ইঞ্জিনিয়ারিং- এসব বিষয়ে উচ্চশিক্ষার জন্য সুইডেনকে আদর্শ বলা হয়। তবে এর পাশাপাশি আরো কিছু বিষয়  উল্লেখযোগ্য। বিষয়গুলো হলো- এমবিএ, টেলিকমিউনিকেশন, আইন, ম্যাথমেটিক্স, জনস্বাস্থ্য, আর্ট অ্যান্ড ডিজাইন, মেডিক্যাল, অর্থনীতি, ভূগোল, হিউম্যান রিসোর্স, হেলথ কেয়ার ম্যানেজমেন্ট, ফিল্ম ও মিডিয়া, লাইফ সাইন্স ইত্যাদি।

 ভাষা ও শিক্ষাব্যবস্থা

সুইডেনের অফিসিয়াল ভাষা সুইডিশ হলেও প্রায় ৮৯% মানুষ ইংরেজি ভাষায় কথা বলতে পারে। তাই সেখানে ইংরেজিকে সেকেন্ড ল্যাংগুয়েজ বলা হয়। এখানে সুইডিশ ও ইংরেজি –উভয়ই মাধ্যমেই পড়াশুনা করা যায়। অনার্স পর্যায়ে সুইডিশ ভাষা জানলে ভালো। তবে মাস্টার্স পর্যায়ের শিক্ষার্থীদের সুবিধা হলো প্রায় ৬০০’র বেশি বিষয় ইংরেজি ভাষায় পড়া যায়। সুইডেনে অনার্স ৩/৪ বছর, মাস্টার্স বিষয়ভেদে ১/২ আবার কোনোটাতে ৩ বছরও লেগে যায়। এছাড়া রয়েছে বিভিন্ন মেয়াদী নন-ডিগ্রি প্রোগ্রাম, ডিপ্লোমা, পিএইচডি, পোস্ট-ডক্টোরাল ও কিছু প্রশিক্ষণ প্রোগ্রাম। National Agency for Higher Vocational Education- এই প্রতিষ্ঠানের অধীনে প্রশিক্ষণমূলক প্রোগ্রাম করানো হয়। বর্তমানে শ্রম-বাজারে এসব প্রশিক্ষণের ব্যাপক চাহিদা লক্ষ করা যায়।

প্রতিষ্ঠানের ঠিকানা-

Myndigheten for yrkeshogskolan, Box- 145, SE-721 05 vasteras, Sweden. Email: info@yhmyndigheten.se , Web: www.yhmyndigheten.se/English

যোগ্যতা

ভর্তির শুরুতেই বিশ্ববিদ্যালয় ও বিষয়ভেদে বিভিন্নভাবে শিক্ষার্থীর যোগ্যতা যাচাই করা হয়। কোনো শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান একাডেমিক ফলাফল দেখে আবার কখনো বা ভাষাগত যোগ্যতা দেখে। সুতরাং ভাষা ও বিগত পরীক্ষাগুলোর ফলাফল উভয়ই ভালো হওয়া দরকার। সুইডিশ ভাষার জন্য আধুনিক ভাষা ইনস্টিটিউট (কলাভবন, ঢাকাবিশ্ববিদ্যালয়) থেকে কোর্স করতে পারেন। অপরদিকে, ইংরেজি ভাষার দক্ষতাস্বরূপ  TOEFL বা IELTS এর প্রাপ্ত নাম্বার দেখা হয়। TOEFL পরীক্ষার মোট ১২০ নাম্বারে নূন্যতম ৮৫ নাম্বার এবং IELTS পরীক্ষার ৯.০ পয়েন্টের মধ্যে নূন্যতম ৬.৫ পেতে হবে। এ ক্ষেত্রে অনলাইনে বসেও IELTS ও TOEFL পরীক্ষায় নিজের যোগ্যতা যাচাই করতে পারেন।

বিস্তারিত জানতে- www.ielts.org , www.ets.org/toefl/

IELTS পরীক্ষার কেন্দ্র-

British Council Dhaka

5, Fuller road, -1000

Tel no.+88 02 8618905

Web: www.britishcouncil.org/bangladesh

TOEFL পরীক্ষার কেন্দ্র- 

American Alumni Association, House 145, Street 13B, Banani, Dhaka 1213, Phone: +88029881669

আবেদনের সময়

সুইডেনে বছরে দুটি সেমিস্টার। একটির মেয়াদ আগস্টের শেষ থেকে জানুয়ারির মাঝামাঝি পর্যন্ত। অপরটি মধ্য জানুয়ারি থেকে জুনের শুরু পর্যন্ত। বিদেশে ভর্তির ক্ষেত্রে প্রয়োজনীয় কাগজ-পত্র ও ভিসা নিয়ে প্রায় ৬ মাস এমনকি এক বছরও সময় লেগে যায়। তাই যে সেমিস্টারে ভর্তি হতে আগ্রহী সেই সময়ের দিকে খেয়াল রেখে ভর্তি প্রক্রিয়া শুরু করতে হবে।

পড়াশুনা ও থাকার খরচ

শুরুতেই অনলাইনে আবেদনপত্রের জন্য প্রায় ৯০০ SEK (১০৫৫৭ টাকা) ব্যয় করতে হয়। তাছাড়া বিষয়ভেদে অনার্স, মাস্টার্সে বছরে ন্যুনতম ৮০,০০০ SEK থেকে ১,৪০,০০০ SEK (৯,৩৮,৪০০টাকা-১৬,৪২,২০০টাকা) -এর মধ্যে খরচ পড়ে। এছাড়া থাকা, খাওয়া ও অন্যান্য খরচবাবদ বছরে প্রায় ৭৩৯৯ SEK (৮৫৬২৯ টাকা) খরচ হয়।

পার্টটাইম জব

যদিও অধিকাংশ শিক্ষার্থী- যারা উচ্চশিক্ষার জন্য বিদেশে যান তারা শুরুতেই পার্টটাইম জবের খোঁজ করতে থাকেন। তবে পড়াশুনার ক্ষতি করে পার্টটাইম জব করা ঠিক নয়। তাছাড়া সুইডেন সরকার, বিভিন্ন প্রতিষ্ঠান বছরে প্রায় ৫০০’র বেশি স্কলাপশিপ দিয়ে থাকে, যেগুলোর অনেকেই পড়াশুনাসহ থাকার খরচও বহন করে। তাই সুইডেনে পার্টটাইম জবের তেমন প্রয়োজন পড়ে না।  তবে ইচ্ছুক শিক্ষার্থীরা সপ্তাহে ৪০ ঘন্টা বা ২০ ঘন্টার পার্টটাইম জব করতে পারেন। বিভিন্ন ধরনের জবের মধ্যে রয়েছে-

১. বিভিন্ন কোম্পানির বিজ্ঞাপন। এই কাজে এক দিনে প্রায় ১২০ SEK থেকে ১৮০ SEK (১৪০৭ টাকা-২১১১ টাকা) আয় হয়।

২. বিভিন্ন রেস্টুরেন্টে কাজ করা। এতে মাসে ৭০০০ SEK থেকে ৮০০০ SEK (৮২,১১০ টাকা-৯৩,৮৪০ টাকা) আয় হয়।

৩. সপ্তাহের কয়েক দিন, খোলা বাজারে কাপড় বিক্রি করলে মাসে ৭০০০ SEK থেকে ৯০০০ SEK (৮২,১১০ টাকা-১,০৫,৫৭০ টাকা) আয় হয়।

স্কলারশিপ

আগেই বলেছি, সুইডেনে প্রচুর স্কলারশিপ আছে। তার মধ্যে উল্লেখযোগ্য-

১. The Swedish Institute Study Scholarship

এই স্কলারশিপ মূলত অনার্স ও মাস্টার্স পর্যায়ে দেয়া হয়। এটি প্রায় ৭৫%-১০০% খরচ বহন করে। এর কার্যক্রম মার্চ মাস থেকে শুরু হয়।  কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ে ভর্তি নিশ্চিত হওয়ার পর এই স্কলারশিপের জন্য আবেদন করা যায়।

http://www.studyinsweden.se/Scholarships/SI-scholarships/The-Swedish-Institute-Study-Scholarships/

২. Swedish Institute Guest Scholarship

এটি মূলত পিএইচডি ও পোস্ট-ডক্টোরাল শিক্ষার্থীদের দেয়া হয়। এটি পিএইচডি শিক্ষার্থীর জন্য মাসে ১২০০ SEK বা ১,৪০,৭৬০ টাকা এবং পোস্ট-ডক্টোরালের জন্য মাসে ১৫,০০০ SEK বা ১,৭৫,৯৫০ টাকা বহন করে।

৩. ইরামাস মানডাস স্কলারশিপ প্রোগ্রাম

এটা ইউরোপিয়ান ইউনিয়নের দেশভুক্ত বিশ্ববিদ্যালয়গুলোতে স্কলারশিপের ব্যবস্থা করে থাকে। প্রায় ৪০টি বিশ্ববিদ্যালয় এই প্রোগ্রামের সাথে যুক্ত। সুইডেনের Lund University, Swedish University of Agricultural science, Uppsala university ও Karolinska Institutet Medical University – এই প্রোগ্রামের অন্তর্ভুক্ত।

আরো জানতে ভিজিট করুন- http://www.scholars4dev.com/2979/erasmus-mundus-scholarships-for-developing-countries/

এছাড়া বিভিন্ন বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে বিভিন্ন স্কলারশিপ প্রোগ্রামের যোগসূত্র থাকায় সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়ের সাথে যোগাযোগ করেও বৃত্তি পাওয়া যায়।

তাছাড়া UNESCO ফেলোশিপ প্রোগ্রাম থেকেও সুইডেনে পড়ার জন্য স্কলারশিপ দেয়া হয়। মজার ব্যাপার হলো- বিভিন্ন বুদ্ধিমত্তার প্রতিযোগিতা, ডিজাইন, লেকচার দেয়া- ইত্যাদির আয়োজন করেও বিদেশী শিক্ষার্থীরা সুইডেনে পড়াশুনার জন্য স্কলারশিপ পেতে পারেন। এ বিষয়ে জানতে দেখুন-www.studyinsweden.se/scholarships/scholarship-challenges/

অপরদিকে, ভর্তির সময় সংশ্লিষ্ট বিষয়ের শিক্ষকদের সাথে অনলাইনে মেইলের মাধ্যমে যোগাযোগ  করলেও তারা নিজেদের রিসার্চের অধীনে স্কলারশিপের খবরাখবর আন্তরিকতার সাথে দিয়ে থাকেন। তাছাড়া প্রতিবছর সুইডেনে পড়াশুনার জন্য শিক্ষা মন্ত্রণালয়ের নোটিশে বিভিন্ন স্কলারশিপের খবর থাকে। স্কলারশিপের খবর জানতে রীতিমত শিক্ষামন্ত্রণালয়ের নোটিশে খোঁজ রাখুন।

দেখুন এই লিঙ্কে-  www.moedu.gov.bd

আবহাওয়া

যে কোনো দেশে যাওয়ার আগে সে দেশের আবহওয়া জেনে নেয়া ভালো। তা নাহলে সেই আবহাওয়ার সাথে খাপ নিজেকে খাপ খাইয়ে চলা কঠিন। পৃথিবীর উত্তর মেরুর দিকে হওয়ায় সুইডেনের আবহাওয়া মৃদু প্রকৃতির। জুলাই মাসের তাপমাত্রা প্রায় ১৩-১৭ ডিগ্রি সে. এর মধ্যে থাকে। ফেব্রুয়ারির দিকে প্রচণ্ড শীত। তাপমাত্রা অনেক সময় মাইনাস পর্যায়ে অর্থাৎ -৩ থেকে -২২ ডিগ্রি সে. এ নেমে যায়। দক্ষিণাঞ্চলে ডিসেম্বরে আর উত্তরাঞ্চলে অক্টোবরের দিকে বরফ পড়তে দেখা যায়। অপরদিকে গ্রীষ্মকালে এমনও দেখা যায় যে, দিনের ২৪ ঘন্টার  ১৯ ঘন্টাই সূর্যের আলো থাকে। অর্থাৎ রাতের অংশ কম।

ভর্তি ও ভিসা প্রসেসিং

অনলাইনে বা ডাকযোগে জরুরি কাগজপত্র জমা দেয়ার পর স্কলারশিপ পাওয়া স্বত্ত্বেও একটা নির্দিষ্ট পরিমাণ টাকা দেশের ব্যাংকে জমা আছে কিনা সেই ব্যাপারে একটা নিশ্চিতপত্র দেখাতে হয়। কেননা, পড়াশুনার বাইরে যে কোনো আপদকালীন সময়ে টাকার প্রয়োজন পড়তে পারে। এব্যাপারে বিস্তারিত জানতে সুইডিশ হাইকমিশনে যোগাযোগ করুন। ভর্তি নিশ্চিত হলে ইন্টারভিউ নিয়ে হাইকমিশন থেকেই ভিসা প্রদান করা হয়।

যোগাযোগ-

সুইডিশ হাইকমিশন- Embassy of Sweden, House 1, Road 51, Gulshan 2, Dhaka 1212, Bangladesh ,Tel: +880 2 883 31 44-47, Fax: +880 2 882 39 48, E-mail: ambassaden.dhaka@foreign.ministry.se,  ambassaden.dhakavisum@foreign.ministry.se (opening hours: Sunday-Thursday 08.00-16.00)

প্রধান কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়

সাম্প্রতিক র‌্যাংকিং অনুযায়ী উল্লেখযোগ্য কিছু বিশ্ববিদ্যালয়ের লিংক দেয়া হলো-

www.bth.se/eng/

www.chalmers.se

www.du.se/en/

www.esh.se/en/nogskolan.html

www.lunduniversity.lu.se/

www.su.se/english/    favicon59

Sharing is caring!

Leave a Comment